‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই’

 

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালকুদার।

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের দেওয়া লিখিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে শনিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হয়েছে। সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলার দুদিনের মাথায় ভিন্ন কথা বললেন তার সহকর্মী নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

এর আগে সোমবার সকালে চারজন সাংবাদিক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কাছে ছয়টি লিখিত প্রশ্ন জমা দেন। এবং তিনিও এসব প্রশ্নের লিখিত জবাব দেন।

নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন লিখিত প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালকুদার বলেন, আমি মোটেই মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। আপনি তার বিরোধিতা করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে এই কমিশনার বলেন, আমি কখনই তার বক্তব্যের বিরোধিতা করি না। তিনি তার কথা বলেন। আমি প্রয়োজনে আমার ভিন্ন মত প্রকাশ করি। আপনারা তো সাংবাদিক। আপনারা দেশের সব খবর রাখেন। সব কিছু দেখেন। আপনারা নিজেদের বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, নির্বাচনে এখন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি না? তাহলে উত্তর পেয়ে যাবেন।

নির্বাচনে বিরোধী দলের প্রচারণায় নানা বাধার অভিযোগ আসছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ। এখনও যে সময় আছে তাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেকট্রোরাল ইনকোয়ারি কমিটির বিচারকদের আরও বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করা উচিত। আমি মনে করি, সেনাবাহিনী মাঠে থাকলে আশাব্যাঞ্জকভাবে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।

সিইসি বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু হবে। আপনিও কি তা-ই মনে করেন? এর জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, সব দল অংশ নিলে তাকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলা যায়। সুষ্ঠু নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। অংশগ্রহণমূলক হওয়া একটি প্রাথমিক প্রাপ্তি। আসল কথা হচ্ছে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হচ্ছে কিনা এবং বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কিনা। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে অংশগ্রহণমূলক হলেও কোনও লাভ নেই।

নির্বাচনে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে? এ প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন আমরা সরাসরি করি না। রিটার্নিং অফিসার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে। তাদের বাহিনীর সদস্যরা কতটা তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা তারা বলতে পারবেন।

বর্তমান অবস্থায় আপনার কি কোনও মেসেজ (বার্তা) আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমার বক্তব্য হচ্ছে জাতীয় নির্বাচন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রার্থী, ভোটার এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ আইনের বাইরে যাবেন না। আইনকে নিজস্ব ধারায় চলতে দিন। নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলুন। নির্বাচনকে সাফল্যমণ্ডিত করতে সহায়তা করুন।

৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে বিএনপি অভিযোগ করে আসছিল, ভোটের সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না। তফসিল ঘোষণা শেষে প্রচার শুরুর পরও বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ইসিতে দফায় দফায় অভিযোগ দিয়ে একই কথা বলে আসছে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: