বর্তমান সরকারের জন্য কী পরিণতি অপেক্ষা করছে? প্রশ্ন রনির

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের সম্মানজনক বিদায় নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তিনি বলেছেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান যারা সরকার রয়েছেন তাদের অনিবার্য পরিণতিটা কোন দিকে যাচ্ছে। তাদের জন্য কী পরীণতি অপেক্ষা করছে।’

রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিজের ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।

গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘আজকে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব এর কোনো বিষয়বস্তুর সঙ্গে বর্তমান ইউনূস সরকারের সম্পর্ক নেই। আমি এ কথাগুলো সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। সে আলোচনা করলে আপনি বুঝতে পারবেন শেখ হাসিনার জন্য কিভাবে পলায়ন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। তারপর কিভাবে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার একটা সম্মানজনক বিদায় হয়েছিল।

কিভাবে জাস্টিস সাহাবুদ্দীন তিনি দুই দুটো দায়িত্ব পালন করে সম্মানজনকভাবে কবরে যেতে পেরেছিলেন এই বাংলার মাটিতে। একইভাবে জাস্টিস হাবিবুর রহমান অসাধারণ একজন মানুষ। আমি এই তিনটি উদাহরণ দিলে আপনি বুঝতে পারবেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বর্তমান সরকারে যারা রয়েছেন তাদের অনিবার্য পরিণতিটা কোন দিকে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আগে বলি যে মানুষ কখন পালায়।

উত্তর হলো, যে মানুষ যখন খুব ভয় পেয়ে যায়। ভীষণ রকম ভয় পেয়ে যায়। প্রাণের ভয়, বেইজ্জতি হওয়ার ভয়, অপমানিত হওয়ার ভয়। তখন মানুষ পালায়। কখনো কখনো পালানোর প্রয়োজন পড়ে না।
কিন্তু পরিবেশ-পরিস্থিতি এতটা অসম্মানজনক হয়ে পড়ে। অমর্যাদা হয়ে পড়ে যে মানুষ নিজের মাথায় নিজে পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করে। কখনো কখনো বিষধর সাপের ঝাঁপির মধ্যে হাত দিয়ে নিজেকে সাপের দংশন দ্বারা বিষাক্ত করে মারা যায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘এডলাফ হিটলার যে সময়টাতে মারা গেলেন এবং আত্মহত্যা করলেন। ওই সময়টাতে কিন্তু পরাজয় তার জন্য অনিবার্য ছিল না। তিনি আরো চার-পাঁচ দিন বেঁচে থাকতে পারতেন। তারপর তিনি যদি কোথাও পালাতে চাইতেন ঠিক সেই ব্যবস্থাটা তার জন্য ছিল। তিনি পালাতে পারতেন। কিন্তু যে অহমিকা বোধ, যে দাপট, যে অহংকার তাকে পেয়ে বসেছিল, তার কাছে মনে হয়েছিল যে সেই অহমিকার জায়গাতে একটি আঁচড় লাগার পরিবর্তে মরে যাওয়া অনেক অনেক নিরাপদ। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ক্ষেত্রে একই অবস্থা হয়েছিল। যা হোক, সেটা ভিন্ন-বিকজ তাকে নিয়ে যে পরস্পরবিরোধী ইতিহাস রয়েছে সে ইতিহাসে আমরা তাকে খুব সম্মান করে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ভারতের যে রাজনীতি যে আবহাওয়া যা কিছু হলো ওটা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্য খুবই অবমাননাকর ছিল। ফলে তার অন্তর্ধান হয়ে যাওয়া, তার মরে যাওয়া, প্লেন ক্রাশে তার নিহত হওয়া এই বিষয়গুলো নিয়ে নানা রকম মিথ রয়েছে। কিন্তু মূল ব্যাপারটা হলো যে তার জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বছরগুলো সম্মাজনক ছিল না।’

