নিজেকে সাবেক ছাত্রদল নেতা পরিচয়ে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ উঠেছে ভোলা জেলা রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. নুর নেওয়াজের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা নিয়ে তার বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই বিএনপি নেতার নাম মো. মনির। তিনি ভোলা সদর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ।
গত বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের রুপসী সিনেমা হল সংলগ্ন জেলা রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো.নুর নেওয়াজের অফিস কক্ষের ভেতরে এ ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর শুরুতেই জেলা রেজিস্ট্রার ও ওই বিএনপি নেতা দুজনকে একে-অপরের ওপর ক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখা যায় এবং দুজনেই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেন।
একপর্যায়ে রেজিস্ট্রার নেওয়াজ ওই বিএনপি নেতা মনিরকে বলেন, আপনি.......নেতা হইছেন মিয়া চুপ করেন, বিএনপির সেন্ট্রাল নেতাদের সাথে আমার সম্পর্ক, আমি ছাত্রদল করে ৬১ দিন জেল খাটছি মিয়া, আপনি গেঞ্জাম কইরেন না, সেন্ট্রাল থেকে আপনাকে কল করবো, আপনার পদ থাকবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি, শেষ পর্যন্ত পদ নিয়ে দৌড়ের ওপর থাকবেন বলে শাসাতে দেখা যায়।
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী বিএনপি নেতা মো. মনির দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, রেজিস্ট্রার অফিসে ৫৪ জন নকল নবিস কর্মরত রয়েছেন। সেখানে কর্মরতদের বদলি আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে নকল নবিসরা মামলা করেছেন, হাইকোর্ট তাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু জেলা রেজিস্ট্রার তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে অন্যত্র বদলি করেন।
ঘটনার দিন সকালে জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত আমার একজন প্রতিবেশী নকল নবিসের বাবা আমার বাসায় এসেছিল। তিনি আমাকে বলে চলেন ভাই, জেলা রেজিস্ট্রার আমার ছেলেকে বদলি করেছে, তার কাছে যাব। পরে আমি তার সাথে গিয়ে রেজিস্ট্রারকে বললাম ভাই, এরা গরিব মানুষ, কাজ করে কয় টাকা পায়? আপনি এদেরকে বদলি করছেন। আমি এ ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি হিসেবে আসিনি, এলাকার লোক ও তাদের অভিভাবক হিসেবে আপনার কাছে এসেছি।
আপনি দয়া করে ওদের বদলি আদেশ বাতিল করুন। তাদের প্রতি আপনার অভিযোগ হলো, তারা কাজ করে না, আমি তাদের বুঝিয়ে বলবো। এ-কথা বলার পরপরই জেলা রেজিস্ট্রার আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে 'তিনি আমার চেয়েও বড় বিএনপি' বলে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি কখনোই কারও সাথেই এ ধরনের আচরণ করতে পারেন না। পরবর্তীতে তিনি তার ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলা জেলা রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. নুর নেওয়াজ দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ওই বিএনপি নেতা আমার সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছে, আমিও তার সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছি। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, আপনি অফিসে আসেন, অফিসে এসে কথা বলেন, বলেই মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
একজন সরকারি কর্মকর্তা নিজ দপ্তরে বসে কোনো নাগরিকের সাথে অশোভনীয় আচরণ করতে পারেন কি-না জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ভোলা জেলা সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, কখনোই পারেন না। তাদের দায়িত্বই হচ্ছে মানুষকে সেবা দেওয়া। চাকরির বিনিময়ে জনগণের টাকায় সরকার তাকে বেতন দেন। সেবা দেওয়ার জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, জনগণ হচ্ছে তাদের প্রভু। জনগণের সাথে অশোভনীয় আচরণের কোনো এখতিয়ার নেই তাদের।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি হাইকোর্টের রায় অমান্য করে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ৫ জন নকল নবিসকে ভোলার দক্ষিণ আইচায় বদলির অভিযোগে গত ২ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রার কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সেখানে কর্মরত নকল নবিসরা। একই সাথে রেজিস্ট্রারের বদলি ও নকল নবিসদের বদলি আদেশ প্রত্যাহারে দাবি জানান তারা।
টিকে/