কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এক সাংবাদিকের ওপর অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক গণমাধ্যম কর্মী জেলা প্রতিনিধি সাব্বির হোসেন (২৭)।
রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাংবাদিক সাব্বির হোসেন কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি হাসিবুল হোসেন শান্ত (৩০) এবং অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে হামলাকারী হিসেবে উল্লেখ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা ১১টার দিকে সাংবাদিক সাব্বির হাসপাতালের ভেতরে চলমান ছাত্র জনতার সংস্কার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলেন। দুপুর ১টার দিকে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় অভিযুক্ত হাসিবুল হোসেন শান্ত ও তার ৩-৪ জন সহযোগী হঠাৎ করে তার ওপর হামলা চালায়।
প্রথমে তারা অকথ্য ভাষায় গালি দেয় এবং দাবি তোলে যে, আগে তাদের বক্তব্য নিতে হবে। সাংবাদিক সাব্বির শান্তভাবে অনুরোধ করে বলেন, ভাই একটু অপেক্ষা করুন, আমি এখন শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি, এরপর আপনাদেরও নেব। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর।
হাসিবুল ও তার সহযোগীরা সাংবাদিকের শার্টের কলার ধরে এলোপাথাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। এতে সাংবাদিক সাব্বিরের নাক-মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম হয় এবং ঠোঁট কেটে রক্তক্ষরণ হয়। পরে আশপাশে থাকা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।
পরে অভিযুক্ত হাসিবুল হোসেন শান্ত স্বীকার করেন যে, সাংবাদিককে চিনতে না পারায় এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির পুরনো কমিটিতে কিছু অবিপ্লবী যুক্ত হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম সাব্বির তাদের লোক। বুঝতে পারিনি যে তিনি একজন সাংবাদিক।
ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন সদ্য বিলুপ্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন। তিনি সাংবাদিকের উপর হামলার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সাংবাদিকের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
আহত সাংবাদিক সাব্বির হোসেন বলেন, সকাল থেকে আমি শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত ছিলাম। হঠাৎ করেই তারা আমার উপর হামলা চালায়। আমি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছি, ঠোঁট কেটে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। সাংবাদিকদের যদি ন্যূনতম নিরাপত্তা না থাকে, তবে আমরা কিভাবে দায়িত্ব পালন করব? বারবার সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটছে অথচ প্রশাসন নীরব।
এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক মহল তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা জানান, স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকরা দিন দিন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, এ অভিযোগের বিষয়ে সদর মডেল থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এসপি স্যার বিষয়টি জানিয়েছেন। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এমকে/এসএন