রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি

এক সময় বাংলাদেশে রাজা বা জমিদারদের প্রভাব ছিল। তারা নিজের শাসনকাজ পরিচালনা ও বসবাসের জন্য নির্মাণ করেছিলেন দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা। তেমনি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়ি। এটি তাজহাট রাজবাড়ি নামেও পরিচিত।

জমিদার বাড়িটি রংপুর জেলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থিত। প্রাসাদটির একটি অংশ বর্তমানে রংপুর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল রায়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রাসাদটি নির্মাণে প্রায় ১০ বছর সময় লেগেছিল। এই জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মান্নানলাল রায়। তিনি স্বর্ণ ব্যবসা করতে পাঞ্জাব থেকে রংপুর এসেছিলেন। তারপর ১৮১৯ সালে তারই উত্তরাধিকারী গোবিন্দলাল জমিদারির মালিক হন। গোবিন্দলাল তার কর্মের জন্য রাজা, রাজা বাহাদুর ও মহারাজা উপাধি অর্জন করেছিলেন। তিনিও এখানে হীরা, মানিক জহরতের বা তাজের টুপির ব্যবসা করতেন। সেখান থেকেই এ এলাকার নাম হয়ে ওঠে তাজহাট।

১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে বাড়িটিকে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ২০০৫ সালে রংপুর জাদুঘরকে প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর করা হয়।

প্রায় ২১০ ফুট প্রশস্ত এই প্রাসাদটি চারতলা ভবনের সমান উঁচু। প্রাসাদটির সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। তার পাশে রয়েছে সারি সারি গাছ, দু পাশে পুকুর। প্রাসাদটির নির্মাণশৈলীতে মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে। বাড়িটি অনেকটা ঢাকার আহসান মঞ্জিলের আদলে তৈরি।

ইতালীয় মার্বেল পাথরে তৈরি করা হয়েছে এর ৩১টি সিঁড়ি। বাড়িটির পেছনে রয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি, রয়েছে শ্বেত মার্বেল পাথরের ফোয়ারা। দেখার মতো রয়েছে আরও অসংখ্য নিদর্শন।
মার্বেল পাথরের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই জাদুঘর। যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন যুগের নিদর্শন। জাদুঘরেও রয়েছে দশম ও একাদশ শতাব্দীর টেরাকোটা। রয়েছে দুর্লভ কিছু পাণ্ডুলিপি। রাজা-বাদশাদের ব্যবহৃত অনেক নিদর্শন স্থান পেয়েছে এখানে। রয়েছে শিলালিপি, পোড়ামাটির ফলক, হস্তলিপিসহ অজস্র নিদর্শন।

জাদুঘরে প্রবেশে নির্দিষ্ট ফি রয়েছে। গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৬টা এবং শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে জাদুঘরটি। এ ছাড়া রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি জায়গা এই তাজহাট জমিদার বাড়ি।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাসে যেতে হবে রংপুর। এজন্য গ্রীন লাইন, টি আর ট্রাভেলস, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহনসহ বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। শ্রেণিভেদে ভাড়া লাগবে ৫০০ থেকে ১১শ টাকা। বাস থেকে নেমে অটোরিকশায় সহজেই যাওয়া যাবে তাজহাট জমিদার বাড়ি।

এছাড়া ট্রেনযোগে যেতে পারবেন রংপুর। রংপুর এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে ছাড়ে সকাল নয়টায়। রংপুর পৌঁছায় সন্ধ্যা সাতটায়। সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রবিবার।

থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা: রংপুর শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল শাহ আমানত, হোটেল গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল দি পার্ক, হোটেল তিলোত্তমা প্রভৃতি। খাবারের জন্যও রংপুরে পাবেন বিভিন্ন মানে খাবার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আ.লীগ নেতাকর্মীদের দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর Apr 26, 2024
img
৯ মে পর্যন্ত বন্ধ চুয়েট, খোলা থাকবে হল Apr 26, 2024
img
প্রথমবার এশিয়া কাপে আম্পায়ারিং করবেন বাংলাদেশের জেসি Apr 26, 2024
img
গাজায় ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কারে লাগতে পারে ১৪ বছর : জাতিসংঘ Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের Apr 26, 2024
img
অলসতা কাটিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠতে করণীয় Apr 26, 2024
img
বাংলাদেশে চিকিৎসা সুবিধায় থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চান প্রধানমন্ত্রী Apr 26, 2024
img
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি Apr 26, 2024
img
সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল রায়হান রাফীর নতুন সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ Apr 26, 2024