বহুজাতিক কোম্পানির অর্থপাচার রোধে আরও শক্তিশালী নজরদারি গড়ে তুলতে উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। যা অর্থ পাচার রোধ করতে কাজ করবে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের অর্থ পাচার ঠেকাতে কঠোর নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. কবির আহাম্মদ।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের জন্য ‘বাংলাদেশে কার্যরত বহুজাতিক কোম্পানি থেকে ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচার প্রতিরোধ’শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এই কর্মকর্তাদের এই পরামর্শ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিচালক মাহবুবুল আলম সভাপতিত্বে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কবির আহাম্মদ বিশ্বায়নের যুগে ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের গুরুত্ব এবং এর অপব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অর্থ পাচারের ঝুঁকি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো অনেক সময় ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের অপব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করে। যা দেশের রাজস্ব ভিত্তি ক্ষুণ্ন করে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। তিনি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীদের এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখার পরামর্শ দেন।
তিনি এ ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে মানব সম্পদ তৈরিতে বিনিয়োগ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আর্থিক খাতের সুরক্ষায় এ খাতে উদ্ভূত অভিনব জাল-জালিয়াতি সম্পর্কে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করতে গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে এসব জাল-জালিয়াতি উদ্ঘাটনে ফরেনসিক ইন্সপেকশন কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এ ধরনের প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন পর্যবেক্ষণে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করবে।
বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের পরিচালক মাহবুবুল আলম ট্রেড বেইজড মানিলন্ডারিং ও হুন্ডি প্রতিরোধের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সংকট নিরসন ও বাজারে স্থিতিশীল রাখতে বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের ভূমিকা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সংকট নিরসনে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতার জন্য ডেপুটি গভর্নরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। একই সঙ্গে তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে দেশে ও বিদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রতিও গুরুত্বারোপ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চায়।
কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এম রাশিদ জামান অ্যান্ড কোংয়ের ম্যানেজিং পার্টনার মো. কামরুজ্জামান এফসিএ। তিনি প্রশিক্ষণার্থীদের ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের মৌলিক ধারণা দেন। এর মধ্যে ‘আর্মস লেন্থ প্রাইস’ সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের সংজ্ঞা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। কেন ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের নিয়মকানুন জানা প্রয়োজন এবং কীভাবে এর মাধ্যমে লভ্যাংশ দেশের বাইরে স্থানান্তর করা হয় এই বিষয়ে তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রশিক্ষণের প্রথম সেশনে ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের পটভূমি, বাংলাদেশে এর প্রয়োগ, এবং আন্তর্জাতিক লেনদেনের তথ্য ও রেকর্ড সংরক্ষণের পদ্ধতি এবং দ্বিতীয় সেশনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের যেমন: ব্রাঞ্চ অফিস, কর-অবকাশপ্রাপ্ত কোম্পানি, ইপিজেড কোম্পানির জন্য রিপোর্টিং প্রয়োজনীয়তা, বেজ এরোশন অ্যান্ড প্রফিট শিফটিং এবং ডিজিটাল অর্থনীতির মতো আধুনিক চ্যালেঞ্জসহ প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।