দুবাইয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
পাচারকৃত অর্থ দিয়ে দুবাইয়ে ২২৬টি ফ্ল্যাট কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিচালনার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সিআইডি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়া তিনি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। শিল্পপ্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির তিনবারের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন সাইফুজ্জামান।
সিআইডির অনুসন্ধানকালীন প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী (৫৬) ২০১৬ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বুর্জ খলিফাসহ বিভিন্ন স্থানে ২২৬টি ফ্ল্যাট কিনেছে।
যার মূল্য ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৬৮ দিরহাম। এ ছাড়া তার স্ত্রী রুকমীলা জামানের (৪৬) নামে দুবাই এর আল বারসা সাউথ-৩ এলাকায় ‘কিউ গার্ডেন্স বুটিক রেসিডেন্সের বি ব্লক’ নামে দুটি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া যায় যার দাম ২২ লাখ ৫০ হাজার ৩৬৯ দিরহাম।
এ ছাড়া সাইফুজ্জামানের নামে ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে দুবাই ইসলামী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ফার্স্ট আবুধাবি ব্যাংকের দুটি হিসাবসহ মোট চারটি ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া যায়। এ ব্যাংক হিসাবগুলোতে বিভিন্ন অংকের দিরহাম ও মার্কিন ডলারের লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। যা তৎকালীন সময়ের মুদ্রার বিনিময় হার অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩১১ কোটি ২৬ লাখ ৬ হাজার ৭৯৫ টাকা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় জানা যায়, বিদেশে কম্পানি নিবন্ধন, বিনিয়োগ ও সম্পত্তি অর্জনের নিমিত্তে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর অনুকূলে সরকার কর্তৃক কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি। এভাবে তিনি বিদেশে সম্পত্তি ক্রয়, কোম্পানি নিবন্ধন এবং ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা করার মাধ্যমে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেছে। যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সর্বশেষে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রুকমীলা জামানসহ অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ থেকে সাতজনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় সিআইডি বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা রুজু করেছে।
অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অজ্ঞাতপরিচয় অন্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
কেএন/টিকে