পাঁচ রানের জন্য শিরোপার স্বপ্নভঙ্গ যুবাদের

প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশের যুবারা। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। শিরোপা ছুঁই ছুঁই করেও হাতছাড়া হয় যুবাদের। মাত্র ৫ রানে ভারতের কাছে হেরে শিরোপা জয়ের আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় আকবর আলীদের। এর মাধ্যমে বাংলাদেশী যুবাদের স্বপ্নভঙ্গ করে সপ্তমবারের মতো শিরোপার ট্রফি নিজেদের করে নেয় ভারতের যুবারা।

শনিবার শ্রীলংকার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ফাইনাল ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর গতি আর শামিম হোসেনের স্পিনে কাবু হয়ে ৩২.৪ ওভারে ১০৬ রানে অলআউট হয় ভারত।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে মাত্র ১৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ০ ও পারভেজ হোসেন ইমন করেন ৫ রান। দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয় ০ এবং মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাট থেকে আস ১ রান।

পঞ্চম উইকেট জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক আকবর আলি ও শাহাদাত হোসেন। কিন্তু অধিনায়ককে একা করে দিয়ে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৪০ রান উঠতেই সাজঘরে ফিরে যান ৩ রান করা শাহাদাত। দলের সংগ্রহটা ৫০ পেরুতেই ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন শামীম হোসেন।

মাত্র ৫১ রানেই ৬ উইকেট তুলে নিয়ে তখন আত্মবিশ্বাস টইটুম্বুর ভারতীয় যুবারা। কিন্তু হাল ছাড়ার পাত্র ছিলেন না যুবা টাইগারদের অধিনায়ক আকবর। আট নম্বরে নামা স্পিনিং অলরাউন্ডার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে শেষ আক্রমণটা করেন তিনি। দুজনের জুটি এগুচ্ছিলো ভালোই, নিমিষেই যোগ হয় ২৭টি রান।

যখন জয়ের জন্য বাকি মাত্র ২৯ রান, তখন অযথাই বড় শট খেলতে গিয়ে লং অফ অঞ্চলে ধরা পড়ে যান দলীয় অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৩৬ বলে করেন ২৩ রান। এক বলই অধিনায়কের পথ ধরেন মৃত্যুঞ্জয়। তিনি ২৬ বলে ২১ রান করে ফিরে গেলে দলীয় ৭৮ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে চলে যায় বাংলাদেশি যুবারা।

জয়ে জন্য শেষ দিকে ১৭৩ বলে প্রয়োজন ছিল ২৯ রান। হাতে ছিল মাত্র ২ উইকেট। সেই অবস্থা থেকে অসাধারণ ব্যাটিং করে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান তানজীব হাসান সাকিব ও রকিবুল হাসান।

জয়ের জন্য শেষ দিকে প্রয়োজন ছিল মাত্র ৬ রান। খেলার এমন অবস্থায় পর পর দুই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৫ রানে হেরে শিরোপা বঞ্চিত বাংলাদেশ।

নিজের ৮ ওভারের স্পেলে ২ মেইডেনসহ মাত্র ২৮ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন আঙ্কোলেকার। এছাড়া আকাশ সিং ৩ এবং বিদ্যাধর পাতিল ও সুশান্ত মিশ্র নেন ১টি করে উইকেট।

এর আগে ভারত টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমেই পড়ে বিপদে। মাত্র ৮ রানে তারা হারায় ৩ উইকেট। তানজীম হাসান সাকিব ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর তোপে ভেঙে পড়ে ভারতের টপ অর্ডার।

তানজীমের বলে ভারতীয় ওপেনার অর্জুন আজাদ রানের খাতা খোলার আগেই ফেরেন প্যাভিলিয়নে। এরপর উইকেট উৎসবে যোগ দেন মৃত্যুঞ্জয়। এই বাঁহাতি পেসারের শিকার তিলক ভার্মা (২)। ওই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই আবার রান আউট হয়ে ফেরেন আরেক ওপেনার সুভেদ পার্কার (৪)।

ধাক্কাটা অবশ্য কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল যুব এশিয়া কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু শামীমের ঘূর্ণিতে আবারও এলোমেলো। এক ওভারে বাংলাদেশি স্পিনার তুলে নেন শাশ্বত রাওয়াত (১৯) ও বরুণ লাভান্দের (০) উইকেট দুটি। পরে শামীম ফিরিয়েছেন ৩৩ রান করা ধ্রুব জুরেলকেও। তার এই উইকেটের আগেই অবশ্য মাহমুদুল হাসানের থ্রোতে রান আউট হয়ে ফেরেন অথর্ভা আঙ্কোলেকর (২)।

৮২ রানে ৭ উইকেট হারানো ভারতের ১০০ রানের নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কা জন্মে শাহীন আলমের আঘাতের পর মৃত্যুঞ্জয় ম্যাচের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নিলে। যাতে ৮৪ রানে ভারত হারায় ৯ উইকেট। তবে শেষ উইকেটে করণ লাল ও আকাশ সিংয়ের জুটিতে ১০০ ছাড়ায় তাদের স্কোর। মৃত্যঞ্জয়ের শিকার হয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে করণ খেলেছেন দলীয় সর্বোচ্চ ৩৭ রানের ইনিংস।

বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার শামীম হোসেনই। তার মতো ৩ উইকেট পেয়েছেন মৃত্যঞ্জয়, ৭.৪ ওভারে তার খরচ মাত্র ১৮ রান। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন তানজীম ও শাহীন।

এর আগে বাংলাদেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেপাল ও স্বাগতিক শ্রীলংকাকে হারিয়ে বি-গ্রুপের সেরা হয়। সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ‘এ’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল আফগানিস্তান। বৃষ্টির কারণে সেমিফাইনাল ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়।

অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপে কুয়েত, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে ভারত। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ‘বি’ গ্রুপের দ্বিতীয় দল স্বাগতিক শ্রীলংকা। বৃহস্পতিবার দুটি সেমিফাইনালই বৃষ্টিতে ভেসে যায়। বাইলজ অনুযায়ী গ্রুপসেরা দু’দল ফাইনাল খেলে।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on: