সিঙ্গাপুরে নেয়ার মতো অবস্থায় নেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত : ডা. সামন্ত লাল

ফেনীতে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার শিকার সেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে এখনই সিঙ্গাপুরে পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন।

মঙ্গলবার সকালে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ওই ছাত্রীর বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্স শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান তিনি।

দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি

ডা. সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটির শারীরিক যে অবস্থা তাতে পাঁচ ঘণ্টা ফ্লাই করা খুবই রিস্কি বলে মনে করছেন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা। মেয়েটির যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো স্থিতিশীল হলে তখন তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া যাবে। আমরা এই বিষয়টি তার পরিবারকেও জানিয়েছি, তারাও একমত পোষণ করেছে।

তিনি বলেন, ওর অবস্থা সংকাটাপন্ন হওয়ায় এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। সিঙ্গাপুরে নিতে গেলে জার্নিতে যে ধকল থাকবে সেটি সামাল দেয়ার মতো অবস্থায় নেই সে। তাই তাকে আপাতত বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসা দেয়া হবে। অবস্থার উন্নতি হলে তখন বিদেশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

১৭ এপ্রিল সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের একটি চিকিৎসক দল ঢাকা আসবে। তখন তারা নুসরাতকে দেখে মতামত দিতে পারবে বলে জানান সামন্ত লাল সেন।

এর আগে সোমবার দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে তার সর্বশেষ স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়।

এদিকে নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় বোরখা পরিহিত অজ্ঞাত পরিচয় চার নারীসহ কয়েকজনকে আসামি করে সোমবার মামলা করেছেন তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া নুসরাতের শ্লীলতাহানির মামলায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষও গ্রেপ্তার আছেন। অধ্যক্ষকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদ্রাসার গভর্নিং বডি।

এর আগে, শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যায় ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুর ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে লাইফসাপোর্টে রয়েছেন।

২৭ মার্চ ওই যাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাহ- এমন অভিযোগ এনে ছাত্রীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: