দেশের আলোচিত বালিশকাণ্ডকে পেছনে ফেলে সামনে আসছে একের পর এক দুর্নীতির চিত্র। এবার তাতে যোগ হলো দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেবিলসহ আসবাবপত্র ক্রয় দুর্নীতির বিষয়টি। এই হাসপাতালে প্রতিটি টেবিল দুই হাজার ২০০ টাকা দরে কেনা হলেও বিল ভাউচারে ২৫ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের পাঁচটি টেবিল, চারটি পাদানি ও একটি সেক্রেটারি টেবিল কেনার জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে প্রতিটি টেবিল ২৫ হাজার টাকা এবং একটি সেক্রেটারি টেবিল ৭৫ হাজার টাকায় কেনার হিসাব দেখিয়ে হাকিমপুর উপজেলার মেসার্স বিদ্যুৎ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ভাউচার জমা দিয়ে দুই লাখ টাকা তুলে নেন ডা. খায়রুল ইসলাম।
তবে এ বিষয়ে বিলে দেখানো ফার্নিচার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনও ধরনের আসবাবপত্র সরবরাহ করেননি।
তবে হাসপাতালের সামনের বেলাল ফার্নিচারের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেন জানান, নবাবগঞ্জ উপজেলা ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম এ বছরের ১৯ অক্টোবর মেহগনি কাঠের ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য, ২ ফুট ৫ ইঞ্চি প্রস্থ এবং ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার ৫টি টেবিল আমার কাছ থেকে কিনেছেন। প্রতিটি টেবিলের মূল্য নিয়েছি দুই হাজার ২০০ টাকা করে এবং প্রতিটি পাদানির মূল্য ছিল এক হাজার ২০০ টাকা।
জানা গেছে, ডা. খায়রুল ইসলাম নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন গতবছরের ৪ সেপ্টেম্বর। তিনি হাসপাতালের কোয়ার্টারের একটি বাসায় বসবাস করছেন। তার ঘরে লাগানো রয়েছে একটি এসি। বিধি অনুযায়ী তাকে বাড়ি ভাড়া বাবদ ১৩ হাজার ৮০০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেওয়া তথ্যে দেখা গেছে তিনি এ বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে শুধুমাত্র একটি সিটের ভাড়া বাবদ মাত্র এক হাজার ৩৮০ টাকা জমা দিচ্ছেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স নিগার সুলতানা, ফিরোজা বেগমসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, ডা. খায়রুল ইসলাম হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। সিনিয়র নার্সদের তাচ্ছিল্য করে ‘ওল্ড এজেজ’ বলে মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, ডা. খায়রুল ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতিতে সায় না দিলে তিনি বিভিন্নভাবে হুমকি দেন।
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্টোর কিপার নূরে আলম সিদ্দিক এবং মেডিকেল টেকনোলজিস্ট মাহমুদ শরীফ অভিযোগ করেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. খায়রুল ইসলাম ডেঙ্গুর কিট, বিপি মেশিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জমা দেননি। চাকরির ভয় দেখিয়ে জোর করে তাদের কাছ থেকে স্টক লেজারে জমা দেখিয়ে স্বাক্ষর নিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খায়রুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি কর্মস্থলে একেবারেই নতুন, মেডিকেল কলেজের শিক্ষকতা পেশা থেকে এখানে এসেছি। আমি কখনও কোনও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করিনি, যার কারণে এ বিষয়ে পূর্বের কোনও অভিজ্ঞতা আমার ছিল না। এ কারণেই আমি যা কিছু করেছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অফিস সহকারী সমর কুমার দেবের পরামর্শে করেছি।
অভিযোগের বিষয়ে দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ড. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খায়রুলের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে। এছাড়া সরকারি চাকরি করে তিনি কখনও কাউকে নিয়ে কটূক্তি করতে পারেন না। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
টাইমস/এমএস