বাংলাদেশে জি-বাংলাসহ অনেক চ্যানেল বন্ধ, তথ্যমন্ত্রীর অস্বীকার

বাংলাদেশে পহেলা এপ্রিল সোমবার থেকে বন্ধ আছে ভারতের জি নেটওয়ার্কভুক্ত বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল। দেখা যাচ্ছে না জি বাংলা, জি সিনেমাসহ এই নেটওয়ার্কের চ্যানেলগুলো। তবে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার কোন চ্যানেল বন্ধ বা ব্লক করেনি।

তবে বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন বন্ধের জন্য আগে কেবল অপারেটরদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে কেবল অপারেটরদের সংগঠন বলছে, তথ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পাবার পর ভারত থেকেই ঐ চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছে। যদিও এ সংক্রান্ত কোন লিখিত নির্দেশনা তারা পাননি।

সোমবার বিকাল থেকে জি-বাংলাসহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ভারতীয় চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না।

জি-বাংলাসহ এই চ্যানেলগুলোতে গেলেই একটি নোটিশ দেখা যাচ্ছে, যাতে বলা হয়েছে, ‘পরবর্তী নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এই চ্যানেলটি সাময়িকভাবে ব্লক করা হয়েছে।’ তবে এই নোটিশের ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি।

তবে বিস্তারিত তথ্যের জন্য যে ডাউনলিংকের মাধ্যমে ঐ চ্যানেল সম্প্রচার করা হতো, তাদের একটি হটলাইন নম্বর দেয়া রয়েছে নোটিশের নিচের অংশে।

 কী কী চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না?

বাংলাদেশের কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ জানিয়েছেন, এই মূহুর্তে ভারতের জি নেটওয়ার্কের কোনো চ্যানেলই দেখা যাচ্ছে না।

এর মানে হলো, জি-বাংলা, জি-টিভি, জি-মিউজিক, জি-সিনেমা, জি-নিউজসহ অন্তত ১৪টি চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না।

এর মধ্যে জি-বাংলা বাংলাদেশে বিশেষ করে নারীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। তবে আরেক জনপ্রিয় ভারতীয় চ্যানেল স্টার-জলসা এখনো দেখা যাচ্ছে।

কী বলছে সরকার?

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন লঙ্ঘন করে বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করায় দুটি প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে মাত্র।’ 

‘বাংলাদেশে বিদেশি যেকোনো চ্যানেল তাদের কন্টেন্ট দেখাতে পারবে, বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবে না, এটা বাংলাদেশের আইন যা ২০০৬ সাল থেকে বলবৎ আছে। এই আইন এতদিন কার্যকর ছিল না, আমরা এখন সেই আইন কার্যকর করার কথা বলেছি পহেলা এপ্রিল থেকে। সেজন্য যারা ডাউনলিংক করে, মানে বিদেশি চ্যানেল দেখায়, তারা যাতে সময় পায়, আমরা তাদের দুই মাস আগে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। এরপর আরো একবার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি। সর্বশেষ ৩১ মার্চ আবারো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।’

‘এরপর পহেলা এপ্রিল যে প্রধান দুই কোম্পানি বাংলাদেশে ডাউনলিংক করে, তাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ আইনটি কার্যকর করছি আমরা, অন্য কিছু নয়।’

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জানিয়েছেন, যে আইনের বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সেই আইনে বলা আছে, বিদেশি চ্যানেলে কেবল দেশের পণ্যের বিজ্ঞাপন নয়, কোনো বিজ্ঞাপনই প্রদর্শন করতে পারে না। যদি করে, এটি দুই বছরের কারাদণ্ড, এবং এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তিন বছরের কারাদণ্ড ও অন্যান্য শাস্তি হবে।’

এখন হাছান মাহমুদ বলছেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী অপারেটররা হয়ত ভারতীয় চ্যানেল ব্লক করে থাকতে পারে।

কেবল অপারেটররা কী বলছে?

বাংলাদেশের কেবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম আনোয়ার পারভেজ জানান, সরকারের কাছ থেকে চ্যানেল ব্লক করা সংক্রান্ত লিখিত কোনো নির্দেশনা তারা পাননি।

‘কেবল অপারেটর হিসেবে আমাদের কোনো দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে যতটুকু জানি এটা দেওয়া হয়েছে স্থানীয় পরিবেশক যারা আছে বিদেশি পে-চ্যানেলের তাদেরকে।’

‘দ্বিতীয়ত, বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি পণ্যের বিজ্ঞাপন না দেখানোর নোটিশ সরকার আগে যখন দিয়েছে, তারপর তারা (ভারতীয় চ্যানেল কর্তৃপক্ষ) ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু সরকার এখন বলছেন, কোনো বিজ্ঞাপনই দেখানো যাবে না।’

‘এখন বাংলাদেশের মার্কেট থেকে যে রেভেনিউ তারা পায়, তাতে বিজ্ঞাপনবিহীন হলে আমার মনে হয় না, তাদের এটা চালানো সম্ভব হবে।’

যে কারণে পারভেজ দাবি করেছেন, চ্যানেল ব্লক করার সিদ্ধান্ত ভারতের দিক থেকে নিয়েছে।

ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচারে বিরোধিতা

ভারতের বেশ কয়েকটি বাংলা চ্যানেল বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে জি-বাংলা, স্টার জলসা এবং স্টার প্লাস রয়েছে।

তবে একদিকে জনপ্রিয় যেমন রয়েছে এসব চ্যানেলের, তেমনি ভারতীয় কয়েকটি চ্যানেল বিশেষ করে বাংলা চ্যানেল সম্প্রচার নিয়ে বাংলাদেশে যথেষ্ট বিরোধিতাও রয়েছে।

জি-বাংলা, স্টার জলসা এবং স্টার প্লাস এই তিনটি ভারতীয় চ্যানেল কেন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে ২০১৪ সালে একটি রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট।

যদিও পরে এ সংক্রান্ত রিটটি খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট। বাংলাদেশে বিনোদন জগতের অনেকেই ভারতীয় কয়েকটি চ্যানেল বন্ধ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

যদিও নানা সময় জরিপে এ কথাও সামনে এসেছে যে ভারতীয় টেলিভিশনের চ্যানেলগুলোর বিশাল সংখ্যক দর্শক রয়েছে বাংলাদেশে।

কয়েক বছর আগে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে নারীদের ৯০ শতাংশ টেলিভিশন দেখেন, কিন্তু এদের ৬০ শতাংশই দেখেন স্টার জলসাসহ ভারতীয় বাংলা চ্যানেলগুলো।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের লক্ষ্য জানালেন সাকিব Apr 25, 2024
img
গাজায় ২০ জনকে জীবন্ত কবর দেয়ার অভিযোগ Apr 25, 2024
img
দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর Apr 25, 2024
img
শিক্ষক নিয়োগ: পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে হাতে পৌঁছে যেত উত্তরপত্র Apr 25, 2024
img
বাংলাদেশের উন্নয়নের দিকে তাকালে আমরা লজ্জা পাই: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী Apr 25, 2024
img
রবিবার খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবারও চলবে ক্লাস Apr 25, 2024
img
এক দিনের ব্যবধানে আরও কমলো স্বর্ণের দাম Apr 25, 2024
img
চুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ Apr 25, 2024
img
যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় আসার জন্য মরিয়া বিএনপি: কাদের Apr 25, 2024
img
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত শনিবার: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Apr 25, 2024