খাবারের পুষ্টিগুণ ধরে রাখার কৌশল

বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন মানুষ খাবার গ্রহণ করে। যার মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাই। পুষ্টি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে গৃহীত খাদ্য শোষিত হয়ে শরীরে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে, শরীরের বৃদ্ধি সাধন করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই খাবার সঠিক উপায়ে রান্না এবং সঠিক উপায়ে খাবার গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। কারন কাটা, ধোয়া, সংরক্ষণ বা রান্নার ভুলে খাদ্যের পুষ্টিগুণ কিন্তু কমে যেতে পারে। তাই খাবার থেকে সঠিক পুষ্টি পেতে কয়েকটি পন্থা জেনে রাখা প্রয়োজন।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পরিচ্ছন্নতা একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। বাজার থেকে আনা শাকসবজি বা ফল ভালভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আস্ত অবস্থায় কলের পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিলেই সেটা খাওয়ার জন্য নিরাপদ।

সংরক্ষণের সময় সবজি ধুয়ে পানিসহ ফ্রিজে রাখা যাবে না। রান্নার আগে ধুয়ে ও কেটে নিলেই পুষ্টিগুণ থাকবে অক্ষুণ্ণ। কাঁচা মাছ ধুয়ে পরিষ্কার করে লবণ-হলুদ মাখিয়ে ফ্রিজে রাখতে পারেন। দুগ্ধজাত জিনিস কেনার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেটা খেয়ে ফেলার চেষ্টা করুন। ফল তাজা অবস্থায় খাওয়াই ভালো।

খাদ্যে পুষ্টিগুন অক্ষুণ্ণ রাখতে রান্নার কিছু কৌশল 

শাকসবজি যথাসম্ভব বড় বড় করে কাটতে হবে। এতে আলো ও বাতাসের সংস্পর্শে ভিটামিনের ক্ষয় কম হয়। ভিটামিন বি ও সি–এর অপচয় রোধে সবজি খোসা ছাড়ানো ও টুকরা করার পর আবার ধোয়া যাবে না। পানিতে ভিজিয়েও রাখা যাবে না। শাকসবজি কাটার ক্ষেত্রে ধারালো ছুরি, বঁটি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। ভোঁতা ছুরি-বঁটিতে ভিটামিন সি নষ্ট হয়। শাকসবজি কেটে খোলা রাখা যাবে না।

খোসাসহ সবজি রান্না করলে পুষ্টি উপাদান বেশি মাত্রায় ধরে রাখা যায়। বিশেষ করে আলু, মিষ্টি আলু, মূলা, গাজর ইত্যাদি মূল ও কন্দজাতীয় সবজি খোসাসহ রান্না করলে ভিটামিন সিসহ অন্য পুষ্টি উপাদান বেশি পরিমাণে অক্ষুণ্ন থাকে। টমেটো, ব্রকলি, পেঁয়াজ, গাজর ইত্যাদি কাঁচা না খেয়ে রান্না করে খেলে রোগপ্রতিরোধকারী উপাদানগুলো বাড়ে।

মাছ, মাংস ডিম এবং ফলের পুষ্টিগুণ ধরে রাখার ক্ষেত্রে পোচ করা একটি চমৎকার উপায়। চুলায় অল্প পানিতে খাবারটিকে এমনভাবে ছেড়ে দিতে হবে যেন তা আর্দ্রতা এবং পুষ্টিগুণ ধরে রাখতে পারে। যেহেতু পানি খাবারে কোনো বাড়তি চর্বি যোগ করতে পারে না, তাই এই উপায় বেশ স্বাস্থ্যকর।

খাবার সবচাইতে কমমাত্রায় পুষ্টিগুণ হারায় গ্রিল করলে। কারন গ্রিলের প্রচণ্ড তাপ চর্বি গলিয়ে খাবারের তেল বা আর্দ্রতা খাবারেই আটকে রাখে। ফলে বাড়তি তেল বা মাখন দেয়ার প্রয়োজন হয় না। আবার সবজিও সবচাইতে বেশি পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ ধরে রাখতে পারে এই পদ্ধতিতেই।

খাবার সিদ্ধ করার পর পানিটুকু ফেলে না দিয়ে পরে ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে পারেন। কারণ সিদ্ধ করার সময় অনেকটা পুষ্টি উপাদান এই পানিতে মিশে যায়। আর সিদ্ধ করা উচিত ঢাকনাওয়ালা পাত্রে, প্রেশার কুকার হলে সবচাইতে ভালো হয়।

যতটা সম্ভব টাটকা রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। খাবার পুনরায় গরম করলে পুষ্টিগুণের রাসায়নিক গঠন নষ্ট হয়ে যায়। রান্না করতে হবে অল্প সময় ধরে । দীর্ঘ সময় ও উচ্চতাপে রান্নায় শাকসবজির ভিটামিন সি নষ্ট হয়। শাকসবজি রান্নায় বেকিং সোডা ব্যবহার করা যাবে না। এতে ভিটামিন সি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন ও ফলিক অ্যাসিড নষ্ট হয়।

 

টাইমস/এসজে

Share this news on:

সর্বশেষ