জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত : আব্দুল মান্নান

জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে যে পথে অগ্রসর হচ্ছে, তা নিয়ে জনগণের গভীর উদ্বেগ রয়েছে। আমি মনে করি, দেশে ফ্যাসিস্ট শক্তির বিদায়ের পর সব রাজনৈতিক দল একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

জামায়াতে ইসলামী সব সময়ই একটি নির্বাচনমুখী দল এবং আমাদের নেতৃবৃন্দ ইতোমধ্যেই স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত।’

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

আব্দুল মান্নান বলেছেন, “নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার আগে ‘জুলাই ঘোষণা’ এসেছিল। যেখানে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তাতে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করেছিলেন—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।

এই তিনটি ম্যান্ডেট জাতির কাছে তুলে ধরা হয়েছিল এবং বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণই মনে করে দেশে একটি মৌলিক রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন।’

তিনি বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে প্রায় ২০০০ ছাত্র নিহত হয়েছেন, ৩০ হাজারের মতো মানুষ আহত হয়েছে—কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ চোখ, কেউবা পঙ্গু হয়ে গেছে। এ ভয়াবহ চিত্র এখনো দেশের মানুষের সামনে পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। আজ পর্যন্ত কিছু ব্যক্তির বিচার হয়েছে কিন্তু অধিকাংশ অপরাধী ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে ‘ঐকমত্য কমিশন’-এর দীর্ঘ আলোচনায় অনেক রাজনৈতিক দল ঐকমত্য পোষণ করেছে। বিএনপি কিছু বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, জামায়াত একটি বিষয়ে দিয়েছে এবং ছোট ছোট দলের মধ্যেও ভিন্নমত রয়েছে। তবে বেশ কিছু বিষয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। আমরা মনে করি, এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে যদি একটি ‘লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক’ তৈরি না করা হয়, তাহলে ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারগুলো এই সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে না। ফলে সংস্কারবিহীন একটি নির্বাচন দেশকে পুনরায় অস্থিরতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।

তিনি বলেন, আমাদের বন্ধু সংগঠন বিএনপি বলছে, তারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে দুই বছরের মধ্যে সংস্কার বাস্তবায়ন করবে। আমরা বলছি যদি সব পক্ষ একমত হয় তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। একটি হচ্ছে গণভোট আরেকটি হচ্ছে একটি আইনি প্রক্রিয়া (প্রোক্লেমেশন) এর মাধ্যমে এই সংস্কারকে সাংবিধানিক ভিত্তি দেওয়া। এর মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে নির্বাচনের পর যেই সরকারই গঠিত হোক না কেন তারা এই সংস্কার বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে। অন্যথায় সেই নির্বাচন জনগণের কাছে বৈধতা পাবে না।

মান্নান বলেছেন, আমরা মনে করি, যত দ্রুত এই বিষয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধান হবে, তত দ্রুত বাংলাদেশ একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবে। কিন্তু বর্তমানে কিছু অদৃশ্য শক্তি আবারও ফ্যাসিস্ট ও তাদের সহযোগীদের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই আমি বলব যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী তারা সবাই নির্বাচন চায় এবং তারা সংস্কারও চায়, দেশবাসীও তাই চায়। আমাদের স্বাধীনতার ৫৪ বছরে আমরা এখনো প্রকৃত স্বাধীনতার স্বাদ পাইনি, ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি, ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি কার্যকর প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারিনি।

তিনি বলেন, আজো আমরা ব্যাংক লুটপাট, প্রশাসনিক অব্যবস্থা ও রাজনৈতিক স্থবিরতার মধ্যে আছি। এই মুহূর্তে আমাদের সামনে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ এসেছে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার। ভারতীয় কর্তৃত্ববাদ থেকে দেশকে মুক্ত করে বাংলাদেশপ্রেমী শক্তির নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার এই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে চাই না।

তিনি আরো বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যেই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত আছে। কিন্তু যারা বলছেন এখনই নির্বাচন দরকার তারা এখনো পর্যন্ত প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেননি। তারা কিভাবে নির্বাচনে যাবে, সে বিষয়েও পরিষ্কার নয়।

এমকে/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
৩ দাবিতে ডাকসুর বিক্ষোভ ও রেজিস্ট্রার ভবন ঘেরাও আজ Oct 26, 2025
img
পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ গেল ৩ জনের Oct 26, 2025
img
জুলাই হত্যাচেষ্টা মামলায় সাবেক পিপিকে আদালতে তোলা হবে আজ Oct 26, 2025
img
আজ ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী Oct 26, 2025
img

চানখারপুলে ছয় হত্যা

হাবিবুরসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ১২তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ আজ Oct 26, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজকের বাজারে স্বর্ণের দাম Oct 26, 2025
img
বৃষ্টিহীন ঢাকায় আজও থাকবে গরমের দাপট Oct 26, 2025
img
গাজা শান্তি প্রক্রিয়ায় কাতারের ভূমিকায় ট্রাম্পের প্রশংসা Oct 26, 2025
img
মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোয় রাতে মুখোমুখি বার্সা-রিয়াল Oct 26, 2025
img
নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের সূচি চূড়ান্ত Oct 26, 2025
img
মোটরসাইকেলে এসে নির্বাচন ভবনে ককটেল! Oct 26, 2025
img
হাকিমির জোড়া গোল, ব্রেস্টকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিল পিএসজি Oct 26, 2025
img
পাসপোর্ট ফি কমছে প্রবাসীদের জন্য Oct 26, 2025
img
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার Oct 26, 2025
img
২৬ অক্টোবর: ইতিহাসের এইদিনে আলোচিত যত ঘটনা Oct 26, 2025
img
মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে আরও ২৯ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর Oct 26, 2025
img
ফেসবুকে ছড়ানো ভুয়া চাকরির ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকুন Oct 26, 2025
img
রোনালদোর ৯৫০তম গোলে আল হাজমকে উড়িয়ে দিল আল নাসর Oct 26, 2025
img
বিশ্বে বায়ুদূষণে শীর্ষ শহর লাহোর, চতুর্থ অবস্থানে ঢাকা Oct 26, 2025
img
ফ্রিজে ফল-সবজি সংরক্ষণের সময় যে ভুলগুলো এড়াবেন Oct 26, 2025