বাড়ল দ্রুত বিচার আইনের মেয়াদ

দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য বিদ্যমান আইনের মেয়াদ আরও ৫ বছর বৃদ্ধির বিধান করে আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল-২০১৯ পাস করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ-বিএনপির পালাপাল্টির মধ্যে বহুল আলোচিত এই বিল মঙ্গলবার সংসদে পাস হয়। বিলে বিদ্যমান আইনের ধারা-১ এর উপধারা (২) এ উল্লেখিত ‘সতরো বৎসর’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘বাইশ বৎসর’ শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, বেগম রওশন আরা মান্নান, বিএনপির হারনুর রশীদ, মোশাররফ হোসেন, রুমিন ফারহানা ও গণফোরামের মোকাব্বির খান বিলের ওপর জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব আনলে তা কন্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।

২০০২ সালে যখন দ্রুত বিচার আইন প্রথম সংসদে পাস হয়, সে সময় এ আইনের মেয়াদ ছিল দুই বছর। পরে ছয় বারে আইনটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে মোট ১৫ বছর। সর্বশেষ ২০১৪ সালে এর মেয়াদ ৫ বছর বাড়ানো হয়, যা গত ৯ এপ্রিল শেষ হয়েছে। বিলটি পাস হওয়ায় এখন আইনটি ২০২৪ সাল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।

বিএনপির শাসনামলে প্রথমে আইনটি প্রণয়নের সময় যাদের বিরোধিতা ছিল, সেই আওয়ামী লীগই আইনটির মেয়াদ আরও বাড়িয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি এবার আইনটি পাসের সময় আপত্তি জানিয়েছে।

বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ–সংবলিত বিবৃতিতে যেসব অপরাধ দমনের কথা বলা হয়েছে, সেসব কাজের সঙ্গে সরকারি দলের লোকজন জড়িত। কিন্তু চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের মতো এসব অপরাধে এই আইন সরকারি দলের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে প্রয়োগ হয়েছে, তার প্রমাণ নেই। এই আইনে শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীদের নামে মিথ্যা, ভুয়া মামলা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, সরকার এই আইনটিতে মজা পেয়ে ২০১৪ সালে একবার বাড়িয়েছে। এখন আবার বাড়াচ্ছে। সরকার আইনটিকে স্থায়ী না করে যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে ততদিনের জন্য এর মেয়াদ বাড়াচ্ছে। ক্ষমতায় থেকে তারা বিরোধী দলকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যেই তারা এটা করছে।

গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ২০০২ সালে এই আইনটি যখন প্রথমে পাস হয় তখন বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল। তারা আইনটিকে কালো আইন আখ্যায়িত করে এর বিরোধিতা করে বলেছিল, এটি আওয়ামী লীগ নিধনের আইন। কিন্তু এখন তাদের দেখছি ভিন্ন সুর।

বিএনপির অভিযোগের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনটি ২০০২ সালে প্রণীত হয়েছিল এবং ওই সময় আমাদের (আওয়ামী লীগ) নামে শত শত মামলা করেছিল। তাদের নেতাকর্মীরা আমাদের বাড়িঘর লুট করেছিল। সেই সময় তাদের নামে এ আইনে কোনো মামলা হয়নি। উনারা কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়েছেন বলেই আজ এটা আমি বললাম।

যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব নাকচ করে তিনি বলেন, কেবল সময় বাড়ানোর জন্যই এই আইনটির সংশোধনী আনা হয়েছে। এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনা হয়নি। এজন্য জনমত যাচাইয়ের নোটিশ যুক্তিসংগত নয়।

জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম বলেন, আওয়ামী-বিএনপি দুইপক্ষই এই কালো আইনকে স্পর্শ করেছেন। তার একটা প্রমাণ এই সংসদে দিয়ে গেলেন।

উল্লেখ্য, আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছিল, চাঁদাবাজি, যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতি সাধন, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও সন্ত্রাস সৃষ্টি, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র কেনায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্ন অপরাধ দ্রুততার সঙ্গে বিচারের জন্য এ আইন।

এ আইনে দোষী প্রমাণিত হলে দুই থেকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড হতে পারে। প্রতি জেলায় গঠিত এক বা একাধিক দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এ আইনের মামলার বিচার চলে।

দ্রুত বিচার আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারকাজ নিষ্পত্তি করার বিধান আছে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা না গেলে আরও ৬০ দিন সময় পাওয়া যায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