মনোনয়নের আগে জোটের হিসাব

 

কুলাউড়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত মৌলভীবাজার-২ আসন। হালনাগাদ ভোটার তালিকা অনুযায়ী এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ ৪১ হাজার ১০৮।

এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ২২ হাজার ৪০৮ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ১৮ হাজার ৭শ।

দফায় দফায় আসনটির সীমানা নির্ধারণ ও পুনর্নিধারণের ফলে এর প্রভাব পড়েছে এখানের ভোট ব্যাংকে। যার প্রভাব পড়তে পারে আগামী নির্বাচনেও। ফলে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নতুন করে হিসাব নিকাশ করছেন ভোটের।

পাশাপাশি শাসকদল ও বিরোধী বলয়ের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাকিয়ে জোট-মহাজোটের দিকে। এ আসনের মাঠের চিত্র এমন যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট নিয়ে নির্বাচন করলে ছাড় দেবে না জাতীয় পার্টি আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল বা যুক্তফ্রন্ট নিয়ে নির্বাচন করলে মনোনয়ন চলে যেতে পারে শরীকদের ভাগে।

এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মো. আব্দুল মতিন। এবারও মনোনয়ন চাইবেন তিনি। যদিও তাকে টপকিয়ে মনোনয়ন লুফে নেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন একঝাঁক আওয়ামী লীগ নেতা।

এদিকে দলীয় বা জোট ছাড়াও নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে সাবেক তিন এমপির। তারা হলেন তিন বারের সাবেক এমপি জাতীয় পার্টির নবাব আলী আব্বাস খান, দুই বারের সাবেক এমপি বিএনপির এমএম শাহীন এবং সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। বিপুল সমর্থকগোষ্ঠী থাকায় এই তিন নেতা প্রতিটি নির্বাচনেই ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ান।

এবারের নির্বাচনেও এই তিন প্রার্থীই মাঠে। যদিও বিএনপির শাহীন ছাড়া বাকি দুজন কোনো দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন এখনও তা অস্পষ্ট।

কুলাউড়ার রাজনীতিতে ‘ত্রিরত্ন’ বলে পরিচিত এই তিন নেতার মধ্যে এখনও নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক পরিচয় দিয়ে চলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও সাবেক এমপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ। তিনি বর্তমানে এলাকার চেয়ে ঢাকায় বেশি সময় দিচ্ছেন। জাতীয় রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ে সরকারবিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়া নিয়ে তৎপর। প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এখনও স্পষ্ট না করলেও এলাকায় সুলতানের নাম কুলাউড়ার মাঠে-ঘাটে। ‘সংস্কারপন্থি’ তকমা লাগার পর সুলতান নবম জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন।

আওয়ামী লীগেও কোনঠাসা। সঙ্গত কারণে তার সমর্থকদের অধিকাংশই আওয়ামীপন্থী। তবে তারা চান না সুলতান বিএনপির কোন জোটের প্রার্থী হন।

এ ব্যাপারে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি মনোনয়ন আর এমপি হওয়ার প্রত্যাশায় রাজনীতি করি না। আমার অপেক্ষা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনের জন্য। এসব বিষয় নিশ্চিত করা গেলে নির্বাচন কোথায় করা যায় দেখা যাবে। আন্দোলনের স্বার্থে আদর্শিক অবস্থান পরিবর্তনের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যা চায় সেটাই আদর্শ, সেটাই আদর্শিক পথ।

এদিকে, অতীতে তিন তিনবার এমপি নির্বাচিত হওয়া জাতীয় পার্টির এমপি নবাব আলী আব্বাস খান দলের উপর অভিমান করে আছেন। ভিড়েছেন কাজী জাফরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে। জোটভুক্ত নির্বাচন হলে তিনি ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন চাইবেন। তবে এরই মধ্যে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদও আলী আব্বাসের ব্যাপারে এখন অনেকটা পজিটিভ বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। ফলে নির্বাচনের আগেই ঘরের ছেলে ঘরে ফেরার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

নবাব আলী আব্বাস খান বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা মেরুকরণ চলছে। তবে আমি যে কোনো মূল্যে আগামী নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবো। অপর সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপির এম এম শাহীনেরও সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি বিএনপি এই আসনটি আমার জন্য বরাদ্দ রেখেছে এবং কেন্দ্রের নির্দেশনার আলোকে মাঠে কাজ করছি।

মৌলভীবাজার-২ আসনে সবচেয়ে বেশি প্রার্থীর ছড়াছড়ি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। জাতীয় পার্টিতেও রয়েছেন একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমান এমপি মো. আব্দুল মতিন ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সুপ্রীম কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবি আতাউর রহমান শামীম। শামীম বলেন, মনোনয়ন পেলে আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই।

এছাড়াও দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএমএ সিলেট বিভাগের সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগের ডা. রুকন উদ্দিন আহমদ, কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু, কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কামাল হাসান।

এদিকে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছে একাধিক নাম। এই আসনে ১০ম জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী ছিলেন মুহিবুল কাদির চৌধুরী পিন্টু। এবারও তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে আশাবাদী। এছাড়া অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শামীমও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এই আসনে সাবেক এমপি বিএনপির এমএম শাহীন ২০দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। পাশপাশি মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবেদ রাজাও এই আসনের মনোনয়ন পেতে মরিয়া।

 

Share this news on: