গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে ভোটদানকে কেন্দ্র করে স্বামী-সন্তানদের বেঁধে রেখে ৪০ বছর বয়সী এক নারীকে মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়। যেই ঘটনা পুরো বাংলাদেশে তোলপাড় হয়েছিল।
ওই ঘটনায় নির্যাতনের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে চরজব্বার থানায় মামলা করেন। নির্যাতিত নারীর অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে থাকা ব্যক্তিদের পছন্দের প্রতীকে ভোট না দেওয়ার জের ধরে ওই হামলা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে গত ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি
এর আগে ছিল জাতীয় নির্বাচন। এবার উপজেলা নির্বাচন। কিন্তু অপরাধের ধরন, স্থান এক। শুধু ভিকটিম ভিন্ন।
এবার নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীকে আটকে রেখে ছয় সন্তানের মাকে (৩৫) গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামীকে আটকে মারধর করা হয়।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। একই দিন অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদের এক প্রার্থীকে ভোট না দেওয়ায় এ নির্যাতন চালানো হয় বলে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার স্বামীর অভিযোগ।
নির্যাতনের শিকার নারীকে রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর হাসপাতালে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা।
হাসপাতালে দীপক জ্যোতি খীসা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ওই নারী অভিযোগ করেছেন যে স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে কিছু লোক তাদের পথ রোধ করেন। পরে পাশের একটি কলাবাগানে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো এক প্রার্থীকে ভোট দেওয়াকে কেন্দ্র করে কিছু লোকের সঙ্গে তার বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে এই ধর্ষণের ঘটনা বলে ওই গৃহবধূ দাবি করেছেন। তবে তদন্তে এ বিষয়ে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন। তিনি আরও বলেন, ওই নারীর স্বামী মামলা করবেন।
হাসপাতালে ভর্তি নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তারা চশমা প্রতীকের পক্ষে ছিলেন। নির্বাচনের আগে থেকে তালা প্রতীকের সমর্থক ইউছুফ মাঝি তাদের হুমকি-ধমকি দেন। কিন্তু তারা তাদের অবস্থানে অনড় ছিলেন। রোববার স্থানীয় ভোটকেন্দ্রে গিয়ে চশমা প্রতীকে ভোট দেন।
ওই নারীর দাবি, রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে তিনি আর তার স্বামী মোটরসাইকেলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে চশমা প্রতীকে ভোট দেন। এ নিয়ে কেন্দ্রেই ইউছুফ মাঝির সঙ্গে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বাগ্বিতণ্ডা হয়। তাদের ওই সময় বাড়ি ফেরার পথে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
নির্যাতনের শিকার নারী বলেন, হুমকির কারণে তখন তারা ভোটকেন্দ্র থেকে বাড়িতে না গিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় একটি বাজারের কাছে ১০-১২ জন তাদের পথরোধ করেন। তাদের মধ্যে বেচু মাঝি (৩৫), ফজলু (৩০) ও আবুল বাসার (২৫) তাকে কলাবাগানে নিয়ে ধর্ষণ করেন। আর বাকিরা তার স্বামীকে অন্যদিকে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন।
ওই নারীর স্বামীর ভাষ্য, রাত আটটার দিকে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে হামলাকারীরা সবাই দৌড়ে পালিয়ে যান। এ সময় তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে তার স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীই ছিলেন আওয়ামী লীগের।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, আজ ওই নারীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
টাইমস/এসআই