সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি। এই দুই জেলায় প্রায় তিনলাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আছেন। বন্যার কারণে বন্ধ আছে দুইজেলার দুই শতাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদানও।
টানা পাঁচদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। শুক্রবারও দিনভর ছিলো বৃষ্টি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলেও থেমেছে পাহাড়ি ঢল। ফলে কমতে শুরু করেছে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি।
নদীর পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যা কবলিত মানুষের। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকাগুলোর মানুষদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘরও তলিয়ে গেছে অনেকের।
জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল বন্ধ হওয়ায় শুক্রবার সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পানিবন্দি অবস্থায় আছে লক্ষাধিক মানুষ।
বন্ধ রয়েছে দুই উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও ধলাই এবং গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারির সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ফলে বেকার হয়ে পড়েছেন এসব পাথর কোয়ারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই লক্ষাধিক শ্রমিক।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি বৃদ্ধির খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। উপজেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বন্যা পরিস্থিতি প্রাথমিকভাবে মোকাবেলা করে দ্রুত প্রতিবেদন প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ত্রাণসহ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জে কমতে শুরু করেছে সুরমার পানি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুরমার পানি সুনামগঞ্জে ৯৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার দুপুরে ৮০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১৭৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বন্যায় জেলার সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, দোয়ারাবাজার ও ধর্মপাশা উপজেলা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে কয়েক শতাধিক গ্রাম।
জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৩৮ টি প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে ১৮৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ।
পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবকয়টি স্কুলকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলায় সরকারিভাবে ১০টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারা এবং সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বন্যার্তদের মধ্যে বণ্ঠনের জন্য বৃহস্পতিবার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বরাদ্ধ দেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, ছয়টি উপজেলার ১২ হাজার ৮০০ ঘরবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে ৬৬ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। বন্যার্তদের প্রশাসন ৩ লাখ টাকা, তিনশ মেট্রিকটন চাল ও শুকনো খাবার প্রদান করেছে।
টাইমস/জেডটি