গতবছর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষিতে কলেজছাত্র রাজীব হাসানের হাত হারানো ও পরে মৃত্যুর ঘটনায় তার দুই ভাইকে ২৫ লাখ করে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। রাজীব হোসেনের দুই ভাইকে এ ক্ষতিপূরণ দেবে দুই বাস কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে রাজীব হোসেনের দুই ভাইকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
গত বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে হাত কাটা পড়ে রাজীবের। ওই দিন বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতকের (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়ে ছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে পেরিয়ে যাওয়ার বা ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিকে গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শমরিতা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাজীবকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয়। সাময়িক উন্নতির পর ১৬ এপ্রিল থেকে তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। রাজীবের মস্তিষ্ক অসাড় হয়ে যায়। ওইদিন দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব হোসেন।
রাজীব হাত হারানোর পরদিনই হাইকোর্টে এই রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট এক আদেশে রাজীবের পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি রুল জারি করে।
ওই এক কোটি টাকার অর্ধেক, অর্থাৎ ৫০ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য দুই পরিবহনের মালিককে এক মাসের সময় দেয়া হয় সেই আদেশে।
দুই বাস কর্তৃপক্ষ আপিল করলে উচ্চ আদালত মৃত্যুর কারণ নিরূপণে তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেন। গত বছরের ২২ মে আপিল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে হাইকোর্টকে দুর্ঘটনার দায় নিরূপণ করতে একটি ‘স্বাধীন কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেয়। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
হাইকোর্টে জমা দেয়া কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনার জন্য স্বজন পরিবহনের বেপরোয়া চালনাই দায়ী। হালকা যানের চালককে দিয়ে ডাবল ডেকার চালানোর জন্য বিআরটিসিরও দায় রয়েছে।
রাজীবের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শাহবাগ থানায় মামলা হয়। রাজীবের মৃত্যুর পরে মামলায় ‘অপরাধজনক প্রাণহানি’র অভিযোগ যুক্ত করা হয়। কিন্তু এক বছরেও পুলিশ সে মামলার তদন্ত শেষ করতে পারেনি।
টাইমস/এসআই