চকবাজারের ঐতিহ্যবাহী ‘জাহাজবাড়ি’ না ভাঙতে জিডি

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ’জাহাজবাড়ি’ না ভাঙতে চকবাজার মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম শুক্রবার সন্ধ্যায় জিডিটি করেন, যার নম্বর ১৩২৫।

জিডিতে বলা হয়েছে, গতবছর ১৩ আগস্ট (রিট নম্বর-৪৬৫৬ অব ২০১৮) সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আরবান স্ট্যাডি গ্রুপ কর্তৃক প্রণীত দুই হাজার দুইশত ঐতিহ্যবাহী ভবনের যে তালিকা রয়েছে, সেগুলো ভাঙার, পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন।

৩ চক সার্কুলার রোডে অবস্থিত শতবর্ষ পুরাতন ঐতিহ্যবাহী ভবনটি ভাঙার কাজ চলছে। এই ভবনটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার (গ্রেড নম্বর ১) এর মধ্যে অর্ন্তভুক্ত। কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভবনটি ভাঙার কাজ তাৎক্ষণিক ভাবে বন্ধ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয় ওই জিডিতে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৩ আগস্টে আরবান স্টাডি গ্রুপের (ইউএসজি) করা এক রিট আবেদনের রায়ে ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ২২শ ভবন না ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ওই সময় বিচারপতি তারিক-উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, ঢাকা শহরে অনেক ভবন রয়েছে, যা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ও মোঘল আমলের তৈরি। এসব স্থাপনা আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী। জাতীয় স্বার্থেই এসব ঐতিহ্য রক্ষা করা প্রয়োজন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘জাহাজ বাড়ি’ ভবনটি তৈরি করা হয়েছে আনুমানিক ১৮৭০ সালে। ভবনের মালিক ১৯২০ সালে বদু হাজির নামে ওয়াকফ্ সম্পত্তি করে দিয়ে যান। তার মৃত্যুর পরে তার বড় সন্তান ফেকু হাজি ভবনটির দায়িত্বে ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে ফেকু হাজির বড় ছেলে হাজি আব্দুল হক ভবনটির তত্ত্বাবধায়ন করছেন।

আরবান স্ট্যাডি গ্রুপের প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, তিনতলা ‘জাহাজ বাড়ি’র দোতলায় রয়েছে নকশা করা রেলিং, ছাদওয়ালা টানা বারান্দা। আর পুরো অবয়ব জুড়ে রয়েছে নানা রকম কারুকাজ সমৃদ্ধ। তবে কোণাকৃতি আর্চের সারি, কারুকাজ করা কার্নিশ। কলামে ব্যবহার করা হয়েছে আয়নিক ও করিন্থিয়ান ক্যাপিটাল।

তিনি আরও বলেন, পশ্চিম প্রান্তে আর্চ ও কলামের সাথেও নানা রকম অলংকরণের ব্যবহার দেখা যায়। সব মিলিয়ে এই ভবনটিতে যে ধরনের অলংকরণের ব্যবহার রয়েছে, তা একে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে। এই ধরনের অলংকরণ পুরান ঢাকায় আর কোনো ভবনে দেখা যায় না। সেদিক থেকে এর নান্দনিক গুরুত্বের জন্যই ভবনটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

তাইমুর ইসলাম বলেন, এক অর্থে এই ভবনটি ঢাকার সবচাইতে পুরাতন বাণিজ্যিক ভবন। এর স্থাপত্য বিন্যাস বলে একে ট্রেডিং হাউস হিসাবেই এটা নির্মাণ করা হয়েছিল। সেদিক থেকেও তা সংরক্ষণের দাবি রাখে। তবে পশ্চিম মাথার দোতলার ছাদে যে নকশা ছিল, সেটা ভেঙে ফেলা হয়েছে।

চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশিদ তালুকদার বাংলাদেশ টাইমসকে বলেন, থানায় তাইমুর সাহেবের জিডি পেয়ে ঐতিহ্যবাহী ভবনটি না ভাঙতে সেখানে গিয়ে আমরা অনুরোধ করি। ভবনটি এখন আর ভাঙা হচ্ছে না। পরে হবে কিনা তা জানি না। তবে সাময়িকভাবে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on: