হাতে মেহেদী লাগানো হলো না চিকিৎসক রুম্পার

ডা. আক্তার জাহান রুম্পা। বয়স ২৭ বছর। তিনি চট্টগ্রাম হালিশহরের ৭ নম্বর লেনের ১৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামানের মেয়ে। বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল রুম্পা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। বাবা মায়ের সেই স্বপ্ন পূরণও হয়েছিল। কিন্তু বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ শেষে নিজের স্বপ্ন পূরণ করে করতে এসে রুম্পা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। রাজধানী ঢাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি।

জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগরের ভার্ড চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক আক্তার জাহান রুম্পা। ঢাকাস্থ বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চাকরির সাক্ষাৎকার দিতে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীতে এসেছিলেন। সোমবার রাতে এনা পরিবহনের একটি বাসে করে সিলেট থেকে যাত্রা করে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডে আসেন। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশাযোগে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। কিন্তু তেজগাঁওয়ের বিজয় সরণি মোড়ে আসা মাত্র একটি বাস ওই অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়। এত অটো চালক ও রুম্পা আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রুম্পাকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষনা করেন।

পরবর্তীতে রুম্পার হবু স্বামী ডা. মহসিন ফারুক রবিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আই হাসপাতালে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ভোরে সিলেট থেকে ঢাকায় আসেন রুম্পা। অটোরিকশাযোগে আই হাসপাতালে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পেরেছি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তেজগাঁও থানার এসআই মিনহাজ উদ্দিন বলেন, বিজয় সরণি এলাকায় অটোরিকশা ও যাত্রীবাহী বাসের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো বাস পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনায় অটোরিকশায় থাকা রুম্পা নামের একজন নারীর মৃত্যু হয় এবং অটো চালক আহত হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বাচ্চু মিয়া জানান, ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, রুম্পা মাথায় আঘাত পেয়েছেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়।

এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, ময়ন্ত তদন্তের জন্য লাশ মর্গের ভেতর রাখা হয়েছে। আর বাহিরে লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন তার স্বজন ও সহকর্মীরা।

এ সময় কথা হয় রুহুল আমিন নামের এক সহকর্মীর সঙ্গে। তিনি জানান, রুম্পা চলতি বছরের শুরুর দিকে সিলেট ওসমানীনগরের ভার্ড চক্ষু হাসপাতালে যোগদান করেন। পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে ঢাকাস্থ বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চাকরি নেয়ার জন্য পরীক্ষা দেন। সেই পরীক্ষায় তিনি পাশও করেন। কিন্তু বাংলাদেশ আই হাসপাতালে বেতন কম হওয়ায় তিনি যোগদান করেননি।

তবে সম্প্রতি রুম্পাকে আবার বাংলাদেশ আই হাসপাতাল থেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয় জানিয়ে রুহুল আমিন বলেন, সেই সুবাদে মঙ্গলবার তিনি ঢাকা আসেন। তবে সাক্ষাতকারের আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি না ফেরার দেশে চলে যান।

কথা হয় রুম্পার হুবু স্বামী মহসিন ফারুক রবিনের সঙ্গে। তিনিও পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি জানান, মাত্র দুই মাস আগে আকদ হয়েছিল তাদের। আর কদিন পরই নববধূকে বরণ করে নিজের ঘরে তুলাবার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেলো।

 

টাইমস/কেআর/টিএইচ

Share this news on: