তেজপাতার যত তেজ

রান্নার স্বাদ আর গন্ধ বাড়াতে তেজপাতার ব্যবহার বেশ পুরনো। তরকারি বা মাংস রান্নায় তেজপাতা না হলে যেন চলেই না। বলা হয়, এর চমৎকার গন্ধ তরকারি, মাংস বা বিভিন্ন খাবারে আনে বাড়তি স্বাদ। এমনকি স্যুপ, পায়েস, পোলাওসহ অন্যান্য সিদ্ধ জাতীয় খাবারে সুগন্ধ যোগ করতে এ পাতা ব্যবহার করা হয়।

তেজপাতা এক প্রকারের উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Cinnamomum tamala। কাঁচা তেজপাতার রং সবুজ। শুকনো পাতার রং বাদামি। এটি মশলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এর রয়েছে নানা ওষধিগুণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন গ্রীকে ঐতিহ্যগত ওষুধ তৈরিতে তেজপাতা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন-ই, ভিটামিন-সি, ফলিক অ্যাসিড, মিনারেল ও বিভিন্ন খনিজ উপাদান। যা ব্যাকটেরিয়া নিধন করা, জ্বালাপোড়া কমানোসহ আরও অনেক উপকার করে।

চলুন জেনে নিই তেজপাতার ওষধিগুণ সম্পর্কে-

সর্দিকাশি বা ফ্লু এড়াতে
তেজপাতার ‘অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল’ উপাদান শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন প্রদাহ কামাতে সহায়ক। সর্দিকাশি, কফ ও ফ্লু থেকে মুক্তি পেতে তেজপাতা সিদ্ধ করে খেতে কিংবা বুকে মাখা যেতে পারে।

খুশকি ও চুলপড়া কমাতে
তেজপাতা সিদ্ধ পানি দিয়ে চুল ধুলে খুশকি কমে। চুলপড়া বন্ধ করতেও কার্যকর। চুল কমে যাওয়ার স্থানগুলোতে তেজপাতার এসেনসিয়াল অয়েল মাখতে পারেন।

হজমশক্তি বাড়ায়
তেজপাতা শরীরের হজমপ্রক্রিয়াকে দ্রুত করার মাধ্যমে খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলো ভালোভাবে পরিপাক করতে সহায়তা করে। পেটফাঁপা, বদহজম, বুক জ্বালাপোড়া ইত্যাদি চিকিৎসায় তেজপাতা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

ব্যথা উপশম করে
তেজপাতা প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা, জয়েন্টের ব্যথা, এমনকি বাতের ব্যথা উপশমে কার্যকরী। তেজপাতা ও রেড়ির পাতার (ক্যাস্টর) পেস্ট আক্রান্ত স্থানে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখলেই ব্যথা কমে যাবে।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে
কিছু গবেষণায় দেখা যায়, তেজপাতা ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করে। এতে ফাইটোনিউট্রিয়ান্স ও ক্যাটচীন উপাদান থাকায় এটি ক্যান্সার কোষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটি গবেষণা অনুযায়ী তেজপাতা ব্রেস্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও কাজ করে।

হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
তেজপাতায় রয়েছে রুটিন ও ক্যাফেক অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো হার্টের দেয়ালকে মজবুত করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

তরুণ্যদীপ্ত ত্বক ধরে রাখতে
তেজপাতার উদ্ভিজ্জ উপাদান ত্বকে বলিরেখা সৃষ্টির জন্য দায়ী ‘ফ্রি-র‌্যাডিকেল’ নিষ্ক্রিয় করে। ঘরে সহজেই ‘অ্যান্টি-এইজিং সলিউশন’ বানাতে চাইলে তেজপাতা ভেজানো ফুটন্ত পানির বাষ্প মুখে লাগানো যেতে পারে।

শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে
সুগন্ধযুক্ত গোসলের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করার প্রয়োজন নেই। বরং এক টুকরা পরিষ্কার কাপড়ে গুঁড়া তেজপাতা কুসুম গরম পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রেখে, এই পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন।

ত্বক ও দাঁত উজ্জ্বল করতে
তেজপাতা সিদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা হলে তা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বক ফর্সা করার পাশাপাশি এই মিশ্রণ ব্রণ শুকাতেও সহায়ক। উজ্জ্বল দাঁত পেতে সপ্তাহে কয়েকবার দাঁতে তেজপাতা ঘষা যেতে পারে।

সতর্কতা: তেজপাতা গর্ভবতী মা ও সদ্য মায়েদের প্রস্রাবের ইনফেকশন ঘটাতে পারে। এছাড়া সার্জারি রোগীদের দুই সপ্তাহ তেজপাতা খেতে নিষেধ করা হয়, কারণ এটি স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: