স্ত্রীর পরকীয়ার সন্দেহে নিজের মেয়েশিশুকে গলাটিপে হত্যা করেছে এক যুবক। হত্যার পর শিশুটির লাশ খাটের নিচে পাতিলে লুকিয়ে রাখা হয়।
রোববার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় এ ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলামকে সোমবার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের জয়দেবপুর রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু মনিরা খাতুন শ্রীপুরের হাজি মোহাম্মদ আলী প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে শ্রেণিতে পড়ত।
সন্তান হত্যার অভিযোগে স্বামী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন নিহতের মা নাসরিন আক্তার।
পুলিশ জানায়, পারিবারিক কলহের জেরে রোববার বিকেলে রুমাল দিয়ে ঘুমন্ত মেয়ে মনিরার মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তার বাবা। এরপর লাশ ঘরের খাটের নিচে থাকা পাতিলে লুকিয়ে রাখেন।
একাধিক পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর কাছ থেকে আলাদা হতে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে রফিকুল এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে পুলিশ আর জানায়, ২০১২ সালে শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা এলাকার গোলাপ হোসেনের মেয়ে নাসরিন আক্তারের সঙ্গে কাপাসিয়া উপজেলার চাপাত এলাকার মাঈন উদ্দিনের ছেলে রফিকুল ইসলামের বিয়ে হয়। এটি ছিল নাসরিনের তৃতীয় বিয়ে।
বিয়ের পর এ দম্পতি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সালনা এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। ২০১৪ সালে রফিকুল ওমান চলে যান। সেখানে থাকাবস্থায় মেয়ে মনিরার জন্ম হয়।
এদিকে নাসরিন অন্য এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ খবর শুনে ওমান থেকে দেশে ফিরে আসেন রফিকুল।
দেশে ফেরার পর পরকীয়ার সন্দেহে রফিকুল ও নাসরিনের মধ্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকতো। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে রফিকুলকে ছেড়ে এক সহকর্মীর সঙ্গে পালিয়ে যান নাসরিন।
তবে আর কোনো ছেলের সঙ্গে পরকীয়া করবে না স্বীকারোক্তি দিয়ে রফিকুলের কাছে ফিরে আসেন নাসরিন।
১ ডিসেম্বর তারা শ্রীপুরের ডেনিমেক পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে স্থানীয় কেওয়া পশ্চিমখণ্ড (মাস্টারবাড়ী) এলাকার ইয়াছিন হাজির ভাড়া বাসায় বসবাস করতে থাকেন।
কিছুদিন যেতে না যেতেই কারখানার এক সহকর্মীর সঙ্গে আবার পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন নাসরিন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ চলে আসছিল।
৮ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে কাপাসিয়ার চাপাত গ্রামের বাড়িতে চলে যান রফিকুল। পরে সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা নিয়ে শনিবার বিকেলে কেওয়া পশ্চিমখণ্ড এলাকার ভাড়া বাড়িতে আসেন রফিকুল।
তবে ওইদিন নিজ সন্তানকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তিনি।
রোববার সকালে স্ত্রী কারখানায় গেলেও অসুস্থতার কথা বলে রফিকুল বাসায় থাকেন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে নাসরিন দুপুরে বাসায় গিয়ে মেয়ে ও স্বামীর সঙ্গে একত্রে খাওয়া-দাওয়া করে আবার কারখানায় চলে যান।
এরপর রফিকুল তার মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে রফিকুল রুমাল দিয়ে ঘুমন্ত মেয়ের মুখ চেপে ধরে শ্বাসরোধে করে হত্যা করেন। পরে লাশ ঘরের খাটের নিচে রাখা পাতিলে লুকিয়ে রেখে বাসা থেকে বের হয়ে যান।
বিকেল ৫টায় কারখানা ছুটির পর নাসরিন বাসায় ফিরে মেয়েকে না দেখে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। শেষমেশ কোথাও না পেয়ে বাইরে অবস্থান করা স্বামী রফিকুলের মোবাইলে ফোন করে মেয়ের খোঁজ জানতে চান তিনি। তখন রফিকুল বলেন, ‘আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। আমাদেরকে আর পাবি না।’
এরপর ঘটনাটি পুলিশকে জানান নাসরিন আক্তার। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে যায় ও তল্লাশি চালায়। তল্লাশির একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে নাসরিনের ঘরের খাটের নিচে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলের ভেতর লুকিয়ে রাখা অবস্থায় শিশু মনিরার লাশ উদ্ধার করা হয়।
শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
টাইমস/জেডটি