জামায়াত একদিকে বলছে-বিচার ও কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য নয়, অন্যদিকে ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হলে তাদের আপত্তি নেই বলেও জানানো হচ্ছে।
জামায়াতের এই বক্তব্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নিলোফার চৌধুরী মনি বলেছেন, জামায়াত একদিকে নির্বাচনমুখী বললেও অন্যদিকে বিচার ও সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কৌশল নিচ্ছে। বিশেষ করে একটি ইসলামপন্থী দল হিসেবে জামায়াতের এমন কথার খেলাপ রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও নৈতিকতার পরিপন্থী।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দেশের একটি গণমাধ্যমে টকশোতে তিনি এসব কথা বলেন।
নিলোফার চৌধুরী মনি বলেছেন, জনগণ এখন স্পষ্ট বার্তা চায়-নির্বাচন হবে কি হবে না, হলে কবে হবে এবং কে কোন অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে জামায়াতের বার বার অবস্থান বদল জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে এবং নির্বাচনী পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক নেতা রয়েছেন ‘‘যারা বিচার মানি, তালগাছটা আমার” - এই মানসিকতা নিয়ে রাজনীতি করেন। জামায়াত এক ইঞ্চিও পিছু হটেনি।
সংস্কার-বিচার-নির্বাচনের প্রশ্নে নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে।
তিনি আরো বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির একসময় গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিল। তাদের কষ্টে আমরা কাঁদতাম, আমাদের কষ্টে তারাও পাশে থাকতো। ফ্যাসিস্ট বিদায়ের সময় আমরা একসাথে ছিলাম কিন্তু পরে জামায়াত বলল, ‘এক জালিমকে সরিয়ে আরেক জালিমকে আনবো না।
’ এই বক্তব্যে বিএনপি যেন আকাশ থেকে পড়ল। বন্ধুরা যখন বিশ্বাস ভঙ্গ করে-তা পাহাড়সম আঘাতের মতো লাগে। জামায়াত শুধু বলেই ক্ষান্ত হয়নি বরং প্রতিনিয়ত এই কথা চালিয়ে যেতে থাকে এমনকি তাদের ঘনিষ্ঠ এনসিপি নেতারাও এই বক্তব্য গ্রহণ করে নেয়। তখন বিএনপি সিদ্ধান্ত নেয়-আমরা দ্বন্দ্বে না গিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো। কারণ, এক অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের জন্য বিপদ আরো বাড়বে।
অথচ জামায়াত এক ইঞ্চিও পিছু হটেনি, সংস্কার-বিচার-নির্বাচনের প্রশ্নে নিজের অবস্থানে অনড় থেকেছে।
বিএনপির এই নেত্রী বলেছেন, আমরা বলেছি, বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে হলে ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়াতে হবে। কারণ, একটি মামলার নিষ্পত্তি বাংলাদেশে প্রায় ৮-১০ বছর সময় নেয় কিন্তু ইন্টেরিম সরকার তো এতদিন থাকতে পারে না।
তিনি বলেন, জামায়াত-এনসিপি বলছে-‘বিচার ও সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হবে না, আবার পরের দিনই বলে, ফেব্রুয়ারির আগেই নির্বাচন হলে সমস্যা নেই। এভাবে প্রতিনিয়ত অবস্থান বদলে ফেলা গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষত যারা ইসলামিক দল বলে নিজেদের পরিচয় দেয় তাদের জন্য।
তিনি অভিযোগ করেন, পিআর ভোট ব্যবস্থা জামায়াতের পক্ষ থেকে সামনে আনা হয়েছে, সংস্কারের মাঝামাঝিতে এসে। যদি পিআর হয়, তাহলে মানুষ আর তাদের পরিচিত প্রতিনিধিকে ভোট দিতে পারবে না বরং ভোট যাবে দলে। এতে করে এলাকার জনগণ ও প্রার্থী বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, যেসব শক্তি গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়, রাষ্ট্রকে অস্থির করতে চায়, তাদের কার্যক্রম সবাই বুঝে। তাই এখন ক্যাচাল না করে নির্বাচনকেন্দ্রীক ঐক্য গড়াটাই জরুরি।
তিনি আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছেন-দেশি-বিদেশি চক্র নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। কিন্তু উনি কিছু বললেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেন না, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। যদি সত্যিকারের মামলা করা হতো, সঠিকভাবে ধরপাকড় চালানো হতো, তাহলে আওয়ামী লীগ এত বেপরোয়া হতে পারতো না। এখন তো শোনা যায় ঢাকায় আওয়ামী লীগ সব জায়গায় ঘাঁটি গেড়েছে। বনানীতেও ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে, জঙ্গি মিছিল হয়েছে-এগুলো তো নির্বাচনের আগে অস্থিরতা তৈরিরই আলামত।
এমকে/টিকে