বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনাগ্রহের কারণে দ্বিতীয় দফায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও উদ্যোগ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত শুরু করা গেল না প্রত্যাবাসন কর্মসূচি। মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ না থাকায় রোহিঙ্গাদের কেউ তাদের আদি নিবাসে ফিরতে চাইছেন না।
বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে গত বছর নভেম্বর মাসে একই রকমের একটি প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণেই ভেস্তে যায়।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টেকনাফের নোয়াপাড়ার ২৬ নং ক্যাম্পের কাছে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল তিনটি বাস ও দুটি ট্রাক। উদ্দেশ্য প্রত্যাবাসনে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের এসব পরিবহনে করে ২০ কিলোমিটার দূরবর্তী বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে পৌঁছে দেয়া। তবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা সেখানে আসেনি।
কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
তিনি বলেন, আজ প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য রোহিঙ্গাদের সীমান্তে পৌঁছে দেয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে কোনো রোহিঙ্গা আসেনি। রোহিঙ্গাদের দেয়া শর্ত পূরণ না হলে তাদের একজনও স্বদেশে ফিরতে চান না।
প্রত্যাবাসনের তৎপরতা শুরু হলে মিয়ানমারে নাগরিকত্ব, স্বাধীনভাবে চলার নিরাপত্তা, ফেলে আসা সম্পত্তি ফেরত ও নিরাপত্তা নজরদারির শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা।
এ সময় চীনা প্রতিনিধি দলের দুজন সদস্য ও মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা ছিলেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
আবুল কালাম বলেন, মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৫৪০ জন রোহিঙ্গার নামের তালিকা বাংলাদেশ সরকারকে দেয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৯৫টি পরিবারের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। যাদের কেউই শর্তবিহীন মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেনি। কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যদি বিনা শর্তে দেশে যেতে চায়, তাহলে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো হবে। আজও তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়াটি চলমান থাকবে।
আবুল কালাম আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রথম থেকে বলে আসছিল, কোনো রোহিঙ্গা নাগরিককে জোর করে মিয়ানমারে পাঠানো হবে না। তাই আজও তাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ চলছে।
চীনের প্রতিনিধি ঝ্যাং তিয়ানঝু বলেন, প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনায় মধ্যস্থতার দায়িত্ব তার দেশ নিয়েছে।
রোহিঙ্গারা কেন নিজ দেশে ফিরতে চায় না? কেন তারা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থা পায় না। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মিয়ানমারের কূটনীতিকদের কাছে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা এই প্রশ্নগুলো বারবার তুলে ধরলেও তারা কোনো জবাব দেননি।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম সময়সীমা ঠিক হয়েছিল। রোহিঙ্গারা রাজি না হওয়ায় সেবার একজনকেও রাখাইনে পাঠানো যায়নি। আজও কেউ রাখাইনে যেতে না চাওয়ায় এ নিয়ে দুই দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা দৃশ্যত ব্যর্থ হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশে আসে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা শুরু হওয়ার পর। ওই সময়ে মিয়ানমার থেকে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে।
টাইমস/এসআই