ঢাবির ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে চাই: ছাত্রলীগ সভাপতি

আগামী ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও  হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন।

ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের ইশতেহার ও আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সোমবার বাংলাদেশ টাইমসের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন তানভীর রায়হান। 

বাংলাদেশ টাইমসঃ কেমন আছেন?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ ভালো।

বাংলাদেশ টাইমসঃ অল্প কয়েকদিন পরেই ডাকসু নির্বাচন। তার আগে আপনাদের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে যদি কিছু বলতেন…

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ আমরা ইশতেহারের কাজ শেষ করেছি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ক্যাম্পাস ও শিক্ষার্থীদের যুগপোযোগী করে ইশতেহার তৈরি করেছি। তবে শিক্ষার্থীদের ভর্তি, আবাসন সমস্যা, খাওয়া ও পড়াশোনার বিষয়ে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের উন্নয়ন, লাইব্রেরি ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন করব। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা যানজটমুক্ত করতে স্টিকারবিহীন গাড়ি চলতে পারবে না।

বাংলাদেশ টাইমসঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীর প্রাণের দাবি-পূর্ণাঙ্গ আবাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নে আপনাদের ভূমিকা কী হবে?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজ এগিয়ে নেওয়া আমাদের কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিগত দশ বছরের আমলে অনেক ভবন হয়েছে।  আবাসন সঙ্কট অনেকাংশে দূর হয়েছে। বিজয় একাত্তর হল হয়েছে, মেয়েদের সুফিয়া কামাল হল হয়েছে, রোকেয়া হলের ৭ই মার্চ ভবন হয়েছে, শিক্ষকদের ও কর্মচারীদের আবাসিক ভবন হয়েছে। আপনারা ইতোমধ্যে জেনে থাকবেন ২২শ’ কোটির টাকার প্রকল্প অলরেডি পাস হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হলের ২২ তলা আবাসিক ভবন হয়েছে, জগন্নাথ হলে রবীদ্র ভবন হয়েছে। জহুরুল হক হলে আরেকটা ভবন হচ্ছে। কার্জন হলের দিকে আরেকটা কাজ অলরেডি পাস হয়েছে আর কাজও শুরু হয়ে গেছে। এসব বাদ দিয়ে ২২শ’ কোটি টাকার কাজ আসতেছে। আর এই সরকারের যে পাঁচ বছর আছে তাতে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাবে। প্রায় মোটামুটি আবাসিকই বলা চলে। বাকি ১০ ভাগ চাইলেও আবাসিক হবে না। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটা জায়গায় অবস্থিত, এটি ঢাকার প্রাণকেন্দ্র। আর ঢাকায় অনেকের নিজস্ব বাসা আছে, তারা তাদের বাবা-মা’র সাথে থাকেন। মানে ১০ ভাগের বেশির ভাগই কিন্তু বাবা-মায়ের সাথে থাকেন। এতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হয়েই গেলো।

বাংলাদেশ টাইমসঃ নিজেকে ভিপি হিসেবে দেখতে আপনার মূল্যায়ন কী?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ আমাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন। আমি তাদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকে তাদের জন্যই কাজ করতে চাই। তাদের যেখানে যেখানে অসুবিধা আছে, আমি আমার এই এক বছর মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য উৎসর্গ করতে চাই। যেখানে আমার ব্যক্তিগত সময় থাকবে না। শুধু বিভিন্ন সমস্যা ও অসঙ্গতি ফাইন্ডআউট করে সমাধান করার ব্যবস্থা করব।

বাংলাদেশ টাইমসঃ প্রধানমন্ত্রী আপনাদের ক্লিন ইমেজধারী হিসেবে বিবেচনা করেছেন, সেই মূল্যায়ন ধরে রাখার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ আসলে ক্লিন ইমেজ বলেন আর যাই বলেন, এসব ধরে রাখা আহামরি বিষয় না। এটা হচ্ছে আপনি যদি নিজে সৎ থাকেন আর আপনি যদি দলটাকে সেরকম ভালোবাসেন, সাধারণ মানুষকে আপনি যদি ভালোবাসেন, অসহায় মানুষের কথা সব সময় ভাবেন তাহলেই আপনার সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। মূল কথা হচ্ছে আপনাকে সৎ থাকতে হবে আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের সাথে মিশতে হবে।

বাংলাদেশ টাইমসঃ যেকোনো জায়গায় মারামারি হলে সুষ্ঠু তদন্ত হয়, কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বেলায় তা হয়নি কেন?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ আপনারা হয়তোবা জানেন না যে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার আগে তিনটি ঘটনা ঘটেছিল। সেই তিনটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে আমরা তাদের ডেকে বলে দিয়েছিলাম এই কাজগুলো হচ্ছে কেন? এর সমাধান করো। এগুলো আমাদের সাংগঠনিক বিষয়। এগুলো বাইরে প্রকাশ করার বিষয় নয়। তাদেরকে বলার পরে তারা বলেছে সমাধান করবে। তাদেরকে না করার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মারামারি হয়। আর সেইদিন ছিল এসএসসি পরীক্ষা। আর সেই পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা শেষে এমনকি পরীক্ষার দেওয়ার সময়ও অভিভাবকদের একটি ঘটনা ঘটে। পরে আমরা তাদের কমিটি স্থগিত করে তদন্ত কমিটি দেই। কিন্তু সেই কমিটিকে যে সময় দেই তার আগেই আরেকটি মারামারির ঘটনা ঘটে। তদন্ত করার আগে তাদেরকে আমরা বলে দিয়েছি যে, তোমরা গ্যাঞ্জাম করো না। তখন এমন কিছু ঘটনা ঘটে যে জায়গাগুলোর তদন্ত করার প্রয়োজন হয় না। তখন আমরা বুঝতে পারি যে ঘটনা কী ঘটেছে।

বাংলাদেশ টাইমসঃ ডাকসু নির্বাচনের ইশতেহারে কী কী বিষয় থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ ইশতেহারের মূল যে বিষয় তা হচ্ছে- আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে খুব সুন্দর করে সাজাতে চাই; স্বপ্নের যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেটা আমরা দূর থেকে দেখি। আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি তখন আমরা শুনেছি এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়। সেই খ্যাতি ফিরিয়ে আনতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাণিজ্যিকীকরণের বাইরে রেখে সুন্দর ক্যাম্পাস সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপহার দিতে চাই। এই বিষয়গুলোই যাতে প্রতিটি সংগঠনের মধ্যে থাকে। আর এগুলোই ইশতেহারে বিভিন্ন আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ টাইমসঃ ছাত্রদলসহ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলো সহাবস্থান নিশ্চিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনেকবার লিখিত অভিযোগ করেছে। এমনকি আপনাদের কাছেও কেউ কেউ মৌখিকভাবে বলেছেন। এ বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য কী?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ সহাবস্থান বলতে কি বোঝানো হয় আমি জানি না। আমি কালকে (রোববার) যখন কলাভবনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে যাচ্ছিলাম, তখন আমাদের সাথে কিন্তু বিভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীরা ভোট চেয়েছেন। তাদের সাথে আমরা হ্যান্ডশেকও করেছি। তাদের কাছে আমরাও দোয়া চেয়েছি আর তারাও আমাদের কাছে দোয়া চেয়েছেন। নির্বাচনের যে আবহাওয়া বা পরিবেশ সেই পরিবেশটা কিন্তু ক্যাম্পাসে বিরাজ করছে।

বাংলাদেশ টাইমসঃ বিশ্ববিদ্যালয় হলের ভেতরে আপনাদের একচ্ছত্র আধিপত্য আছে বলে বাম ধারা ছাত্রজোট ও ছাত্রদল অভিযোগ করেছে, সেটাকে কীভাবে দেখছেন?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ আমি এটাকে আধিপত্য বলবো না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন সব কিছুতেই ভূমিকা রেখেছেন। তারা বাংলাদেশকে বাংলাদেশ হিসেবে রুপান্তর করেছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ এই তিনটি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রচণ্ড ভালোবাসে আর তারা তা ধারণও করেন। তারই ধারাবাহিকতায় হলগুলো ছাত্রলীগ ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে। আর বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা। আর জাতির পিতাকে সবাই ভালোবাসেন। আর বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। তাই ছাত্রলীগকে ভালোবেসে যদি রায় দেয় তবে তাকে আমরা আধিপত্য বলবো না। এটাকে আমরা বলবো ভালোবাসার টান।

বাংলাদেশ টাইমসঃ নির্বাচনের কেন্দ্র হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে স্থাপনের দাবির বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ এটা বাদ দেন। এটা অনেক পুরানা। এটা একমাস আগে পার হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ টাইমসঃ ডাকসু নির্বাচনে অন্য যে কোনো সংগঠন ক্ষমতায় গেলে আপনারা তাদের সাথে একাত্মতা পোষণ করবেন কিনা?

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ অবশ্যই। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে রায় দেবেন সে রায় আমাদের সবাইকে মেনে নিতে হবে। তাদের চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকে আমাদের সবাইকে সম্মান করতে হবে।

বাংলাদেশ টাইমসঃ সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনঃ আপনাকেও ধন্যবাদ।   

 

টাইমস/টিআর/জেডটি

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মুজিবনগর সরকারের ৪০০ টাকা বেতনের কর্মচারী ছিলেন জিয়াউর রহমান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা দেশের মানুষের জন্য কোনো কাজ করেনি: প্রধানমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
ব্যবসায়ী নাসিরের মামলা : পরীমণিকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি Apr 18, 2024
img
দেশের মানুষকে ডাল-ভাত খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছিল বিএনপি : প্রধানমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
সড়ক দুর্ঘটনায় কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসানসহ নিহত ২ Apr 18, 2024
img
টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা Apr 18, 2024
img
গরমে ঘরেই নিন চুলের যত্ন Apr 18, 2024
img
ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ১৭ Apr 18, 2024
img
তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া Apr 18, 2024
img
আরব আমিরাতে ভয়াবহ বন্যা, ঢাকামুখী ৯ ফ্লাইট স্থগিত Apr 17, 2024