প্রতিমন্ত্রী বলছেন নিরাপত্তায় ত্রুটি ছিল না, তাহলে কীভাবে বিমানে চড়ল অস্ত্রধারী

বিমান ছিনতাইচেষ্টার ঘটনায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি ছিল না বলে দাবি করেছেন বিমান প্রতিমন্ত্রী মো.মাহবুব আলী।

সোমবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তিনি।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে র‌্যাবের তালিকাভুক্ত একজন অপরাধী বাংলাদেশ বিমানে চড়ে উড়োজাহাজটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিলেন।

 যদিও এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রতিমন্ত্রী।

মাহবুব আলীর দাবি, রোববারের ঘটনার পর শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার আয়োজন পর্যালোচনা করে কোনো ত্রুটি তারা পাননি।

তিনি বলেন, এখানে এমন কোনো লিকেজ ছিল না বা এখনো নেই যে একজন যাত্রী এভাবে বিমানে যেতে পারে।

তাহলে কী করে ‘পিস্তল’ নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা অতিক্রম করে বিমানে চড়ল একজন অপরাধী? জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রতিমন্ত্রী।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও এ বিষয়ে কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

তবে আসল ঘটনা জানতে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বিমান প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিমান সচিব মহীবুল হক এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এম নাঈম হাসান।

এখনো পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘আজকেও আমরা পুরো বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেছি। সাংবাদিকরাও পুরো বিষয়টি দেখেছেন।’

তিনি বলেন, কলিগদের থেকে জানতে পারি বিমান হাইজ্যাক হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের কথা বলি। এরপর প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হলে দেখলাম তিনি ঘটনাটি জানেন। কমান্ডো প্রসিড করতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক পুরো বিষয়টি মনিটর করেছেন। পরবর্তীতে আমরা জানলাম সবাই নিরাপদে রয়েছে।

বিমান সচিব মহীবুল হক বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখেছি, অন্য ১০টা যাত্রীর মতো তাকেও (বিমান ছিনতাইকারী) তল্লাশি করা হয়েছিল। তার কাঁধে একটা ব্যাগ ছিল। সেটা স্ক্যান করা হয়েছিল, কিন্তু সেখানে কিছু দেখা যায়নি।’

তাহলে অস্ত্রটা ভেতরে গেল কীভাবে? এই প্রশ্নে বলেন, ‘সেটা অস্ত্র কিনা আমরা ওয়াকিবহাল না। তদন্ত প্রতিবেদনের পর এটা নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।’

উল্লেখ্য, রোববার বিকালে দুবাইয়ের উদ্দেশে ক্রুসহ ১৪৮ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে বলে দাবি করা হয়।

বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিমানের চট্টগ্রামগামী ফ্লাইটটি যখন মাঝ আকাশে, তখন এক ব্যক্তি পাইলটকে অস্ত্র ঠেকিয়ে উড়োজাহাজটি জিম্মি করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের জরুরি অবতরণ করা হয়। জরুরি অবতরণের পরপরই রানওয়েতে বিমানটি ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ।

পরে সব যাত্রীকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হলেও একজন ক্রুকে ওই ছিনতাইকারী জিম্মি করে রাখে বলে সূত্রের খবর।

পরে বিমানবন্দরে যায় সোয়াত টিম ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট। ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসও।

 বিমানবন্দরের একাধিক সূত্র জানায়, যাত্রীদের নামিয়ে আনলেও সাগর নামে একজন ক্রু ও ছিনতাইকারী বিমানটির ভেতরে রয়ে যান।

পরে সেনা স্পেশাল ফোর্স ও নৌ কমোডর এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমানের নেতৃত্বে নৌ কমোডর দলের অভিযানে সন্দেহভাজন ওই ছিনতাইকারীকে আহতাবস্থায় আটক করা হয় এবং আহতাবস্থায় ক্রু সাগরকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া বিমানটির সব যাত্রী-ক্রুরা সুস্থ রয়েছেন। বিমানের কোনো ক্ষতিও হয়নি।

এদিকে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিমানের ভেতরে অভিযান চালানোর সময় ওই ব্যক্তিকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয় কিন্তু সে অস্বীকৃতি জানালে গুলি চালানো হয়। পরে তার মৃত্যু হয়েছে।

 

টাইমস/জেডটি

Share this news on: