ইফতারে খেজুর খান, সবল থাকুন

শুরু হলো মহিমান্বিত মাস রমজান। মুসলিম বিশ্বে পুরো মাসটিতে পবিত্র আবহ বিরাজ করে। এ মাসে মানুষের দৈনন্দিন রুটিনে যেমন পরিবর্তন আসে তেমনি পরিবর্তন আসে প্রতিদিনের খাবার মেন্যুতে। সারাদিন রোজার শেষে ইফতারকে ঘিরেই থাকে সবচেয়ে বড় আয়োজন। ইফতারে কী থাকবে কী থাকবে না এ নিয়ে সবাই বেশ সচেতন থাকেন। তবে আর যাই রাখুন, না রাখুন একটি আইটেম রাখেন সবাই, আর তা হলো খেজুর। কিন্তু কেন খেজুরের এই সমাদর? কী আছে মরুর ফল খেজুরে? আসুন জেনে নেওয়া যাক-

খেজুরের পুষ্টি গুন:

খেজুর পরিচিত একটি সুস্বাদু ফল। যা ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়।খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি। যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।

 

ইফতারে কেন খেজুর রাখবেন?

হৃদরোগের ঝুকি কমায়: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।এছাড়া হৃৎপিণ্ডের সবচেয়ে নিরাপদ ওষুধ খেজুর।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: নিয়মিত খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। খেজুরে এমন সব পুষ্টিগুণ রয়েছে যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এর ফাইবার হজম শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি পাকস্থলিকে ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ: পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ও প্রাকৃতিক আঁশে পূর্ণ খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাই যারা নিয়মিত খেজুর খান, তাদের বেলায় ক্যান্সারের ঝুঁকিটাও অনেক কম থাকে।

উচ্চ রক্তচাপ: খেজুরে থাকা আয়রন ও ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।প্রচুর পটাসিয়াম পাওয়া যায় খেজুর থেকে। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া মাত্র কয়েকটি খেজুর ক্ষুধার তীব্রতা কমিয়ে দেয় এবং পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অল্পতেই শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে।

 

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়: মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ায় খেজুর। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য খেজুর খুবই উপকারী। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গ্লুকোজের পাশাপাশি প্রাকৃতিক চিনি পাওয়া যায় খেজুর থেকে যা এনার্জি বাড়ায়। খেজুরে থাকা ভিটামিন সি ও ডি ত্বক ভালো রাখে। এছাড়া খেজুর দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে রাতকানা প্রতিরোধেও সহায়ক।

মায়ের বুকের দুধ:

খেজুর বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য সমৃদ্ধ এক খাবার, যা মায়ের দুধের পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয় এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।এছাড়া ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়ক। আর খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে।

সংক্রমণ রোধ: যকৃতের সংক্রমণে খেজুর উপকারী। এ ছাড়া গলাব্যথা এবং বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি ও ঠাণ্ডায় বেশ কাজ দেয়। এছাড়া অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।

শিশুদের রোগবালাই: খেজুর শিশুদের মাড়ি শক্ত করতে সাহায্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ করে। তাই শুধু রমজান মাসে কেন, বছরজুড়েই খাদ্য তালিকায় রাখা যায় খেজুর।

শরীরের তাপ বজায় রাখে: খেজুরে বিপুল পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং ম্যাগনেশিয়াম থাকার কারণে এটি শরীর গরম রাখতে খুব সাহায্য করে।  

ঠাণ্ডা কমায়: ঠাণ্ডায় খুব হাঁচি-কাশি হচ্ছে- চিন্তা নেই। এখনই ২-৩ টে খেজুর, কিছুটা মরিচ আর ১-২ টা এলাচ নিয়ে গরম পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওই পানি খেয়ে নিন। ঘুম থেকে উঠে দেখবেন ঠান্ডা কমে গেছে।  

অ্যাজমা সারায়: শীতে যে রোগগুলো খুব মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তার মধ্যে অন্যতম হল হাঁপানি বা অ্যাজমা। প্রতিদিন সকাল-বিকাল নিয়ম করে ১-২ টা খেজুর খান। দেখবেন শীতকালে আর হাঁপানি হচ্ছে না আপনার। 

শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে: খেজুরে যেহেতু অনেক পরিমাণে প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকে, তাই এই ফলটি খেলে নিমিষে শরীরের শক্তি বেড়ে যায়। 

আর্থারাইটিস কমায়: শীতে যারা আর্থ্রারাইটিসের সমস্যায় খুব ভোগেন তারা আজ থেকেই খেজুর খাওয়া শুরু করুন। এতে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ থাকার কারণে আর্থ্রারাইটিসের ব্যথা কমাতে এটা দারুন কাজে দেয়।

 

টাইমস/এমএস

 

 

 

 

Share this news on: