আঙ্কেল থেকে স্বামী, অতঃপর বিচ্ছেদ

ব্যক্তিজীবনে ভীষণ রোমাঞ্চপ্রিয় ছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। রাজনীতির মতো তার ব্যক্তিজীবনও ছিল রহস্যময়। সামরিক শাসনকালে তো বটেই, এরপরও দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে একাধিক প্রেম ও বিয়ের খবর শোনা গেছে।

এ নিয়ে এরশাদের ভাষ্য ছিল, তিনি নারীদের কাছে যান না; নারীরাই তার কাছে আসেন।

১৯৯৮ সালের ১৪ জুলাই, দিনটি ছিল ফ্রান্সের জাতীয় দিবস। সে দিনই বিদিশার সঙ্গে এরশাদের প্রথম দেখা ও পরিচয়। ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় ডিনার পার্টিতে গিয়েছিলেন বিদিশা। ওই সময় এরশাদের সঙ্গে বিদিশাকে পরিচয় করিয়ে দেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত। বিদিশা প্রথম দেখায় এরশাদকে আঙ্কেল ডেকে ছিলেন।

বিদিশার সঙ্গে এরশাদের দ্বিতীয়বার দেখা হয় ঢাকায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের বাড়ির ডিনারে। সেদিন এরশাদ নিজেই বিদিশার ফোন নম্বর চেয়ে নেন। তারপর এরশাদ প্রতিদিন ভোরে ফোন করতেন বিদিশাকে।

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের সঙ্গে বিদিশার যখন পরিচয় হয়, তখন বিদিশা ছিলেন বিবাহিতা। তার স্বামী-সন্তান থাকলেও এরশাদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয়। এক পর্যায়ে প্রথম স্বামী পিটার উইসনের সঙ্গে বিচ্ছেদও ঘটে। তারপর লন্ডনে গোপনে এরশাদের সঙ্গে বিদিশার বিয়ে হয়।

নিজের বিয়ের বিষয় টেনে বিদিশা এরশাদ তার আলোচিত বই ‘শত্রুর সাথে বসবাস’ এ লিখেছেন, ‘আমার স্বামী ভাগ্যটা এমনই যে, দু’বার বিয়ে করেছি। কিন্তু যে দু’বারই এমন ব্যক্তিকে বিয়ে করেছি, যাকে শুরুতে আঙ্কেল ডেকেছি। বিষয়গুলো এখন চিন্তা করতে বিস্ময়কর লাগলেও তখন কিন্তু সে রকম কিছু মনে হয়নি।’

জানা গেছে, প্রথম স্বামী পিটার উইসনের সঙ্গে বিদিশার বয়সের পার্থক্য ছিল ১৪ বছর। পিটারের বয়স ২৮। আর বিদিশার বয়স ছিল তখন ১৪ বছর।

বিদিশা তার বইয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের শারীরিক বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘লম্বা একহারা গড়নের বয়স্ক লোক। কত হবে বয়স? ৫০-ও হতে পারে। আবার ৭০-ও হতে পারে। তবে প্রথম দর্শনেই মনে হলো নিজেকে নিয়ে খুবই সচেতন তিনি। এই সচেতনতা নিজের শরীর নিয়ে যেমন, তেমনি পোশাক নিয়েও। বেশ দামি পোশাক, জুতা, ঘড়ি ছিল তার পরনে।’

বিদিশা এরশাদের বিষয়ে লিখেছেন, ‘উনি মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতেন। প্রশংসা করতেন আমার পোশাকের। আমার রুচির। আমার বুদ্ধিমত্তার। আমার খুশি দেখে বিরক্ত হতো আমার বন্ধুরা। এরশাদের কথার মধ্যে, শব্দ চয়নে, শব্দ উচ্চারণে, প্রসঙ্গ নির্বাচনে এক ধরনের আভিজাত্যের ছাপ থাকতো। শুনতে আমার ভালো লাগতো।’

এরশাদের বিষয়ে বিদিশা তার বইয়ে আরও লিখেছেন, ‘আমার জীবনে নতুন পুরুষ। একজন সংবেদনশীল মানুষ। বৃদ্ধ কিন্তু সক্ষম। জীবনে প্রথম ভালোবাসা পেলাম। এক সময় মনে হলো -আই অ্যাম ইন লাভ উইথ এরশাদ। আমি এরশাদের প্রেমে পড়ে গেছি।’

বিদিশার সঙ্গে এরশাদের প্রথমে বিয়ে হয় লন্ডনে। তবে সে বিয়ের কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। পরে ২০০২ সালের ২৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এরশাদ-বিদিশার বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় বিচ্ছেদও হয়। এমনকি এরশাদ বিদিশার বিরুদ্ধে চুরির মামলাও দিয়েছিলেন।

তবে এরশাদের মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্তও বিদিশা তাকে ভুলতে পারেননি। বিদিশা তার প্রাক্তন স্বামীকে নিয়ে মন্তব্য করেছেন,‘এরশাদই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেমিক।’

বিদিশা ফেসবুকে দেয়া পোস্টে তিনি লিখেন,‘এ জন্মে আর দেখা হলো না। আমিও আজমীর শরিফ আসলাম আর তুমিও চলে গেলে । এত কষ্ট পাওয়ার থেকে মনে হয় এই ভালো ছিল। আবার দেখা হবে হয়তো অন্য এক দুনিয়া তে যেখানে থাকবে না কোনও রাজনীতি।’

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: