আতিয়া মসজিদের কাহিনি

বাংলাদেশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বহু ধর্মীয় স্থাপনা। যেগুলো শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ঐতিহ্য ধারণ করে আছে। এমনই একটি মুসলিম স্থাপনা টাঙ্গাইলের আতিয়া মসজিদ।

আতিয়া মসজিদের অবস্থান টাঙ্গাইল জেলা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া গ্রামে। মসজিদের পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে লোহজং নদী। সুলতানি ও মোঘল রীতির সমন্বয়ে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

মসজিদটির নির্মাণ ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়, তৎকালীন সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ আলি শাহান শাহ্ বাবা আদম কাশ্মিরী (র.) নামে একজনকে টাঙ্গাইলের জায়গীরদার নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ওই এলাকা আফগানের কররানী শাসক সোলাইমান কররানী কাছ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচার ও ব্যয় নির্বাহের জন্য ওয়াকফ হিসেবে পান আদম কাশ্মিরী (র.)। আর দান হিসেবে পাওয়ায় এই অঞ্চলের নাম হয়ে ওঠে আতিয়া। কারণ আতিয়া শব্দের উৎপত্তি আরবি আতা থেকে। যার অর্থ ‘দানকৃত’।

পরবর্তীতে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর আদম কাশ্মিরীর একনিষ্ঠ ভক্ত সাঈদ খান পন্নীকে এই অঞ্চলের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই ১৬০৮ সালে এই বিখ্যাত আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন। ঐতিহাসিক এই মসজিদের স্থপতি হিসেবে কাজ করেন মুহাম্মদ খাঁ নামক এক ব্যক্তি।

১৮০০ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটির ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১৮৩৭ সালে রওশন খাতন চৌধুরাণী ও ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ গজনবী মসজিদটির সংস্কার করেন। বর্তমানে মসজিদটির তত্ত্বাবধানে রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।

তবে মসজিদটির নির্মাণ সম্পর্কে ওই অঞ্চলে প্রাপ্ত দুইটি শিলালিপিতে দুই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত শিলালিপিতে নির্মাণকাল ১৬১০-১১ সালে এবং কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথে স্থাপিত অন্যটিতে নির্মাণকাল উল্লেখ করা হয়েছে ১৬০৮-০৯ সালের দিকে।

ঐতিহাসিক এই মসজিদটির আকার দৈর্ঘ্য-প্রস্থে মাত্র ৫৯ফুট/৪০ ফুট এবং দেয়াল ২.২৩ মিটার প্রশস্ত। এতে একটি বড় ও তিনটি ছোট গম্বুজ রয়েছে। চারকোনে রয়েছে চারটি অষ্টকোনাকৃতির মিনার।

মসজিদটি পূর্বদিকে রয়েছে খিলানবিশিষ্ট তিনটি প্রবেশপথ।এইট তিনটি পথ দিয়ে প্রধান প্রার্থনা কক্ষে প্রবেশ করা যায়। মাঝখানেরটি দুপাশের থেকে কিছুটা উঁচু। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দিকে আরো দুটি করে প্রবেশ পথ রয়েছে। এই মসজিদে ধনুকবক্রাকৃতির কার্নিশ একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট। পশ্চিম দেয়ালের শীর্ষে রয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সংবলিত প্রহরা দেয়াল।

মসজিদটির পূর্ব ও উত্তর দেয়ালে রয়েছে টেরাকোটা ও ইট খোদাই করা চমৎকার নকশা। রয়েছে অসংখ্য ফুলের নকশা, চক্রাকার রোজেট, জ্যামিতিক নকশা ইত্যাদি।

প্রতিদিনই অসংখ্য মুসল্লি নামাজ আদায় করেন এখানে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মসজিদটি দেখতে পাড়ি জমান পর্যটকরা।

যাওয়ার উপায়: ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসযোগে যাবেন টাঙ্গাইল শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে। এজন্য বেশ কয়েকটি পরিবহন বাস রয়েছে। ভাড়া পড়বে ১২০ থেকে ২০০ টাকা। পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে যাবেন ইজিবাইক বা রিক্সা করে পাথরাইল বটতলা। সেখান থেকে রিক্সা, ইজিবাইক বা হেঁটে যেতে পারবেন আতিয়া মসজিদ।

থাকার ব্যবস্থা: টাঙ্গাইলে রয়েছে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। যার মধ্যে রয়েছে পলাশ হাউজ রেসিডেন্সিয়াল হোটেল, আল ফয়সাল রেসিডেন্সিয়াল হোটেল, হোটের সাগর রেসিডেন্সিয়াল, আফরিন হোটেল, সুগন্ধা হোটেল উল্লেখ্যযোগ্য।

খাবার: খাবার জন্যও টাঙ্গাইল শহরে পাবেন বেশ কিছু হোটেল ও রেস্টরেন্ট।

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুনের মধ্যেই ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী Mar 29, 2024
img
বাজারে বেড়েছে মাংসের দাম, সবজিতে স্বস্তি Mar 29, 2024
img
বিএনপির ৮০ ভাগ নিগৃহীত নেতাদের তালিকা দিতে হবে : ওবায়দুল কাদের Mar 29, 2024
img
জায়েদ খানের নায়িকা হচ্ছেন টালিউডের পূজা ব্যানার্জি Mar 29, 2024
img
বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর পৌনে ৪ কিলোমিটার দৃশ্যমান Mar 29, 2024
img
আজ ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ Mar 29, 2024
img
দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ Mar 29, 2024
img
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে সর্বোচ্চ রেকর্ড Mar 28, 2024
img
দূষণের কারণে বছরে পৌনে ৩ লাখ বাংলাদেশির মৃত্যু Mar 28, 2024
img
আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক Mar 28, 2024