বিএনপি যে সরকার গঠন করবে এটা কেউ শপথ করে বলেছে, প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, অনেকেই বলে থাকেন, সংশোধনী প্রস্তাবগুলো বিএনপি ক্ষমতায় এলে বাস্তবায়ন করবেন না। আমি বলি, বিএনপি যে সরকার গঠন করবে—এটা কেউ শপথ করে বলেছে? তাহলে আমাদের কেন দায়ী করেন? আমি বলবো, যারা জাতীয় সংসদে সামনে প্রতিনিধিত্ব করবেন, তারা এগুলো বাস্তবায়ন করবেন। শব্দগুলো এভাবে হওয়া উচিত।’

এ সময় সালাহউদ্দিন বলেন, ‌‘সংবিধান সংশোধন নিয়ে কেউ কেউ বলছে, প্রতিশ্রুতি যে বাস্তবায়ন হবে তার নিশ্চয়তা কী? আমার প্রশ্ন, প্রতিশ্রুতি যে বাস্তায়ন হবে না—সেটা কে লিখে দিয়েছে? প্রতিশ্রুতি বাস্তাবায়নের জন্যই শুধু ফ্যাসিবাদ বাদে সরকার ও জনগণ সবাই মাসের পর মাস চেষ্টা করেছে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, অনেকে প্রস্তাব দিয়েছে। এটা ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে করা হচ্ছে। এগুলো আনুষ্ঠানিকভাব সিগনেচার করা থাকবে বাস্তবায়নের জন্য। কেউ না চাইলেও আমাদের এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে আমাদের দলের কমিটমেন্ট হিসেবে।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ভূমিকা প্রধানত নির্বাচন কমিশনের। সংবাবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, সেই হিসেবে নির্বাচন আয়োজনে নির্বাচন কমিশন কোনো সহযোগিতা চাইলে সকল কর্তৃপক্ষ তা দিতে বাধ্য। অতীতে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কারণ, নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা ছিল বেশি। এখন সেই পরিবেশ নেই। কেয়ার টেকার গভর্মেন্ট প্রতিষ্ঠিত না হলেও অন্তর্বর্তী সরকার কেয়ার টেকার ব্যবস্থার আদলে কর্ম পরিচালনা করছে। যখন কেয়ারটেকার প্রতিষ্ঠিত হবে, তখন কেয়ারটেকার নির্বাচন আয়োজন করবে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘বর্তমান সরকার যে নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা দিয়েছে এবং সেই অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে, তাতে করে এখন পর্যন্ত সেই সময়সীমা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন পরিচালিত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ অনুযায়ী তাদের কাজ করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন; সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এগুলো কি পরস্পর নির্ভরশীল বিষয়। এখানে পরিষ্কার করে বললো, এটা পরস্পর নির্ভরশীল বিষয় নয়। নির্বাচনের বিষয়টি নির্বাচনি আইন, নির্বাচনি ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু বর্তমান প্রেক্ষিতে অতীতের অভিজ্ঞা থেকে দেখা যায়, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা চ্যালেঞ্জ। সে জন্য এই আইনকানুনগুলো ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে যে প্রস্তাবগুলো সংশোধনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সেগুলো অবশ্যই নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। এর মধ্যে আরপিও ও আচরণবিধি দুটো প্রধান বিষয় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অন্যান্য বিধি যেগুলোতে সংশোধন আনা দরকার সেগুলোতেও আনা হচ্ছে। পরে সংবিধানসহ অন্যান্য বিষয়ে সবাই সম্মত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হবে। তবে সেগুলোর ওপর নির্ভর করে এবারের নির্বাচনটা হচ্ছে না।’

নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত বিষয়ের সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন যেন নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত থাকে, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা এবং বিচার বিভাগের একজন প্রতিনিধিসহ আরও দুই জন- একজন ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধী দলীয় একজন প্রতিনিধি থাকবেন। এখানে রেশিওটা এমনভাবে করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতা, একজন বিচার বিভাগের প্রতিনিধি যিনি প্রধান বিচারপতি দ্বারা মনোনিত হবে। এই বডিটা সর্বসম্মতভাবে নির্বাচন কমিশন সিলেকশন করবে। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ দেবেন।’

কেয়ার টেকার গভর্মেন্ট নিয়ে পুরো জাতি একমত বলেও এসময় সালাহউদ্দিন জানান। তিনি বলেন,‘যদি কেয়ার টেকার সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, প্রকৃত স্বাধীন নির্বাচন কমিশন হয় এবং স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত হয়, ফ্রিডম অব প্রেস এখন যেটা আছে সেটা যদি বহলা থাকে, তবে এই চারটাই সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের জন্য রক্ষাকবচ হবে। চাইলেও কোনো সংসদ ফ্যাসিবাদী আচরণ করতে পারবে না। আর চাইলেও সেই রকম পার্লামেন্ট হবে না।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার নিয়ে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই। যেগুলো আশু বাস্তবায়নযোগ্য যেগুলো নির্বাহী আদেশ ও অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যায়, সেগুলো করা হচ্ছে। তবে স্পিড আরও বাড়াতে হবে। এটা সরকারে দায়িত্ব। যেগুলো আশু বাস্তুবায়ন যোগ্য নয়, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ সরকার নিতে পারে। না পারলে পরবর্তী সরকার করবে।’

তিনি বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনী সংক্রান্ত যেকোনো প্রস্তাব অনুমোদন করার বৈধ ফোরাম জাতীয় সংসদ। কিন্তু এ বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাবগুলো আমরা কি করবো, এর বাইরে যদি কোনো প্রক্রিয়া বা ফোরাম থাকে, সেগুলো নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে, আজকেও আলোচনা হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি বের করা গেলে আমরা তাতেও একমত।’

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, এই সরকার গঠিত হওয়ার আরও এক দেড় বছর আগে। ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে আমরা যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো দিয়েছি, তার অধিকাংশই বিএনপির ৩১ দফায় আছে। কিছু কিছু নতুন প্রস্তাব আছে। ৩১ দফায় আরও কিছু সংস্কার প্রস্তাব আছে। জনগণ আমাদের ম্যানডেট দিলে সেগুলো আমাদের করতে হবে। ৮২৬ টি সংস্কার প্রস্তাবের ৫১টা বাদে সবগুলোতে আমরা একমত হয়েছি। ১১৫টা সংস্কার প্রস্তাবে আমরা ভিন্ন মত বা মন্তব্যসহ একমত হয়েছি।’

শেষ তিনি বলেন, ‘আমরা সর্ব বিষয়ে সবাই একমত নাও হতে পারি, তবে দিনশেষে দেশের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে আমরা এক জায়গায় উপণিত হতে পারবো, এই বিশ্বাস আমার আছে।’

এসএন 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বরিশালে আধিপত্য নিয়ে ছাত্রদল-শিবির মারামারি, আহত ২৫ Sep 11, 2025
img
১৪ অতিরিক্ত ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে বদলি Sep 11, 2025
img
মাইলস্টোনের ঘটনায় ছাড়পত্র পেলেন আরও ৩ জন, চিকিৎসাধীন ১৩ জন Sep 11, 2025
img
বক্স অফিসে কত আয় করল ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ Sep 11, 2025
img
জেন-জিদের সঙ্গে আবারও আলোচনায় নেপালি সেনাবাহিনী Sep 11, 2025
img
ফ্ল্যাট বরাদ্দে দুর্নীতি : সচিব পদের ১২ কর্মকর্তাকে দুদকে তলব Sep 11, 2025
img
বাংলাদেশে বেড়েছে ভারতের বিদ্যুৎ আমদানি Sep 11, 2025
img
লাদাখে ‘ব্যাটল অব গালওয়ান’ লুকে ধরা দিলেন সালমান খান Sep 11, 2025
img
স্বাস্থ্যখাতে ‘দুর্নীতির হোতা’ মিঠুকে নেওয়া হয়েছে আদালতে Sep 11, 2025
img

জাকসু নির্বাচন

বাগছাস মব সৃষ্টি করে শিবিরের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে: মাজহারুল ইসলাম Sep 11, 2025
img
শিক্ষার্থীদের সরকারবিরোধী আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে দেশছাড়া জোকোভিচ Sep 11, 2025
img
প্রতিটা মুহূর্ত ভয়ে কাটাচ্ছি : সামান্থা Sep 11, 2025
img
ডাকসু নির্বাচনে বাম ও ভারতপন্থীদের কবর রচিত হয়েছে : ফয়জুল করীম Sep 11, 2025
img
কুড়িলে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ Sep 11, 2025
img
জাকসুর ভোট গণনা হবে হাতে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার Sep 11, 2025
img
বিশেষ ফ্লাইটে নেপাল থেকে রওনা হয়েছে জাতীয় ফুটবল দল Sep 11, 2025
img
জাকসু নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ছাত্রদলের Sep 11, 2025
img
গণভোটসহ ৪ উপায়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ করলো ঐকমত্য কমিশন Sep 11, 2025
img
বিমানবন্দর থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তার Sep 11, 2025
img
শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব নয়: মাহবুব জুবায়ের Sep 11, 2025