গোলাম মাওলা রনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘এমনও ঘটনা ঘটেছে যে অনেক বড় বড় রাজা-বাদশাহ তারা জানতেন যে তাদের মৃত্যুর পরে লাশ তছনছ করা হবে। এ জন্য জীবিত অবস্থায় তারা অসংখ্য কবর খুঁড়ে গেছেন এবং তার শত্রুরা তন্নতন্ন করে খুঁজে তাদের লাশ পায়নি। যেভাবে চেঙ্গিস খান তার লাশ লুকিয়ে রেখেছেন হালাকু খান, মঙ্গু খান, কুবলাই খান। আমাদের এই বাংলাদেশে বহু বাদশাহ বহুবার পালিয়েছেন। কিন্তু এখানে আমাদের সম্মানটা কখনো ওই পর্যায়ে পৌঁছেনি। আমাদের এখানে আততায়ীদের হাতে রাজা-বাদশাহরা মারা গেছেন। প্রাসাদ আক্রমণ করে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের আত্মমর্যাদাবোধ কখনোই এমন পর্যায়ে ছিল না যে আমরা আত্মহত্যা করব। সুইসাইড করব। এই সম্মানের পর্যায়ে আমরা কখনো যেতে পারিনি। অথবা আমাদের সম্মান এমন যে আত্মহত্যা করব কেন? দরকার হলে পালাব। পালাতে গিয়ে ধরা পড়ব। ধরা পড়ার পরে আমাকে ধরে আনবে। জুতার মালা পরিয়ে ঘোরাবে। তবু আমি আত্মহত্যা করব না। আমরা আগে একসময় পড়তাম যে রাজার হাতে একটা আংটি থাকত হীরার আংটি। সেই আংটির সঙ্গে হীরার মধ্যে একটা বিষ লুকায়িত থাকত। রাজা যদি দেখতেন যে বিব্রতকর অবস্থা তখন তিনি সেই আংটি একটু লেহন করলে বা চোষণ করলে অমনি তিনি বিষ আক্রান্ত হতেন এবং মারা যেতেন কিন্তু এই কাহিনি রানিদের ক্ষেত্রে, এটা প্রযোজ্য।’

তিনি বলেন, ‘আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে মারা যেতেন সম্মান বাঁচানোর জন্য। কিন্তু আমাদের দেশে এটা ঘটেনি কখনো। আমাদের দেশে দেদার রাজপ্রাসাদ আক্রমণ হয়েছে। রাজপরিবারের সব সদস্য দাসী হয়ে গেছেন। বন্দি হয়েছেন। নতুন রাজার গলায় মালা পরিয়েছেন। তার সঙ্গে বাসর সাজিয়েছেন। কিন্তু আত্মহত্যা করেছেন, এ রকম ঘটনা আমি দেখিনি। রাজাদের কথা তো বললাম। প্রশ্নই আসে না। ফাঁসিতে লটকাবেন। তাদের পেটের মধ্যে চাকু ঢুকিয়ে মেরে ফেলা হবে। কিন্তু আত্মহত্যা আমাদের দেশে হয়নি। এ রকম ঘটনা ঘটেনি।’

দেশ ছেড়ে কারা পালায় এমন প্রশ্ন রেখে গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘পালানোর যে মূল কারণ সেটা হলো মানুষ পালায় জীবনের ভয়ে। তারাই পালায়, যারা জীবনকে খুব বেশি ভালোবাসে। আরেকটা কারণে মানুষ পালায়। সেটা হলো সে বেঁচে থাকতে চায় এবং ফিরে আসতে চায়। তার একটা বিশ্বাস সে রবার্ট ব্রুশের মতো আবার ফিরে আসবে। আবার যুদ্ধ করবে আবার জয় লাভ করবে এবং এটার একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ইতিবাচক অর্থে শেষ।

মানে তিনি জীবনে যতবার পালিয়েছেন যতবার পশ্চাৎ প্রসারণ করেছেন এবং প্রতিবারই তিনি ফিরে এসেছেন অধিকতর শক্তিমত্তা নিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে জাস্টিস হাবিবুর রহমান এবং জাস্টিস সাহাবুদ্দীন এই দুজনের বিদায় ছিল সবচেয়ে সম্মানজনক। এতটা সম্মান নিয়ে রাজপথ থেকে গত ১০০ বছরে আমাদের দেশের কোনো রাজপুরুষ বিদায় নিয়েছেন, এটা হয়নি। এর কারণটা ছিল এই দুজন মানুষ ছিলেন নির্লোভ। তাদের কোনো লোভ ছিল না। তাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন দ্বারা তারা ইনফ্লুয়েন্সড বা কলুষিত হননি। তারা তাদের প্রেমিকা হাসিনা ভানু তাদের প্রেমিকা কদবানু তাদের মঞ্চে মিনিস্টার বানাননি। তারা তাদের শ্যালক-শ্যালিকা-ভাতিজা তাদের ধরে ধরে এনে রাজকর্মের আশপাশে বসাননি। তারা ছিলেন একক সিঙ্গেল এবং একক হিসেবেই তারা নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন। তারা ক্ষমতায় এসে একজন বন্ধুকে খোঁজেননি। একজন আত্মীয়কে খোঁজেননি। কাউকে খোঁজেননি। ফলে তাদের কোনো লায়াবিলিটি ছিল না। দায়বদ্ধতা ছিল না। পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে তারা বিশ্বাস করেছিলেন।

ফলে এই দুজন মানুষের সম্মানজনক বিদায় হয়েছিল।’

সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘একমাত্র জিয়াউর রহমান সাহেব যদি বেঁচে থাকতেন, আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখতেন তাহলে তারও সম্মানজনক বিদায় হতো। বাকি যারা আছেন সবাই কারো প্রেমিকা বা প্রেমিক লাগবে। কারো মামাকে লাগবে। কারো শ্যালককে লাগবে। কারো ভাই-ব্রাদার মানে এই যে স্বজনপ্রীতি সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, সেটা সচিব হোক, সেটা প্রধানমন্ত্রী হোক, সেটা রাষ্ট্রপতি হোক। সবাই যার যার মতো করে এই আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যে স্বজনপ্রীতি যারা দেখিয়েছেন, একটি লোক সিঙ্গেল তারা সসম্মানে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে পারেননি। তো কাজেই এখন যারা আছেন তারা যদি এই কাজটি করে থাকেন আপনি নিশ্চিত থাকেন তারা সম্মানজনক বিদায় পাবেন না। অতীতে যারা অসম্মানিতভাবে ক্ষমতা থেকে গেছেন তাদের মধ্যে তাদের পরিণত হবে।’

তিনি বলেন, ‘এরশাদের সঙ্গে যে ক্রাইসিস টাইমগুলোতে তাকে সুপরামর্শ দিয়েছিল রক্তপাত এড়ানোর জন্য। ফলে একেবারে সবার শেষে যখন তার প্রস্থানের সময় এলো। তখন তিনি রক্তপাত এড়িয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সেভ এক্সিট নিতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার সেই সেভ এক্সিটকে বিএনপি আসলে সম্মান করেনি। যেভাবে কথা হয়েছিল সে কথা রাখেনি। বিএনপি প্রতিহিংসা দেখিয়েছে। তার ফলে এরশাদের দুর্ভোগ হয়েছে কিন্তু এরশাদের ক্ষতি হয়নি। আল্টিমেটলি বিএনপির ক্ষতি হয়েছে রাজনীতিতে। তো সেই দিক থেকে আপনি যদি অতীতের এই যে কাহিনিগুলো বললাম সেই কাহিনির সাথে সাথে ইতিহাসের কাহিনিগুলো বললাম এগুলোর সঙ্গে যদি বর্তমান সরকারের যে আচার-আচরণ, চাল-চরিত্র কর্মকাণ্ড ইত্যাদি বিচার-বিশ্লেষণ করেন তাহলে খুব সহজে বুঝতে পারবেন যে তাদের জন্য আসলে আগামীতে কী পরিণতি অপেক্ষা করছে।’

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img

রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক

কালুখালীতে বাসচাপায় প্রাণ হারাল ২ মোটরসাইকেল আরোহী Sep 08, 2025
img
৪৫তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ Sep 08, 2025
img
৩৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে দ. আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে জিতলো ইংল্যান্ড Sep 08, 2025
img
দেশে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে : হারুনুর রশীদ Sep 08, 2025
img
সংস্কার কাজে রাজনীতির অভাব টের পাচ্ছি : অর্থ উপদেষ্টা Sep 08, 2025
img
শ্যামলী ও ট্রমা নার্সিং কলেজের অনুমোদন দুই বছরের জন্য স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি সঠিক নয় Sep 08, 2025
img

সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ

ভিন্নমত মানেই শত্রু, এটাই কি আমাদের গণতন্ত্র! Sep 07, 2025
img
দুঃসংবাদ পেল পিএসজি Sep 07, 2025
img
ডিএমপিতে ৫ কর্মকর্তাকে বদলি Sep 07, 2025
img
ডাকসু নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে থাকছে কঠোর নিয়ম Sep 07, 2025
সুকুমার জানালেন ‘পুষ্পা থ্রি’-এর আপডেট! Sep 07, 2025
শিল্পার জীবনে নতুন মোড়, ‘প্রেমিক’ এলো ঘরে! Sep 07, 2025
img

ড. আব্দুল মান্নান

জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে হবে, কারণ তারা আ. লীগকে পুনর্বাসন করতে চায় Sep 07, 2025
ডাকসুর নেতৃত্ব নিয়ে শিক্ষার্থীদের বার্তা! Sep 07, 2025
"ভোটারদের ভাই ও বন্ধুরা কল দিয়ে বলছে–আমাকে ভোট দিতে" Sep 07, 2025
img
এশিয়া কাপের জন্য ভারতের জার্সি উন্মোচন Sep 07, 2025
img
উত্তর কোরিয়াকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠালো ইরান! Sep 07, 2025
img
অবশেষে এশিয়া কাপে বাদ পড়া নিয়ে মুখ খুললেন শ্রেয়াস আইয়ার Sep 07, 2025
img
ছাত্রলীগ নেতা ছেলেকে ধরিয়ে দিতে বাবার ফেসবুক পোস্ট Sep 07, 2025
img
হাসপাতাল থেকে ফিরলেন মোরসালিনদের কোচ Sep 07, 2025