সম্ভাবনাময় ভালুকার কুমির খামার

কুমির। নামটি শুনলেই ভয়ে অনেকেরই গাঁ শিউরে ওঠে। এই বুঝি ধরে ফেলল! ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক এই ভয়ঙ্কর উভচর প্রাণীটিকে। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর প্রাণীটিকেই পৌষ মানিয়ে তুলছে মানুষ। প্রাণীটিকে কেন্দ্র করে গড়ে তুলছে ব্যবসা কেন্দ্র। কারণ কুমিরের মাংস ও চামড়া অত্যন্ত মূল্যবান বলে আন্তর্জাতিক বাজারে কুমিরের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশেও রয়েছে কুমিরের বেশ কয়েকটি খামার। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ভালুকা কুমির খামার।

ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলা থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে এই কুমির খামারটির অবস্থান। দেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষের যাত্রা শুরু হয় এই গ্রাম থেকে।

বিদেশে কুমিরের চামড়া ও এর চাহিদা থাকায় ময়মনসিংহের ভালুকায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড ২০০৪ সালে কুমিরের খামারটি প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালের ৫ মে এ খামার প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। খামারের জন্য ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে আনা হয় ৭৫টি কুমির। এখানে কুমির প্রজনন ও লালন-পালন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমানে এই খামারে কুমিরের সংখ্যা প্রায় দুই হাজার।।

সবুজ শ্যামল গাছগাছালিতে ঘেরা এই গ্রামটি। এটি শহরের ব্যস্ত কোলাহল মুক্ত পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হাতিবেড় গ্রাম। এই গ্রামটিতেই রয়েছে কুমির খামার। এই কুমির খামারে গেলে মনে হবে একটি প্রাকৃতিক কুমির একুরিয়ামে এসে উপস্থিত হয়েছেন। কুমির নিয়ে আপনার যত হিংস্র ভাবনা তা নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে। এখানে আসলে আপনি দেখতে পাবেন কুমিরের সৌন্দর্য ও পানির ভিতর তাদের মনোরম চলাচল। শুরুতে এই খামারটিতে ১৩ একর জমির মধ্যে চার একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ৩২ পুকুর তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ২১ একর জায়গার উপর মোট ৪০টি পুকুর রয়েছে। রপ্তানিযোগ্য কুমিরের জন্য বিশেষ ব্যস্থায় তৈরি করা হয়েছে ৬০০টি আলাদা পুকুর। পুকুরগুলোর তলদেশ পাকা। তিন ফুট ইটের ওপর তিন ফুট কাঁটাতারের বেষ্টনী।

এ খামারকে ঘিরে প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে কুমির পালন ও বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করার জন্য চারপাশে ৪০ প্রজাতির ছয় হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। লাগানো হয়েছে কৃত্রিম ঘাসও। কুমিরের খাবার হিসেবে দেয়া হচ্ছে মাছ ও মাংস।

কুমিরের কোনো কিছুই ফেলনা নয়। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড আগে শুধু কুমির রপ্তানিতে নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখলেও এখন কুমিরের চামড়াও যাচ্ছে বিদেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় ভবিষ্যতে রপ্তানির অপেক্ষায় রয়েছে মাংস, দাঁত ও হাড়। জাপান, চীন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব চড়া দামে বিক্রি হয়। এই খামার থেকেই ২০১০ সালে জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ৬৭টি কুমির রপ্তানি করা হয়। এর মাধ্যমে প্রথম রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় নাম ওঠায় বাংলাদেশ। তাই এই খামার বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসাবে গড়ে উঠছে।

যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে ৭০ কি মি দূরত্বে অবস্থিত শিল্পনগরী ভালুকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দ্বারা খুব সহজেই ভালুকায় পৌঁছানো যায়। ভালুকা থেকে যে কোন অটোরিকশা বা সিএনজিতে উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় যাওয়া যায়।

যেখানে থাকবেন:
হোটেল তেপান্তর প্রিন্সেস, জামিরদিয়া, মাষ্টারবাড়ী, ভালুকা। ভি. আই. পি. আবাসিক গেস্ট হাউজ, পাঁচ রাস্তার মোড়, ভালুকা, ময়মনসিংহ। উত্তরা আবাসিক গেস্ট হাউজ, নতুন বাস্ট্যান্ড, ভালুকা, ময়মনসিংহ।

 

টাইমস/এসআর/এইচইউ

Share this news on: