যেভাবে জাহাজ যাবে ঢাকা  থেকে কলকাতা

বিমান, ট্রেনে বা বাসে চড়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আসা-যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল আগে থেকেই। তবে  নৌপথে সাধারণ যাত্রীদের বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল না। এবার সেই বাধা দূর হতে যাচ্ছে। ২৯ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে চালু হতে যাচ্ছে নৌযান যাত্রীসেবা। এদিন রাতে ঢাকা ছাড়বে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের জাহাজ এমভি মধুমতি। একইভাবে কলকাতা নৌবন্দর থেকে বাংলাদেশের দিকে রওনা হবে ভারতীয় একটি নৌযান।

বুধবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) এক বিজ্ঞপ্তি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

যেভাবে যাবে জাহাজ

বিআইডব্লিউটিসি’র উপমহাব্যবস্থাপক(বাণিজ্য/যাত্রী) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বাংলাদেশ টাইমসকে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ২৯ মার্চ পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজটি কলকাতা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক ভ্রমণপ্রত্যাশী নিবন্ধন করেছেন। ভিসাসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তাদের কাছে টিকেট বিক্রি করা হবে।

যাত্রীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, স্থল ও আকাশ পথে যেভাবে ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, ঠিক একইভাবে নৌপথেও ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন  করা হবে। এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা কোনো ভোগান্তির শিকার হবে না।

খালেদ নেওয়াজ আরো বলেন, সরকার এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচলের প্রাথমিক একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার ছাড়াও অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ রুটে জাহাজ পরিচালনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানও এ রুটে জাহাজ পরিচালনা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে।

এমভি মধুমতি আগে ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করত। এখন এটি ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা রুটে চলাচল করবে।

এতে যাত্রীদের কোনো দুর্ভোগ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমভি মধুমতি ছাড়াও এ রুটে আরও জাহাজ রয়েছে। তাই যাত্রীরা ভোগান্তির  শিকার হবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া দুটি নতুন জাহাজ তৈরি করার জন্য চুক্তি হয়েছে। জাহাজ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে এ রুটের জাহাজের ঘাটতি পূরণ হবে।

ঢাকা-কলকাতা ভাড়ার তালিকা

১. কেবিন ফ্যামিলি স্যুট(দুজন) ১৫ হাজার টাকা

২. প্রথম শ্রেণি(যাত্রীপ্রতি) ৫ হাজার টাকা

৩. ডিলাক্স শ্রেণি(দুজন) ১০ হাজার টাকা

৪. ইকোনমি চেয়ার(যাত্রীপ্রতি) ৮ হাজার টাকা

৫. সুলভ শ্রেণি বা ডেক(যাত্রীপ্রতি) ১৫০০ টাকা

খাবারের ব্যবস্থা

জাহাজে প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ, বিকালের নাশতা, রাতের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। তবে এসব খাবার যাত্রীদের কিনে খেতে হবে। এ ছাড়া ভিসাও যাত্রীদের নিজেদের উদ্যোগে নিতে হবে। ভিসায় কোন পথে যাত্রীরা যাবেন এবং কলকাতা হয়ে ফেরত আসবেন সে বিষয় উল্লেখ থাকতে হবে।

রওয়ানার সময়

জাহাজটি ২৯ মার্চ রাত ৯টায় নারায়ণগঞ্জের পাগলা মেরিএন্ডারসন ভিআইপি জেটি থেকে ছাড়বে। এতে ৩০ জন নাবিক, ১ জন পাইলট ও ১০ জন ক্যাটারার থাকবেন।

যাত্রাসূচী অনুযায়ী ঢাকা থেকে ২৯ মার্চ রাত নয়টায় ছাড়ার পর এমভি মধুমতি বরিশাল পৌঁছাবে ৩০ মার্চ ভোর ৫টায়। তিন ঘণ্টা যাত্রা বিরতির পর বরিশাল থেকে ছেড়ে যাবে সকাল ৮টায়। সেখান থেকে বাগেরহাটের মোংলায় কিছু সময় থামবে জাহাজটি। বাগেরহাট থেকে সুন্দরবনে ভেতরে যাবে এটি। একই দিনে সুন্দরবন ঘুরে মধুমতি জাহাজটি খুলনার কয়রার আন্টিহারার দিকে যাবে। সেখানে ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ শেষ করে সাতক্ষীরার শ্যামনগর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় যাবে। পরে হলদিয়া বন্দর থেকে ছেড়ে সরাসরি কলকাতায় পৌঁছাবে ৩১ মার্চ রোববার দুপুর ১২টার দিকে। রোববার কলকাতায় থেকে পরদিন ১ এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে এমভি মধুমতি।

এমভি মধুমতি সম্পর্কে তথ্য

২০১৫ সালে জাহাজটি প্রায় ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়। দ্বিতলবিশিষ্ট জাহাজটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৭৫০ জন। দৈর্ঘ্য ৭৫.৫০ মিটার এবং প্রস্থ ১২.৫০ মিটার।

জাহাজটিতে ভিআইপি ফ্যামিলি স্যুট ৪টি  (গোলাপ, শাপলা, টিউলিপ, পদ্ম)। প্রথম শ্রেণির সিঙ্গেল ফ্যামিলি স্যুট (ডাবল বেডের কাপড়) ১৮টি, প্রথম শ্রেণির সিঙ্গেল কেবিন ৪টি। প্রথম শ্রেণির ডাবল কেবিন ৩৪টি এবং দ্বিতীয় শ্রেণির চেয়ার সিট ৪২টি। ডেকে প্রায় ৫৫০ যাত্রীর স্থান সংকুলান হবে। জাহাজটি জাপানি শক্তিশালী দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট। এটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এবং নকশা করেছেন মঈনুল ইসলাম।

 

 

টাইমস/এমএএইচ/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আবুধাবি টি-১০ লিগে দল পেলেন নাহিদ ও সাইফ Oct 18, 2025
img
পরীমণিকে ঘিরে স্মৃতিচারণ সংগীত শিল্পী ইমরানের Oct 18, 2025
img
পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের হুমকির বিপরীতে ভারতের পাল্টা হুঁশিয়ারি Oct 18, 2025
img
ফরিদপুরে বিএনপির বাধায় স্থগিত জামায়াতের নির্বাচনি সভা Oct 18, 2025
img
ওয়ানডেতে ইতিহাস গড়লেন রিশাদ হোসেন Oct 18, 2025
img
আ.লীগ-বিএনপি-জামায়াতকে কৃতকর্মের দায় নিতে হবে : আনু মুহাম্মদ Oct 18, 2025
img
হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু Oct 18, 2025
img
থালা-বাটি হাতে এবার ‘ভূখা মিছিল’ করবেন শিক্ষকরা Oct 18, 2025
সেনা হেফাজতে তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার: পরিচিতদের ভিন্ন বক্তব্য Oct 18, 2025
img
বিএনপি সরকার গঠন করলে হাসপাতালে শয্যা ও চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হবে : তারেক রহমান Oct 18, 2025
img
জর্ডানে ব্যর্থ অ-১৬, ব্যাখ্যা নেই কোচের Oct 18, 2025
img
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে মিরাজের মন্তব্য Oct 18, 2025
img
শাহজালাল বিমানবন্দরের ঘটনায় ৬ সদস্যের তদন্ত কমিটি Oct 18, 2025
img
ঢাকার ৪ হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর Oct 18, 2025
সাংবাদিকদের ওপর মেজাজ হারালেন বিএনপি মহাসচিব! Oct 18, 2025
img
শত টন পণ্য পুড়ে ছাই হওয়ার আশঙ্কা শাহজালাল বিমানবন্দরে Oct 18, 2025
img
বিমানবন্দরের অগ্নিকাণ্ড কি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, এ ব্যাপারে আমরা উদ্বিগ্ন : ডা. শফিকুর রহমান Oct 18, 2025
img
এনসিপি হয়তো নির্বাচনে অংশ নেবে না : মোস্তফা ফিরোজ Oct 18, 2025
বাবর আজমের টি-টোয়েন্টি কমব্যাক নিশ্চিত! Oct 18, 2025
বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই সাকিবকে বুঝি Oct 18, 2025