থাইল্যান্ড ভ্রমণ পর্ব-১

হুট করেই পরিকল্পনা। আম্মুর কনফারেন্স ২০-২২ নভেম্বর পর্যন্ত। আমাকে বললেন যাবা নাকি সাথে? সচরাচর আমার আব্বু-আম্মু অফিসিয়াল কাজে বিদেশে যাওয়ার আগে এ ধরনের অফার করেন না। তাই লাফ দিয়েই রাজি হয়ে গেলাম। ৭ দিনের ছোট্ট ট্যুর(১৭ নভেম্বর-২২ নভেম্বর পর্যন্ত)।

যেহেতু আমার ২৪-২৫ তারিখ একটা পরীক্ষা ছিল তাই রিটার্ন টিকেটটা ২২ তারিখ কাটা হয়। কিন্তু ভাগ্য! পরবর্তীতে পরীক্ষাটা বাতিল হয়ে ১২ তারিখে হয়ে যায়। নয়তো আরও কয়েকটা দিন পর রিটার্ন টিকেট কাটা যেত।

প্রথমেই বলে রাখি, কবি সাহিত্যিকদের মতো অত কাব্যিক কিংবা  ফর্মাল ওয়েতে  আমি কথা বলতে পারি না। আমার দু’চোখ যা দেখেছে সেটাই আমি লিখব।

ছোটবেলা থেকেই যতবার প্লেনে চড়েছি ততবারই হালকা পাতলা ভয় পেয়েছি। তবে মানুষের ভয় বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকলেও আমার ভয় যে দিনে দিনে বেড়েই চলছে সে বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

১৭ নভেম্বর থাই এয়ারওয়েজের ফ্লাইট রাত ২ টায় ছাড়ার কথা ছিল। কিন্তু তা কোনো এক কারণে ৩০ মিনিট দেরি করে। প্লেনে ওঠার পরই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল থাই এয়ার হোস্টেসদের মিষ্টি মধুর ব্যবহারে। তারা প্রথমেই আমন্ত্রণ জানালেন 'স্বয়াদিখা' বা এমন কোনো একটি শব্দ ব্যবহারে। থাই রমণীরা বেশ সুন্দরী। তা এয়ার হোস্টেসদের দেখেই বোঝা যায়। তবে মালয়েশিয়ান এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, থাই এয়ারওয়েজে- অর্থাৎ যেগুলোতে চড়ার আমার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাদের চেয়ে বাংলাদেশ এয়ারওয়েজের শাড়ি পরা রমণীরাই যে সর্বোত্তম সুন্দরী তা বলতে বাধা নেই। তাই বোধ হয় বলা হয় ‘শাড়িতেই নারী'(কথাটা কে বলেছিলেন মনে নেই)। তবে উনাদের সময় জ্ঞানও যে শাড়ি পরার মতোই ধীর গতির তাহা ২০১৭ সালের নেপাল ভ্রমণেই 'বুঝিয়া গিয়াছিলাম'। যাই হোক, অন্য প্রসঙ্গে চলে যাবার বিশেষ দোষ আছে আমার।

এই থাই এয়ার হোস্টেসদের মধ্যে যারা নারী তারা তাদের দেশীয় পোশাক পরিধান করলেও পুরুষ কেবিন ক্রুরা ফর্মাল ড্রেসেই ছিলেন। প্লেন ছাড়ল, রানওয়ে ঘেঁষে চলছিল...। কিছুক্ষণ চলার পরই প্লেনটি মাটিতেই থেমে গেল। বিষয়টা বুঝতে পারলাম না। ১০ মিনিট পর বুঝলাম আরেকটি প্লেন আকাশে উড়বে তাই আমাদের প্লেন জ্যামে আটকা ছিল। আম্মুকে হাসতে হাসতে বললাম, ঢাকার জ্যাম দেখা যায় রানওয়ে এরিয়াতেও এসে পড়ে ইদানিং। প্লেন উড়া শুরু করলো। প্লেন উড়া শুরু করার সময়টা ভয় লাগে বরাবরের মতো। আম্মুকে ধরে, ও মাগো, ও বাবাগো বলার মধ্যে আলাদা সাহস থাকে।

এয়ার হোস্টেসরা খাবার নিয়ে ঢুকল। সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলেন, চিকেন নাকি ফিস। যাই হোক, আব্বু আম্মু ফিস নিলেও আমি চিকেন নিয়েছিলাম। খাবারের মধ্যে ছিল- ভাত(বাঁশমতি চালের হতে পারে), উদ্ভট রান্না করা চিকেন, উদ্ভট রান্না করা সবজি, বান, রুটি, মাখন, আচার টাইপের কিছু, তিন রকমের ফল, উদ্ভট কেক। বান আর মাখন বাদে পুরা খাবারটাই আমি নষ্ট করলাম। এই উদ্ভট রান্না আমি খেতে পারিনি। খাবার পর্ব শেষ হওয়ার পরেই এত বড় ট্রে তে করে চা, কফি, জুসসহ অনেক রকম পানীয়(আল্লাহই জানেন ওগুলো কিসের বোতল) লাগবে কিনা জিজ্ঞাসা করলেন এয়ার হোস্টেসরা। আমি কফি নিলাম আর আম্মু-আব্বু নিলেন আপেলের জুস । যাই হোক, এই ছিল খাওয়ার পর্ব।

কিছুক্ষণ পর মুভি দেখার জন্য বিভিন্ন মুভির লিস্ট দেখলাম। লিস্টের একটা মুভিও দেখার আগ্রহ পেলাম না। আর আমি মুভি খুব কম দেখি, দেখি না বললেই চলে। ও আমি বলতে ভুলে গিয়েছিলাম প্লেন একটু করে কাঁপে আর আমি মা-কে জড়িয়ে ধরি আর বলি, 'এটা কেন হলো? কোনো সিরিয়াস কিছু না তো!'

প্লেনের দেওয়া কম্বল আর বালিশে মাথা জড়িয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বলতে পারলাম না। ঘুম ভেঙেছে ভয়ংকরভাবে। আকাশের কিনারে কিনারে লাল আগুনের লাভার মতো কি জানি দেখা যাচ্ছে! আমি ভয়ে ভাবছি এই বুঝি সব শেষ! পরবর্তীতে বুঝলাম  লাল রঙ আগুনের নয়, সূর্যোদয়। ধীরে ধীরে টকটকে লাল রঙটা আরও গাঢ় হতে লাগলো। আর তখনই বলা হলো আমাদের প্লেন অবতরণ করবে কিছুক্ষণের মধ্যে। প্লেন অবতরণ করে থাইল্যান্ডের সময় ভোর ৫ টা ৫৫ মিনিটে। পৌঁছে গেলাম সূবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে।

চলবে...

 

লেখক: শিক্ষার্থী

সংগীত বিভাগ

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ। 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ট্রাম্পের চোখ বন্ধ, ছবি ঘিরে বিতর্ক! Nov 09, 2025
img
মেহেরপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল পথচারীর Nov 09, 2025
img
ফেনীতে খালেদা জিয়ার বিপক্ষে লড়তে চান এনসিপি নেতা Nov 09, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই: আসিফ নজরুল Nov 09, 2025
img
উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসছে শীত, দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা তেঁতুলিয়ায় Nov 09, 2025
img
জম্মু-কাশ্মীরে চলন্ত ট্রেনে ঈগলের ধাক্কা, উইন্ডস্ক্রিন ভেঙে চালক আহত Nov 09, 2025
img
বিবিসি একটি প্রোপাগান্ডা মেশিন: ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি Nov 09, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্র সফরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আল-শারা Nov 09, 2025
img
লালমনিরহাটে আ.লীগ ও জাপার ৫৬ ইউপি সদস্য বিএনপিতে যোগ দিলেন Nov 09, 2025
img
৯ নভেম্বর: ইতিহাসের এইদিনে যা ঘটেছিল Nov 09, 2025
img
মেসির জোড়া গোল আর অ্যাসিস্টে সেমিফাইনালে ইন্টার মায়ামি Nov 09, 2025
img
ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন ‘ফাং-ওয়ং’, সরিয়ে নেয়া হলো ১ লাখ বাসিন্দাকে Nov 09, 2025
img
বৈষম্যবিরোধী আইনের অঙ্গীকার প্রয়োজন: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 09, 2025
img
শরীয়তপুরে যুব শক্তির কমিটি ঘোষণার পরই সদস্য সচিবের পদত্যাগের ঘোষণা Nov 09, 2025
img
বলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমার পথে শাহরুখের ‘কিং’ Nov 09, 2025
img
ইলেকশন অবজারভার সোসাইটির আত্মপ্রকাশ Nov 09, 2025
img
প্লট জালিয়াতি মামলার অষ্টম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Nov 09, 2025
img
অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর পাকিস্তানকে খোঁচা সূর্যকুমারের Nov 09, 2025
img
ঝুলন্ত সেতুতে যুক্ত হচ্ছে মুন্সীগঞ্জ ও চাঁদপুর Nov 09, 2025
img
নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে দেশে আবারও বিপ্লব ঘটবে: সরোয়ার Nov 09, 2025