রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ইমাম মাহদী দাবি করা নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে উৎসুক মানুষ তার বাড়িতে দেখতে ভিড় করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দরবারের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং জনসাধারণের ভিড় সামলাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, শুক্রবারের হামলার পর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে নুরাল পাগলার বাড়ি ও তার আস্তানা। তবে শনিবার সকাল থেকে পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে। দরবারের সামনে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ। সকাল থেকেই ধ্বংসস্তূপ দেখতে ভিড় করছেন শতশত উৎসুক নারী-পুরুষ। তবে সাংবাদিক ছাড়া ভেতরে প্রবেশে পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা নুরাল পাগলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় সেখানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়, যা মুহূর্তেই চারপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সেখানে গেলে তাদের ওপরও হামলা হয়। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়ি ও গোয়ালন্দের ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা।
পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গতকাল রাতেই গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তবে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটির উদ্যোগে ‘কালিমা, আজান, দুরুদ বিকৃতিকারী ও নিজেকে ইমাম মাহাদী দাবি করা ভন্ড নুরাল পাগলা’র আস্তানা উচ্ছেদ এবং কাবা শরীফের আকৃতিতে ১২ ফুট উঁচুতে কবর স্থাপনের প্রতিবাদে গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ সমাবেশের পরে নুরাল পাগলের মরদেহ ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ পদ্ধতিতে দাফন করা হয়েছে-এমন অভিযোগ এনে বিক্ষুব্ধ জনতা নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া, নুরাল পাগলার বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তারা। এ সময় উভয় পক্ষের সংঘর্ষ রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। খবর পেয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ও সেনবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লা পাড়া এলাকায় নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ গড়ে তোলেন নুরাল পাগলা। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করলে জনরোষ তৈরি হয়। পরে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ মুচলেকা দিয়ে তিনি এলাকা ছাড়েন। কয়েকদিন পর তিনি আবার দরবারে ফিরে কার্যক্রম শুরু করেন। গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় তার মৃত্যু হয়। ওইদিন রাতে এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে প্রথম জানাজা ও ভক্তদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতে সাড়ে ১০টার দিকে মাটি থেকে ১২ ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয় তাকে। যে স্থাপনার ওপর দাফন করা হয় সেখানে পবিত্র কাবার আদলে রং করা হয়। এ বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয় আলেম সমাজ ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ এনে ‘ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি’ গঠন করেন। এই কমিটি গোয়ালন্দ উপজেলা মডেল মসজিদসহ রাজবাড়ী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় প্রশাসনসহ জেলা প্রশাসনের কাছে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান চান।
রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, পুলিশের সরকারি কাজে বাঁধা ও গাড়ি ভাঙচুরেরর ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ আসামিদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এমকে/টিএ