ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি মারা গেছেন। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হওয়ায় গত ৯ আগস্ট নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এআইআইএমএস) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল অরুণ জেটলিকে। সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
চিকিৎসকদের একটি দল সার্বক্ষণিক নজর রাখছিলেন তার ওপর। সেই অবস্থাতেই শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৭ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর।
দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ অরুণ জেটলি। ডায়াবেটিসের রোগী তিনি। অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন গতবছর কিডনি প্রতিস্থাপনও হয় তার। যে কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে অন্তর্বর্তী বাজেটের সময় সংসদে উপস্থিত থাকতে পারেননি। শারীরিক অসুস্থতার জেরে মে মাসেও এক বার এআইআইএমএসে ভর্তি হন জেটলি। সেই থেকে সক্রিয় রাজনীতিতে সেভাবে আর দেখা যায়নি তাকে।
এ বছর লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় ফিরলেও, মন্ত্রিত্ব নিতে রাজি হননি জেটলি। প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ তিনি। চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাই এ বার নিজের জন্য একটু সময় চান। নতুন সরকারে তাকে কোনও দায়িত্ব না দিলেই ভালো। তবে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে গেলেও, সোশ্যাল মিডিয়ায় বরাবরই সক্রিয় অরুণ জেটলি। মোদি সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের পক্ষে নিয়মিত সমর্থন জানাতেন তিনি।
অরুণ জেটলির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে। তার বাবা মহারাজ কিষাণ জেটলিও ছিলেন একজন আইনজীবী। হিসাব বিজ্ঞানে পড়াশোনার পর দিল্লি ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন অরুণ জেটলি। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের নেতা ছিলেন তিনি। দিল্লি ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদের সভাপতিও ছিলেন।
আনন্দবাজার জানায়, ১৯৭৬ সালে ভারতে জরুরি অবস্থার সময় জেলখানায় রাজনীতির হাতে খড়ি হওয়া আইনজীবী অরুণ জেটলি জেল খেটেছেন ১৯ মাস। আর সেই ১৯ মাসেই এমন এমন রাজনৈতিক গুরুদের সংস্পর্শে আসেন তিনি, যে তার জীবনদর্শনই বদলে যায়। তালিকায় ছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদভানি, নানাজি দেশমুখের মতো প্রবাদ প্রতিম নেতারা। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর এবিভিপির সর্বভারতীয় সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওকালতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে রাজনীতিকেও ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন তিনি।
রাজনীতিকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিলেও, নির্বাচনে লড়ার ক্ষেত্রে অবশ্য ততটা সাফল্য পাননি অরুণ জেটলি। অরুণ জেটলি নিজে অবশ্য শেষ বার ভোটে জিতেছিলেন ১৯৭৪ সালে দিল্লির ছাত্র সংসদের নির্বাচনে। তারপর থেকে তিনি চলে গিয়েছিলেন মঞ্চের পিছনে। পরের চার দশক ধরে তিনি ‘ব্যাকরুম স্ট্র্যাটেজিস্ট’। বহু নির্বাচনেই দলের হয়ে রণকৌশল এবং প্রচার কৌশল তৈরির কারিগর ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজে ভোটে লড়েননি।
গত লোকসভা নির্বাচনে অর্থাৎ ২০১৪ সালে দেশ জুড়ে প্রবল মোদি ঝড়। কিন্তু তা অরুণ জেটলিকে ভোটে পাস করাতে পারেনি। পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে ভোটে লড়ে পরাজিত হন তিনি। তাতে অবশ্য মোদি বা দলের কাছে তার গুরুত্ব কমেনি। প্রথম মোদি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও ছিল অরুণ জেটলির কাঁধে। কিন্তু শরীরে বাসা বেঁধেছিল মারণ রোগ। একটু একটু করে সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরেও আসতে থাকেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২০১৯ সালের ভোটে আর দাঁড়াননি তিনি।
টাইমস/এসআই