সাজা স্থগিত ও জামিন চেয়ে খালেদার আবেদন

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার রায় স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল এবং ধর্মীয় উসকানির অপর একটি মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া ১০ বছরের সাজার রায় স্থগিত চেয়ে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এতে কারাগারে থাকা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর জামিনের আরজিও রয়েছে।

বুধবার আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই লিভ টু আপিলটি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

বৃহস্পতিবার এই আপিলের বিষয়টি জানিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, ‘অন্যায্যভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাজার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, আমরা শুনানির সুযোগ পাইনি। আমাদের না শুনে রায় দেওয়া হয়েছে, এসব যুক্তিতে আপিল করা হয়েছে। এতে হাইকোর্টের রায় স্থগিত ও বিএনপি চেয়ারপারসনের জামিনও চাওয়া হয়েছে। সামনে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হচ্ছে। অবকাশ শেষে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ রায় দেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালেদা জিয়াসহ ছয় আসামির সবাইকে মোট ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা ৮০ পয়সা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। অর্থদণ্ডের টাকা প্রত্যেককে সম-অঙ্কে প্রদান করার কথা বলা হয়।

কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া, কাজী সালিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমেদ পৃথক আপিল করেন। পরে গত বছরের অক্টোবরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা আপিল খারিজ করে তার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট।

ধর্মীয় উসকানির মামলা

ধর্মীয় উসকানির একটি মামলায় জামিন চেয়ে আবেদন করেছেন তার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম জিয়াউর রহমানের আদালতে এই জামিনের আবেদন করা হয়। অন্যদিকে বাদীর আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ জামিনের বিরোধিতা করেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত পরে আদেশ দেবেন বলে জানায়। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদনের জন্য ১৮ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছিলেন বিচারক। ওইদিন দিন প্রতিবেদন জমা না পড়ায় ১৪ মার্চ দিন রাখা হয়েছিল।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হিন্দু সম্প্রদায়ের শুভ বিজয়ার অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের এক পর্যায়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে আছে। আসলে দলটি ধর্মহীনতায় বিশ্বাসী।’

তিনি আরও বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ সব ধরনের মানুষের ওপর আঘাত করে। আর লোক দেখানো ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরা এ জবরদখলকারী সরকারের হাতে কোনো ধর্মের মানুষই নিরাপদ নয়।’

এরপর ওই বছরের ২১ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দণ্ডবিধির ১৫৩ (ক) ও ২৯৫ (ক) ধারায় নালিশি মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী।

ওইদিন আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে মামলাটি শাহবাগ থানার একজন পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর ২০১৮ সালের ৩০ জুন প্রতিবেদন দেন শাহবাগ থানার ওসি (তদন্ত) জাফর আলী বিশ্বাস।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে বর্তমানে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে আছেন খালেদা জিয়া।

 

 

 

টাইমস/এসআই

 

Share this news on: