ঘুরে আসুন ‌‘মিনি বাংলাদেশ’

আপনি যদি বাংলাদেশের সকল স্থাপনা একসাথে একটি পার্কে দেখতে চান তবে অবশ্যই চলে যেতে হবে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত মিনি বাংলাদেশে (স্বাধীনতা কমপ্লেক্স)। কি নেই এখানে? বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মিনি ভার্সন নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে মিনি বাংলাদেশ। সংসদ ভবন থেকে শুরু করে কান্তজীর মন্দির, আহসান মঞ্জিল, সুপ্রিম কোর্ট, ষাটগুম্বজ মসজিদ ইত্যাদি। মিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি রয়েছে চট্টগ্রামের সংস্কৃতির নান্দনিক উপস্থাপনা। একই স্থানে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনার স্বপ্নপুরী এই মিনি বাংলাদেশ।

চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট টার্মিনালের নিকটে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে ১১ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে মিনি বাংলাদেশ। সর্বপ্রথম এর নামকরণ করা হয় ‘শহীদ জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স’। পরে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “স্বাধীনতা কমপ্লেক্স”। এর পরিচালনার দায়িত্ব পায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু অবহেলা আর অযত্নে এর সৌন্দর্য প্রায় বিলীন হওয়ার পথে যাচ্ছিল। সম্প্রতি নতুন ব্যবস্থাপনায় পুনরায় সজ্জিত হয়েছে মিনি বাংলাদেশে।

পার্কটিতে ঢুকতেই দেখা মিলবে জাতীয় সংসদ ভবন এবং তৎসংলগ্ন লেক। লেকে বিশাল বিশাল রাজহাঁস ভাসছে। তার পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এর পাশ ঘেঁষে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কার্জন হল। মুসলিম দর্শনার্থীরা ঘুরতে ঘুরতে নামাজের সময় হয়ে গেলে সোনা মসজিদটি খুঁজে নিলেই হলো। এই বিখ্যাত স্থাপনাটিই কমপ্লেক্সের মসজিদ। ভেতরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ঢাকার সদরঘাটের আহসান মঞ্জিল, ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, বাগেরহাটের সোনা মসজিদ, বড় কুঠি, ছোট কুঠি, রংপুরের পাহাড়পুর বিহার, সেন্ট নিকোলাস চার্চ, ঢাকার লালবাগ কেল্লা, দরবার হল ও হাইকোর্ট বিল্ডিং।

কমপ্লেক্সটির পরতে পরতে রয়েছে বিস্ময়। এতে রয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ট্রাইবাল হাউজ মডেল। প্রতিটি বিভাগের বাড়িঘরের মডেলসহ রয়েছে উপজাতিদের বাসস্থানের মডেল। পেছনের দিকে একটি কৃত্রিম ঝরনা রয়েছে। কমপ্লেক্সের এক দিকে গড়ে তোলা হয়েছে অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। তাতে মজার মজার বিভিন্ন রাইড উপভোগ করতে পারবেন।

এছাড়াও এখানে রয়েছে আধুনিক স্থাপত্যের ছোঁয়ায় তৈরি প্রায় ২৫০ ফুট উচ্চতার ঘূর্ণায়মান ‘রিভলভিং রেস্টুরেন্ট’। যার নাম স্বাধীনতা স্তম্ভ। এখানে উঠলেই এক দৃষ্টিতে আসবে সমগ্র চট্টগ্রাম। এখান থেকে পুরো চিটাগাং এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন প্রাণ ভরে। দেখা যাবে হাইকোর্ট, দরবার হলসহ অনেক কিছু। পার্কটিতে রয়েছে ঝরনা, ৫টি পানির ফোয়ারা। পার্কের ভিতরে শিশুদের জন্য আছে পৃথক তিনটি কিডস জোন।

প্রবেশ মূল্য:

যেকোনো সরকারী ছুটি ছাড়া সপ্তাহের সাতদিনই বেলা ১১টা থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে। প্রবেশ মূল্য ১৫০ টাকা।

কিভাবে যাবেন:

ঢাকা থেকে সড়কপথে টি আর ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রিনলাইন পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের এসি বাস যায় চট্টগ্রামে। ভাড়া ৯৫০ থেকে ১,২৫০ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের সাধারণ মানের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।

রেল পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে মহানগর প্রভাতী ঢাকা ছাড়ে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে, চট্টলা এক্সপ্রেস সকাল ৯টা ২০ মিনিটে, মহানগর গোধূলি ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৩ টায়, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ঢাকা ছাড়ে বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে, তূর্ণা ছাড়ে রাত এগারোটায়। শ্রেণি ভেদে ভাড়া ১৩৫ থেকে ১,০৯৩ ভাড়া।

এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় চট্টগ্রামে।

এছাড়া দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দমত বাসে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসতে পারেন।

চট্টগ্রাম থেকে মিনি বাংলাদেশ:

চট্টগ্রাম শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে কালুরঘাট মিনি বাংলাদেশ পার্কে যাওয়া যায়।স্থান ভেদে ভাড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সিটি বাসে করে যেতে চাইলে শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে কালুরঘাটের বাসে উঠলেই পার্কের সামনে এনে নামিয়ে দিবে। ভাড়া অবস্থান ভেদে ৭ থেকে ২০টাকা।

থাকার ব্যবস্থা:

থাকার জন্য চট্টগ্রামে রয়েছে বেশ কিছু ভালোমানের আবাসিক হোটেল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- হোটেল গোল্ডেন ইন (০৩১-৮১৩৫৯৮/৭২৭২৯৯), হোটেল টাওয়ার ইন ইন্টা: লি (০৩১-৮৪২৬৯১-২), হোটেল লর্ডস ইন প্রা: লি (০৩১-২৫৫২৬৭১-৪), হোটেল সিলমুন প্রা: লি (০৩১-৬২৮৩০২/৮৪০৭৫৫), সেঞ্চুরি পার্ক লি (০৩১-২৫৫০৩১৩), হোটেল প্যারামাউন্ট, (০৩১-২৮৫৬৭৭১, ০১৭১-৩২৪৮৭৫৪), হোটেল এশিয়ান এস আর (০১৭১১-৮৮৯৫৫৫), হোটেল সাফিনা (০৩১-০৬১৪০০৪), হোটেল নাবাইন (০১৭৫৫৫৬৪৩৮২), হোটেল ল্যান্ডমার্ক (০১৮২-০১৪১৯৯৫, ০১৭৩১-৮৮৬৯৯৭)

কোথায় খাবেন:

যদি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবার চেখে দেখতে চান তবে আপনার জন্য রয়েছে সুখবর! ঐতিহ্যবাহী খাবারে চট্টগ্রাম বেশ সমৃদ্ধ। আর এ জন্য চলে যেতে পারেন হোটেল জামান-এ। আর মেজবানি খেতে চাইলে চলে যেতে পারেন চকবাজারে অবস্থিত ‘মেজবান হাইলে আইয়্যুন’ রেস্তোরায়। এছাড়াও চট্টগ্রাম শহরে ছড়িয়ে আছে বেশকিছু ভাল মানের রেস্টুরেন্ট এদের মধ্যে বারকোড ক্যাফে, মিলেঞ্জ রেস্টুরেন্ট, গ্রিডি গাটস, ক্যাফে ৮৮, সেভেন ডেইজ, ধাবা, হান্ডির নাম, গলফ গার্ডেন রেস্টুরেন্ট, কোষ্টাল মারমেইড রেস্টুরেন্ট এন্ড লাউঞ্জ, বোনানজা পোর্ট রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

আশেপাশের দর্শনীয় স্থান:

চট্টগ্রামের খুব পাশে হওয়ায় মিনি বাংলাদেশ ঘুরেও হাতে আরো বেশ কিছু সময় থেকে যাবে।এই সময়ে আশপাশে আরো কিছু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। মিনি বাংলাদেশের আশে পাশে ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- গুলিয়াখালী সৈকত, বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত, চন্দ্রনাথ মন্দির ও পাহাড়, ঝরঝরি ঝর্ণা, মহা মায়ালেক, খৈয়াছড়া ঝর্না, নাপিত্তা ছড়া ঝর্ণা, সহস্রধারা ঝর্ণা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন...

চট্টগ্রামের খেজুরতলা বীচ

 

টাইমস/এএস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ইরানে ইসরায়েলি হামলা, লাফিয়ে বাড়ল তেল ও স্বর্ণের দাম Apr 19, 2024
img
ঢাকাসহ ৬ বিভাগে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস Apr 19, 2024
img
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এলেন আরও ১৩ বিজিপি সদস্য Apr 19, 2024
img
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র Apr 19, 2024
img
ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ভোট শুরু Apr 19, 2024
img
ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল Apr 19, 2024
img
রেমিট্যান্স উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি : সমাজকল্যাণমন্ত্রী Apr 18, 2024
img
ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম, ভ‌রি‌ ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৩৮ টাকা Apr 18, 2024
img
গবেষণায় বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া শিশুখাদ্য সেরেলাক নিয়ে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য Apr 18, 2024
img
আ.লীগের এমপি-মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনদের উপজেলা নির্বাচন করতে মানা Apr 18, 2024