আগামীকাল ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তদানীন্তন রেসকোর্স ময়দান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন।

এ দিন লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন ও দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও এদিন বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সকল শাখা কমিটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ স্মরণ করবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের এই ভাষণকে ইতোমধ্যে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। এ ভাষণ বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষের গৌরব সম্মান আরেকবার আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিক-নির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর এই বজ্রনিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্খিত মুক্তির লক্ষ্যে।

১৯৪৭ সালে ধর্মীয় চিন্তা, সাম্প্রদায়িকতার মানসিকতা ও দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে গঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতিসত্তা, জাতীয়তাবোধ ও জাতিরাষ্ট্র গঠনের যে ভিত রচিত হয় তারই চূড়ান্ত পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর ছাত্র-কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের বাঙালি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

এর আগে একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে গর্জে ওঠে উত্তাল জনসমুদ্র। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী শ্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পত পত করে ওড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লাখো শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয় আকাশে।

পরের দিন প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকা থেকে জানা যায়, সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আসেন বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির কণ্ঠে ‘তোমার দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ, তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। তিনি দরাজ গলায় তার ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি…।’

এরপর জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বাংলা ও বাঙালির স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম…, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান।

বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রীত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র-মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করবো। আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত।’

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দু’টি বাক্য, যা পরবর্তীতে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।’

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিক্রি করে দিচ্ছে পাকিস্তান Dec 04, 2025
img

বিডিআর তদন্ত রিপোর্ট

৫ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা প্রকাশ Dec 04, 2025
img
ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত করেছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস Dec 04, 2025
img
আকাশে দেখা মিলবে বছরের শেষ সুপারমুন Dec 04, 2025
img
গণতন্ত্র ও উন্নয়নের স্বার্থে ধানের শীষকে বিজয়ী করুন : সালাহউদ্দিন আহমদ Dec 04, 2025
img
পাবনার সেই মা কুকরটিকে দেয়া হলো দুটি নতুন ছানা Dec 04, 2025
img
সরকারের অনুমোদিত সংস্থা ফোনে আড়ি পাতবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 04, 2025
img
তফসিল ঘোষণার আগে ফের সংশোধন হচ্ছে আরপিও Dec 04, 2025
img
ভারতকে ৪ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে সমতা আনল দক্ষিণ আফ্রিকা Dec 03, 2025
img
পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে 'উগ্র ইসলামিস্ট' বলে অভিহিত করলেন ইমরান খানের বোন Dec 03, 2025
img
‘রাক্ষস’ কি ছাড়াতে পারবে ‘বরবাদ’? মন্তব্য প্রযোজকের Dec 03, 2025
img
ওটিটি অভিষেকেই সাড়া ফেললেন রাজকুমারের ছেলে বীর হিরানি Dec 03, 2025
img
পটিয়ায় যুবলীগ নেতা সায়েম গ্রেপ্তার Dec 03, 2025
img

হিরো আলমকে হামলা

রিয়াজ-মিথিলার জামিন বাতিল, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি Dec 03, 2025
img
গাইবান্ধায় সার ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন Dec 03, 2025
img
৫০ কোটি রুপি পারিশ্রমিক দাবি করলেন ধানুশ Dec 03, 2025
img
৯ জানুয়ারিতে মুখোমুখি বিজয় ও প্রভাসের দুই সিনেমা Dec 03, 2025
img
বেগম জিয়ার চিকিৎসায় হাসপাতালে চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল Dec 03, 2025
img
দিনাজপুর চিরিরবন্দরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ Dec 03, 2025
img
নরসিংদীতে জামায়াতের নির্বাচনী সভায় হামলার অভিযোগ, আহত ৩০ Dec 03, 2025