ফেনীর দগ্ধ ছাত্রীর ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বেগ

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে শনিবার আলিম পরীক্ষার্থী ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এই ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।

রোববার দুপুরে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ের দেখা করে আসার পর সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

ঢামেকে ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফেনীর ওই ছাত্রীর সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি তার চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা মেয়েটির চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি। তার অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।

শনিবার মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে বান্ধবীকে মারধর করা হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন ছাত্রীটি। যাওয়ার পরই তাকে ঘিরে ধরেন বোরকা পরা চার-পাঁচজন ছাত্রী। তারা শাসাতে থাকেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কেন মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন। জবাবে মেয়েটি বলেছিলেন, তিনি যে অভিযোগ করেছেন, তা সত্য এবং ‘শেষনিশ্বাস’ পর্যন্ত তিনি এর প্রতিবাদ করবেন। এরপর ওই ছাত্রীদের কেউ তার হাত, কেউ পা ধরেন এবং গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন।

গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্লীলতাহানি করেন—এ অভিযোগে মামলা হয়েছে। ছাত্রীর মায়ের করা মামলায় অধ্যক্ষ এখন কারাগারে।

ওই ছাত্রীর ভাইয়ের অভিযোগ, শনিবার তার বোন পরীক্ষা দিতে গেলে অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই ছাত্রীকে মামলা তুলে নিতে বলেন। ছাত্রীটি রাজি না হওয়ায় তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দ্রুত পালিয়ে যান তারা। মেয়েটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।

এদিকে দগ্ধ ওই ছাত্রীকে দুই লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা  কর্তৃপক্ষ।

রোববার ফেনী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সভায় দগ্ধ ছাত্রীর চিকিৎসায় তহবিল গঠন এবং শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দুই লাখ টাকা অনুদান দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া ওই মাদ্রাসার কারাবন্দী অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে গ্রেপ্তারের দিন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় নেওয়া অন্য সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে আছে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও আইনের মুখোমুখি করতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান, মাদ্রাসার নিরাপত্তার জন্য দ্রুত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা। আলিম পরীক্ষা চলা পর্যন্ত মাদ্রাসায় কোনো ক্লাস হবে না।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: