পানির দামে বিক্রি হচ্ছে চামড়া

সারা দেশেই এবার কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যায্য দাম মিলছে না। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারই চামড়া সবচেয়ে কম মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে চামড়া, আবার কোথাও নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হচ্ছে চামড়া।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, এবার গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার মূল্য সারা দেশে ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির কাঁচা চামড়ার মূল্য হবে সারা দেশে ১৩ থেকে ১৫ টাকা।

গতবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া ঢাকায় ৪৫ থেকে ৫০ এবং ঢাকার বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম নির্ধারিত হয় ১৮ থেকে ২০ এবং ছাগলের চামড়া ১৩ থেকে ১৫ টাকা। এই দরে ৩০ থেকে ৩৫ বর্গফুটের লবণযুক্ত বড় গরুর চামড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় ট্যানারি-মালিকদের কেনার কথা। প্রতিটি চামড়া সংরক্ষণে লবণ, গুদাম ভাড়া, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহনসহ মোট ব্যয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং ১০০ টাকা মুনাফা ধরলেও ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় মাঠপর্যায়ে কেনাবেচা হওয়ার কথা। কিন্তু চামড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়। ১৫ থেকে ২৫ বর্গফুটের ছোট ও মাঝারি চামড়ার যৌক্তিক দাম ১ হাজার টাকা হলেও ৫০০ টাকার বেশি দরে কোথাও চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। ছাগলের চামড়া বিক্রি হচ্ছে নামমাত্র মূল্যে। নির্ধারিত দরের হিসাবে গড়ে ১০০ টাকায় ছাগলের চামড়া বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে ১০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন। কোরবানির গরু কিনেছিলেন এক লাখ টাকা দামে। সোমবার ঈদুল আজহার প্রথম দিনে গরু কোরবানির পর চামড়া নিয়ে পড়েন বিপত্তিতে। কেউই ৩০০ টাকার বেশি দাম দিতে রাজি নয় চামড়ার। শেষমেষ উপায়ন্তর না দেখে  সেই চামড়া স্থানীয় এতিমখানায় দান করেছেন। এ ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আরও কয়েকজন।

এবার কোরবানি দিয়েছেন, তারা যেমন চামড়ার দাম পাননি, তেমনি দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও।

ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা বলছেন, তারা চামড়া সংগ্রহ করবেন আরও ১০ থেকে ১২ দিন পর। ওই সময় পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা যদি চামড়া সংরক্ষণ করতে পারেন, তাহলে সরকার–নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে পারবেন।

চামড়া কেনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই বলছেন, আর্থিক সংকটের কারণে এই মৌসুমে আড়তদারেরা চামড়া কিনতে পারছেন না। আবার ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম একবারেই কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলছেন, চামড়ার দাম নিয়ে অন্তরালে কেউ কেউ নোংরা খেলা খেলে নিজেরা লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো। চামড়া কেনা নিয়ে হানাহানির ঘটনাও ঘটতো। তবে গত কয়েক বছরের চেয়ে এবারের অবস্থা বেশ খারাপ। এবার মৌসুমি ব্যবসায়ী সেভাবে দেখাও যায়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতি পিস ছোট চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক।

কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী অভিযোগ করলেন, আড়তদার ও ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট করে চামড়ার বাজার কমিয়ে দিয়েছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন আড়তদার ও ট্যানারি মালিকেরা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, চলতি বছর চামড়াখাতে খুব খারাপ অবস্থা। ট্যানারি মালিকদের কাছে আমাদের বকেয়া প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। অনেকেই টাকা পাননি। আমাদের প্রায় আড়াইশ আড়তদারের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ জন চামড়া কিনতে পারছেন। টাকার অভাবে চামড়া কিনতে না পারার কারণে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার এখন দাম আছে তার চেয়েও দাম আরও কমে যেতে পারে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে টিপু সুলতান বলেন, কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী বিভিন্ন জায়গা থেকে বেশি দামে চামড়া কিনছেন। না বুঝে ব্যবসা করতে এসে আড়তদারদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন তারা।

‘আমরা চামড়া কেনা শুরু করব আরও কয়েক দিন পর। এখন দরপতনের সঙ্গে আমাদের যুক্ত করার বিষয়টি আশ্চর্যের। আমার মনে হয় গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। পোস্তায় চামড়া করতে গিয়ে অনেকে বিভ্রান্ত হন। আশঙ্কা আর আতঙ্কে লোকসান দিয়ে চামড়া বিক্রি করে দেন’- বলেন ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ।

 

টাইমস/এসআই

Share this news on: