কেমিক্যাল গুদাম সরানোর অভিযানে প্রতিদিনই বাধা

পুরান ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর অবৈধ কেমিক্যাল গুদাম ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে প্রতিদিনই স্থানীয় ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও বাড়ির মালিকদের বাধার মুখে পড়ছেন সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের দল।

রোববারও পুরান ঢাকার শহীদনগরে অভিযান চালাতে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা টাস্কফোর্স সদস্যদের দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে লালবাগ থানার পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। অভিযানে বাধা দেওয়ার সময় বিদ্যুতের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

শনিবারও পুরান ঢাকার বকশীবাজারের জয়নাগ রোডে নিষিদ্ধ কেমিক্যালের গুদাম, পলিথিন ও প্লাস্টিকের কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকদের বাধার মুখে পড়েছিল টাস্কফোর্সের সদস্যরা। পরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের নেতৃত্বে আবার অভিযান চালানো হয়।

বাধা দেওয়ার খবর শুনে শনিবার মেয়র সাঈদ খোকন বলেছিলেন, ‘আমি যাব, কে বাধা দেবে আমি দেখব। আমরা কোনো গুদামের মালামাল জব্দ করছি না। কাউকে সাজাও দিচ্ছি না। আমরা কেবল হাজার হাজার মানুষের জীবন সেভ করছি। এসব গুদামের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।’ শনিবারের অভিযানে রাসায়নিক গুদাম, পলিথিন, প্লাস্টিকসহ মোট ১৩টি কারখানার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

রোববারের অভিযান

আজ দুপুর ১২টার দিকে রাজনারায়ণ রোডে ২/৩ হোল্ডিং নম্বরে অভিযান চালিয়ে অবৈধ প্লাস্টিকের চারটি টিন শেড কারখানা, একটি পাঁচতলা ভবনে রাসায়নিক ও প্লাস্টিকের কারখানার সন্ধান পায় টাস্কফোর্স টিম-২ দল।

এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা কারখানার ভেতরে ঢাকা জেলা পরিষদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুবর্ণা শিরীন ও সিটি করপোরেশন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর জাহিদ হাসানসহ টাস্কফোর্স-২ এর সদস্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে।

জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন,‘ অবরুদ্ধের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে লালবাগ থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। তাদের সহায়তায় বেলা সোয়া দুইটার দিকে আমরা বের হই।’ পরে ওই সব কারখানার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, টাস্কফোর্সের শুধু নিষিদ্ধ রাসায়নিক গুদামের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করার কথা। কিন্তু তারা রাসায়নিকের পাশাপাশি পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই প্লাস্টিক ও পলিথিনের কারখানা ও গুদাম উচ্ছেদে অভিযান চালাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কোনো কথাই শুনছে না। তাদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়নি, এমনকি পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়নি। তাই উচ্ছেদ করলে তারা কোথায় যাবে এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে ফেলতে সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে আজ তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় টাস্কফোর্স। আজ সেখানে মোট পাঁচটি দল অভিযান চালাচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল, পলিথিনের কারখানা, প্লাস্টিকের কারখানা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার অভিযান শুরু হয়।

২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চুড়িহাট্টার ৬৪ নম্বর ওয়াহেদ ম্যানশনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ৭১ জন মারা গেছেন। প্রাথমিক তদন্তে আগুনের কারণ হিসেবে রাসায়নিককেই দায়ী করা হচ্ছে। এ ঘটনার পর থেকেই পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনগুলো থেকে রাসায়নিক সরানোর নির্দেশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: