সপ্তাহ না যেতেই সড়কের পিচকার্পেটিং মানুষের হাতে হাতে

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলাবাজার-কালীগঞ্জ উপজেলার নীমতলা বাজার সড়কের পিচকার্পেটিং দুদিন না যেতেই উঠে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। এঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে অনেকেই পিচকার্পেটিং হাত দিয়ে তুলে ফেলেছেন। এদিকে স্থানীয়দের থাকাতে ও অনিয়ম ধাপা চাপা দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের একটি সুত্র জানায়, ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির মজবুতিকরণসহ ডিবিএস ওয়ারিংকোর্স করণের জন্য ২০ কোটি ৫৪ লাখ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়। খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ সর্বনিন্ম দরদাতা হিসেবে কাজটি পায়। ওই প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে গত বছরের ২৮ নভেম্বর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। সে মোতাবেক চলতি বছরের ২৭ মে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু নানা অজুহাতে যথাসময়ে কাজটি শেষ করা হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ সড়কের টেন্ডার খুলনার মোজাহার এন্টারপ্রাইজ পেলেও মোটা টাকার বিনিময়ে কাজটি কিনে নিয়েছেন ঝিনাইদহের স্থানীয় ঠিকাদার মেসার্স মিজানুর রহমান মাসুম। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সড়কটির মজবুতিকরণ কাজ শেষ না করেই পিচকার্পেটিং করা হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির কারণে তড়িঘড়ি করে নামকাওয়াস্তে বিটুমিন দিয়ে রাস্তাটির কার্পেটিং করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যে কারণে এক সপ্তাহ না যেতেই সড়কের পিচকার্পেটিং উঠে যেতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক থেকে পিচকার্পেটিং হাত দিয়েই তুলে ফেলছেন। অনেকেই সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এসব অনিয়মের প্রতিবাদে এরই মধ্যে স্থানীয়রা ওই সড়কের পিচকার্পেটিংয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের সূত্রটি জানায়, এরই মধ্যে ওই সড়কের কাজ বাবদ কয়েক কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।

এব্যাপারে ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপদ বিভাগ ঝিনাইদহের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মকুল জ্যোতি বসু বলেন, কাজটির তদারকিতে কোনো ঘাটতি হয়নি। সড়কটির প্রকৃত ঠিকাদার খুলনার মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। তবে কাজটি করছেন স্থানীয় ঠিকাদার মেসার্স মিজানুর রহমান মাসুম। মজবুতিকরণের কাজ শেষে সড়কটিতে এখন পিচ কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। বৃষ্টির কারনে সড়কের কার্পেটিং করা ৩ কিলোমিটার পিচ উঠে গেছে। সে গুলো পুনঃরায় মেরামত করা হবে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ কাজ সঠিক ভাবে বুঝে নেবো।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মিজানুর রহমান মাসুমের মালিক মিজানুর রহমান মাসুম বলেন, মজবুতিকরণে কাজে কোনো অনিয়ম করা হয়নি। ওই কাজের জন্য আট কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। পিচকার্পেটিং বা ওয়ারিংকোর্স করার সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হওয়ায় তিন কিলোমিটার সড়কে সমস্যা হয়ে গেছে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে প্রতিদিন। আবহাওয়া ভালো হয়ে গেলে পিচকার্পেটিং উঠে যাওয়া তিন কিলোমিটার সড়কে আবার কাজ করা হবে।

এদিকে গত মঙ্গলবার বিকালে দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সড়কটির বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেছেন।

এ সময় দুদকের যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুস সাদাত বলেন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সড়কটিতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে সড়ক বিভাগের খুলনা জোন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বেশ কয়েকটি ঠিকাদার সিন্ডিকেট। খুলনার মোজাহার এন্টার প্রাইজ লিমিটেড (জেভি) তাদের মধ্যে অন্যতম। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের অধিকাংশ কাজ এই প্রতিষ্ঠানটিই করে আসছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, কাজ না করেই বিল উত্তোলনসহ একাধিক অভিযোগ আসলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সড়ক বিভাগ।

নানা কৌশলে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ও ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের অন্যান্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। যে কারণে খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন ধরণের সড়ক সংস্কার, নির্মাণ ও সংরক্ষণে প্রতিবছর খরচ বাড়ছে। তবে খরচ বাড়লেও তার কার্যকর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

 

টাইমস/এফএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কোভিড টেস্টে স্বস্তি, কমল পরীক্ষার খরচ Jul 04, 2025
img
মালদ্বীপে বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাসপোর্ট ইস্যু ও সংশোধনে নতুন নির্দেশনা Jul 04, 2025
img
বাবার মৃত্যুর পর ‘কৃষ্ণারাজ’ পেল রনবীর, আর ঋদ্ধিমা! Jul 04, 2025
img
একাধিক ইস্যু নিয়ে ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপ Jul 04, 2025
img
বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে হতবাক টাইগারদের সাবেক কোচ Jul 04, 2025
img
যুক্তরাজ্যে ভিন্ন নামে অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন নেতানিয়াহুর ছেলে! Jul 04, 2025
img
‘তদন্ত ছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের শাস্তি দেওয়া যাবে না’ Jul 04, 2025
img
মাম্মুট্টির অভিনয় যাত্রা এখন কলেজের পাঠ্যসূচিতে Jul 04, 2025
img
নির্বাচন পদ্ধতি বদল নিয়ে রাজনীতিতে জটিল সমীকরণ, বাড়ছে মতবিরোধ Jul 04, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযানে চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড Jul 04, 2025
img
জোতার মৃত্যুতে কাঁদছে ফুটবল বিশ্ব Jul 04, 2025
img
হঠাৎ অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি স্বস্তিকা দত্ত Jul 04, 2025
img
ভিয়েতনামের পণ্যে শুল্ক ছাড়, আলোচনা করতে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা Jul 04, 2025
img
ওয়ানডে ও টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করা তারকাদের দলে গিল Jul 04, 2025
img
গাজার মানুষ নিরাপদে থাকুক, এটাই চাই : ট্রাম্প Jul 04, 2025
img
দেশের বাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম Jul 04, 2025
img
পাবনায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩ Jul 04, 2025
img
কেন পরিচালকের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন পরেশ রাওয়াল? Jul 04, 2025
img
হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৬৪ হাজার ৮৬৪ হাজি Jul 04, 2025
img
ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি কমলেও বেড়েছে রপ্তানি ও রাজস্ব আয় Jul 04, 2025