কুরবানির গোশত বন্টন: কি বলে কোরআন-হাদিস

কোরবানি দেয়ার পর গরুর গোশত বন্টন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেকেই এই সম্পর্কে না জানার কারণে গোশত ভাগের সময় নিজের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কোরবানির গোশত যদি সঠিকভাবে বন্টন করা না যায় তবে কোরবানি কবুলের শর্ত পূরণ হবে না। তাই গোশত বন্টনের ক্ষেত্রে সতর্কতার সাথে বন্টন করা আবশ্যক।

আসুন জেনে নেই কিভাবে বন্টন করবেন কোরবানির গোশত।

তিনভাগে ভাগ:

কোরবানির গরু সম্পূর্ণ কাটার পর সব গোশতকে সমান তিনভাগে ভাগ করতে হবে। পরিমাপের ক্ষেত্রে দাড়িপাল্লা ব্যবহার করা যেতে পারে।

গোশত সমান তিন ভাগ করার পর এক ভাগ গরিব-দুঃখীকে, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনকে এবং এক ভাগ নিজে খাওয়ার জন্য রাখতে হয়।

চামড়া

কোরবানির গরুর আরেকটি অংশ হচ্ছে চামড়ার টাকা। যাতে গরিব-মিসকিনদের হক রয়েছে। চামড়ার টাকা আশেপাশের এতিমখানায় কিংবা চামড়া তাদের কাছে দিতে পারেন।

কোরআন হাদিসের দলিল

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা খাও এবং অভাবগ্রস্ত দরিদ্র লোকদের খাওয়াও।’ (সূরা হজ্জ, আয়াত: ২৮)।

আল্লাহ্‌ পাক আরও বলেন: ‘তখন তোমরা তা থেকে খাও এবং আহার করাও এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে এবং এমন দরিদ্রকে যে ভিক্ষা করে না। এভাবে আমরা সেগুলোকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।’ (সূরা হজ্জ, আয়াত: ৩৬)

সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ করে রাখ’।(সহিহ বুখারী)

হাদিসে ‘খাওয়াও’ কথাটি ধনীদেরকে হাদিয়া দেয়া এবং দরিদ্রদেরকে দান করাকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘তোমরা খাও, সংরক্ষণ করে রাখ এবং দান করো’। (সহিহ মুসলিম)

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) কুরবানির গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকির-মিসকিনকে দিতেন।

আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর কুরবানির গোশত বন্টন সম্পর্কে বলেন যে, তিনি একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরিব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েল-ফকিরদের দিতেন।

কতদিন সংরক্ষণ করে রাখা যাবে?

 নিজের জন্য যে অংশটুকু খাওয়া জায়েয সে অংশটুকু সংরক্ষণ করে রাখাও জায়েয। এমন কি সেটা দীর্ঘ দিন পর্যন্ত হলেও যতদিন পর্যন্ত রাখলে এটি খাওয়া ক্ষতিকর পর্যায়ে পৌঁছবে না। কিন্তু যদি দুর্ভিক্ষের বছর হয় তাহলে তিনদিনের বেশি সংরক্ষণ করা জায়েয নয়।

দলিল হচ্ছে সালামা বিন আকওয়া (রাঃ) এর হাদিস। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘তোমাদের যে মধ্যে ব্যক্তি কোরবানি করেছে তৃতীয় রাত্রির পরের ভোর বেলায় তার ঘরে যেন এর কোনো অংশ অবশিষ্ট না থাকে।’

পরের বছর সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করল: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! আমরা কি গত বছরের মত করব? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘তোমরা খাও, খাওয়াও এবং সংরক্ষণ কর। ঐ বছর মানুষ কষ্টে ছিল। তাই আমি চেয়েছি তোমরা তাদেরকে সহযোগিতা কর’।(সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম)

আল্লাহ কারও কোরবানির গরুর ওজন , দাম দেখে না, আল্লাহ দেখে তাকওয়া। কোরবানির গোশত গরিব-মিসকিনদের মাঝে সঠিকভাবে বিতরণ করে দিলে আল্লাহর কৃপায় কুরবানিদাতা রিয়া ও শ্রুতি থেকে নিরাপদ থাকবেন এবং তার অন্তর পরিশুদ্ধ হবে। আর এটাই হলো কুরবানির মূল প্রেরণা।

আজকাল অনেকে গোশত জমা করে সেখান থেকে প্রতিবেশী ও ফকির-মিসকিনদের কিছু কিছু দিয়ে বাকি গোশত পুনরায় নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেন। এটি একটি কুপ্রথা। এর মাধ্যমে কৃপণতা প্রকাশ পায়। যা অবশ্যই পরিতাজ্য।

 

টাইমস/এএইচ/এসআই

Share this news on: