অযত্ন-অবহেলায় বাহাদুর শাহ পার্ক

অযত্ন-অবহেলায় রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী বাহাদুর শাহ পার্কের অবস্থা এখন বেহাল। নষ্ট হয়ে গেছে পার্কের পরিবেশ। পর্যাপ্ত যত্নের অভাবে পার্কটির স্থাপত্য রূপ দিনদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১৯৫৭ সালে নির্মিত বাহাদুর শাহ পার্কের স্মৃতিস্তম্ভের ওপরে শ্যাওলা পড়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন স্থানের পলেস্তারা খসে পড়ায় রডও দেখা যাচ্ছে। চারপাশে বট গাছের লম্বা শিকড় নিচের দিকে পড়েছে। এছাড়া দক্ষিণ ও উত্তর দিকের ছাদের ওপরে জন্মেছে বট গাছ।

পিলারগুলো লাল ও সাদা হলেও কোনো কোনো জায়গা কালো হয়ে গেছে। আর স্মৃতিস্তম্ভের চারটি পিলারে চারটি লোহা রয়েছে। আর তাতে দড়ি লাগানো। নিচের টাইলসে কোনো কোনো জায়গায় ভেঙে গেছে। মূল স্তম্ভের বেদীর একটু ওপরের অংশটিও ভাঙা। পাখি অঙ্কিত দুইটি লোহার খুঁটি ভেঙে গেছে।

সিপাহী বিদ্রোহের ১০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১৯৫৭ সালে ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের উদ্যোগে বাহাদুর শাহ পার্কের এ স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। এটি এখনো সিপাহী বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৫৭ সালের আগে পর্যন্ত পার্কটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। সিপাহি বিদ্রোহের পর এক প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকেরা ফাঁসি দেয় অসংখ্য বিপ্লবী সিপাহিকে।

১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী পালন উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের
নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাহাদুর শাহ পার্ক।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, পার্কের উত্তর দিকে আবর্জনা, মলমূত্রে ভরা, যা থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। চুলা জ্বালিয়ে রান্নাবান্না করছে অনেকে। বেড়ে গেছে বখাটেদের উৎপাতও। ব্রিটিশ রানী ভিক্টোরিয়ার স্মারকস্তম্ভ এবং পশ্চিম অংশে শহীদদের সম্মানে স্থাপিত ভাস্কর্য ধুলায় ঢেকে আছে। মাঝখানের অষ্টকোণী ঝরনাটি প্রায়ই বন্ধ থাকে।

এই পার্কের কাছাকাছি রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সিটি করপোরেশন মহিলা কলেজ, সরকারি মুসলিম হাইস্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, শেরেবাংলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সূর্যমুখী উচ্চবিদ্যালয়। এ ছাড়া রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নিম্ন আদালত।

স্থানীয় বাসিন্দা অজেন্দ্র নাথ বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, এই পার্ককে রাজধানীর সবচেয়ে উন্মুক্ত ও পুরোনো পার্ক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অথচ বেশির ভাগ সময়ই এটি থাকে পরিচর্যার বাইরে।

বাহাদুর শাহ পার্ক নিয়ে আরবান স্টাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর বলেন, পার্কের দেখভাল করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু তারা পরিচর্যা না করায় আমরা হতাশ হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা এক সময় সেখানে বাগান করতে চেয়েছিলাম। করাও হয়েছিল। কিন্তু দেখভালের অভাবে বাগানটি নষ্ট হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, পার্কের নিরাপত্তা, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের। শুধু আমার একার দায়িত্ব নয়। আর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদের।

দায়িত্বের বিষয়টি অস্বীকার করে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ টাইমস’কে বলেন, এটি আমার জানার কথা নয়। যিনি প্রধান প্রকৌশলী আছেন তার দেখভালের বিষয়।

তবে প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল হকের কাছে ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, আমার জানা মতে, পুরান ঢাকায় কিছু প্রজেক্টের কাজ চলছে। আমরা অতি দ্রুত এই বিষয়গুলোর সমাধান করবো।

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ১৬০০ মিটার দৌড় : দুই তারকা ক্রিকেটারসহ অনুপস্থিত পাঁচ Apr 20, 2024
img
তীব্র তাপদাহে পুড়ছে দেশ, যশোরে রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি Apr 20, 2024
img
লেবুপানি খাবেন যে কারণে Apr 20, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪২.৩, হিট স্ট্রোকে একজনের মৃত্যু Apr 20, 2024
img
সর্বোচ্চ বাড়িয়ে কমল স্বর্ণের দাম Apr 20, 2024
img
উপজেলা নির্বাচনকালে আ.লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ : কাদের Apr 20, 2024
img
যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন : ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪০৭ Apr 20, 2024
img
পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এবার রেকর্ড ২৭ বস্তা টাকা Apr 20, 2024
img
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার বাংলাদেশি শ্রমিকরা : জাতিসংঘ Apr 20, 2024
img
শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক ডিপজল Apr 20, 2024