বাসাবাড়িতে পানি ফোটাতে প্রতি বছর ব্যয় ৩৩২ কোটি টাকা : টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহকই পানি ফুটিয়ে পান করেন। আর এই পানি ফোটাতেই বছরে জ্বালানি বাবদ ব্যয় হচ্ছে ৩৩২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাসাবাড়িতে ৩৬ কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ঘনমিটার গ্যাস পুড়ছে পানি বিশুদ্ধকরণে।

‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি রোববার প্রকাশ করে টিআইবি। ধানমণ্ডির মাইডাস সেন্টারে টিআইবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনের আওতাধীন আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বস্তি এলাকার পানি ও পয়ঃসংযোগ এ গবেষণার আওতায় পড়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে এই গবেষণা চালানো হয়।

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জমান বলেন, ‘পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও প্রাপ্যতা ওয়াসা নিশ্চিত করতে পারেনি। বিশ্বের অনেক দেশেই ট্যাপ থেকে সরাসরি পানি পান করা যায়। এশিয়ারই অনেক দেশেই ট্যাপের পানি সরাসরি পান করা যায়। বাংলাদেশে আমরা ভাবতেও পারি না।’

গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসার গ্রাহকদের ৫১ দশমিক পাঁচ শতাংশ বলছেন, পানি অপরিষ্কার, ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ গ্রাহক পানিতে দুর্গন্ধ, আর ৩৪ দশমিক পাঁচ শতাংশ গ্রাহক বলছেন, সারা বছরই পানি অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকে।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা ওয়াসার ‘শান্তি’র বোতলেও দুর্গন্ধযুক্ত পানি পাওয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ইফতেখারুজ্জমান।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীতে প্রতিদিন ১৪ লাখ ঘনমিটার পয়ঃবর্জ্য তৈরি হলেও ওয়াসার রয়েছে দেড় লাখ ঘনমিটার সক্ষমতার একটি ট্রিটেমন্ট প্লান্ট। কিন্তু এই প্লান্টে প্রতিদিন পরিশোধন হয় ৫০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য। বাকি ৯৬ শতাংশ পয়ঃবর্জ্য অপরিশোধিত অবস্থায় বিভিন্ন খাল হয়ে আশপাশের নদীতে গিয়ে পড়ছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে ওয়াসায় নিয়োগদুর্নীতির কথাও তুলে ধরে বলা হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ‘অযাচিত হস্তক্ষেপ’ ঘটে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ওয়াসার বোর্ড অকার্যকর। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের একচ্ছত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ওয়াসা।’

ঢাকা ওয়াসার অনিয়মের প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার।

পানির সংযোগের জন্য ২০০ টাকা  থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া পয়ঃলাইনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ৩০০-৪৫০০, গাড়িতে জরুরি পানি সরবরাহের জন্য ২০০-১৫০০, মিটার ক্রয়/পরিবর্তনের জন্য এক হাজার-১৫ হাজার, মিটার রিডিং ও বিল সংক্রান্ত কাজের জন্য ৫০-তিন হাজার এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

টিআইবির গবেষণায় ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির তথ্যও পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা-যশলদিয়া পানি শোধনাগার প্রকল্প ২০১৩ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও এর কাজ চলছে। সায়েদাবাদ (ফেজ-৩) পানি শোধনাগার ২০১৪ সালে শুরু হয়েছে। ২০২০ সালে তা শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ পর্যন্ত অগ্রগতি মাত্র দুই শতাংশ।

২০১২ সালে শুরু হওয়া তেঁতুলঝড়া-ভাকুর্তা ওয়েলফিল্ডের কাজ ২০১৬ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও চলমান।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি সুলতানা কামাল উপস্থিত ছিলেন।

 

 

টাইমস/এসআই

 

 

Share this news on: