জুলাই চার্টারকে ঘিরে একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হবে : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, গত এক বছর আগে একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ১৪০০ মানুষ জীবন দিয়েছে, তাদের রক্ত, তাদের পরিবারের কান্না এখনো বন্ধ হয়নি। অতএব সেই আকাঙ্ক্ষার জায়গাটা কেন আমি পাঁচ বছরের জন্য ডেফার করে দেব। হাইবারনেশনে পাঠিয়ে দেব? আর যেগুলো একমত হওয়ার মতো না, সেগুলো পরবর্তীতে হবে।

এখন বলা হচ্ছে যে বিএনপি যেটা বোধ করছে, সাংবিধানিক অনেক বিষয়ে হাত দিতে হবে, যেটা সংসদ ছাড়া সম্ভব না।

আমরা এটার সাথে একমত না। আমরা বোধ করছি এই সরকারটা একটা গণঅভ্যুত্থানের ম্যান্ডেটে আসা সরকার। সংবিধানের ১০৬ এর ঘামে ভরা ওই ক্যান্টোনমেন্টে বইসা জুম মিটিং কইরা রায় দেওয়ার সরকার এই সরকার না। এই সরকার গণঅভ্যুত্থানের সরকার।

অতএব যুদ্ধ গণঅভ্যুত্থান মুক্তির লড়াই তারা প্রত্যেকে নতুন করে ম্যান্ডেট দেয় আমাদেরকে। অতএব সংবিধান কাঠামোগতভাবে অলরেডি মরে গেছে। এই সংবিধান ডিসফাংশনাল হয়ে গেছে। আমি ধারণা করছি, জুলাই চার্টারকে ঘিরে একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।

যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিএনপি বড় দল আকারে।

গতকাল শুক্রবার সকালে বরিশাল প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, কারণ হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন তার সবচেয়ে বড় এক্সাম্পল। জন আকাঙ্ক্ষাকে যদি আমরা রিড করতে না পারি, সময়কে যদি রিড করতে না পারি, ৯১ অথবা ২০০১-এর মানদন্ড দিয়ে যদি ২০২৫ কে পড়বার চেষ্টা করি, তাহলে এই পড়াটা ভুল হবে আমাদের। আমরা বারবার বিএনপির নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানিয়েছি দেশের স্বার্থে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেভাবে ঐক্যমতের ভিত্তিতে অনেক কাজ করেছেন, আপনারা ছাড় দিয়েও হলেও এই জায়গাগুলোতে আসেন।

আমরা একসাথে কাজ করি কারণ একসাথে কাজ করলে আপনি সবচেয়ে বেশি বেনিফিশিয়াল হবেন। তার থেকে বেশি হচ্ছে জাতি উপকৃত হবে। সবাই মিলে হবে এবং এটাকে কেন্দ্র করে যে বিভেদের রাজনীতি শুরু হচ্ছে, দ্বন্দের রাজনীতি শুরু হচ্ছে, সেটা আসলে থাকবে না।

তাই আমরা বারবার চেয়েছি যে কিভাবে বাস্তবায়িত হবে সে আলোচনাটা চলছে। আমাদের পক্ষ থেকে দুইটা সবচেয়ে বড় প্রেফারড অপশন। অনেকগুলো অপশন আছে তার ভিতরে বেস্ট অপশন হচ্ছে আপনার গণপরিষদ নির্বাচন করেন, এই পুরো জুলাই চার্টারের অধীনে নির্বাচন হয়ে যাবে। কারণ জুলাই চার্টারই হচ্ছে নির্বাচনের একমাত্র মানদন্ড।

তিনি আরো বলেন, কারণ ২৪-এ তো নির্বাচন একটা হয়েছে। সংবিধান মোতাবেক, আইন মোতাবেক, নির্বাচন কমিশন মোতাবেক তো নির্বাচন আরেকটা ২৯-এ হওয়ার কথা। তাহলে কিসের ভিত্তিতে আমি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাই? ডাকসু নির্বাচনকে যেভাবে ইসলামপন্থীদের বিজয়, জামাত শিবিরের বিজয়, তারপরে হচ্ছে এই মানে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের উত্থান, দক্ষিণপন্থীদের উত্থান। এইভাবে পড়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আমি মনে করি যে, এই পড়ার গ্রামারটা হচ্ছে তরুণদেরকে না বুঝতে পারার সমস্যা হবে। যেভাবে আওয়ামী লীগ গণঅভ্যুত্থানকে বলছে না, যে এটা জামাত শিবিরের একটা ষড়যন্ত্র। এটা আমেরিকার একটা ষড়যন্ত্র। এটা ওই বিএনপি জামাত সবাই মিলে একটা ষড়যন্ত্র করছে। গণঅভ্যুত্থানকে যেভাবে আওয়ামী লীগ বুঝতে পারছে না। ডাকসু নির্বাচনকেও বিএনপিসহ অনেক বুদ্ধিজীবী বাম বলয়ের লোকরা সোকলড সেকুলার লিবারালরাও বুঝতে পারছে না। অতএব এই যে দুই নাম্বারি চক্কর এই চক্করের পলিটিক্স কিন্তু এখন আর চলবে না। এটা আমাদের সবার জন্য লেসন। যেই যেই দলের রাজনীতি করি নূন্যতম স্বচ্ছতা ভদ্রতা সততা যদি না থাকে আগামী দিনের পলিটিক্স ঠিকাদারির রাজনীতি দিয়ে করতে পারবেন না।

এবি পার্টির এ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঠিকাদারির পলিটিক্স ইজ ডেড। ৭১ ব্যবসা, ২৪ ব্যবসা, চেতনা ব্যবসা এই ব্যবসা কেনাবেচার ব্যবসা দিয়ে আপনি পলিটিক্স করতে পারবেন না।

আমরাও পারবো না। পলিটিক্সে স্বচ্ছ হইতে হবে এখন আপনার। যেই ভদ্র বিনয়ী স্বচ্ছতা আছে কথা কাজে মিল আছে যাকে দেখে মানুষ মনে করে যে না এই লোকটা আমার, আমার জন্য কাজে লাগবে তাকে মানুষ দলমত ছাড়া ভোট দেবে। ওই মার্কা দেইখা ভোট দেওয়া, দল দেখা, ভোট দেওয়া এইটা তরুণরা দিবে না। এখন আর এবং দেখেন যেই তিনটা সম্পাদকীয় পদে শিবির হাসছে কারা জিতছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জিতছে। কোন প্যানেল থেকে যেতে নাই তাহলে দেখেন এই যে ভোটিং প্যাটার্ন এই টোটাল ডাকসু নির্বাচনটা কিন্তু আগামী দিনের রাজনীতি একটা নির্বাচনী গ্রামার আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। আমরা কেউই যেন এটা ৯১ ৯৬ ২০০১-এর ম্যাট্রিক্স দিয়ে এটাকে না মাপি। মাপলে সবাই ভুল করব। এটাই একটা নতুন ম্যাট্রিক্স। আগামী দিনের রাজনীতি এটাই ভিত্তি করে আগামী দিনের প্রত্যেকটা জাতীয় নির্বাচন স্থায়ী নির্বাচন হবে।

দেশ কিন্তু শান্ত হয় নাই,এখনো প্রচন্ড অশান্ত হয়ে গেছে।আমরা কিন্তু এখনো ভলকানোর উপরে বাস করছি । যদি মনে করে থাকেন ফেব্রুয়ারির পরে দেশ সুইজারল্যান্ড হয়ে যাবে,একদম জান্নাতি পরিবেশ বিরাজ করবে,মোটেই তা হবে না। কোনো সময় এখানে আবার নেপাল,শ্রীলঙ্কা,ইন্দোনেশিয়া,জর্জিয়া ফিরে আসতে পারে।

অতএব সকল রাজনৈতিক দলকে মাথায় রাখতে হবে, তরুণরা পলিটিক্যালি অনেক কনশাস। প্রিপেয়ারড রাস্তায় নেমে আসার জন্য। এবং এই তাদের খাইসলতকে যদি আপনারা ট্যাগ দেন, পাকিস্তানি বানান, মৌলবাদী বানান, এই রাজনীতি পরাজিত হয়ে গেছে।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
রাকসু: মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আজ, কাল চূড়ান্ত প্রার্থিতা প্রকাশ Sep 13, 2025
img
৫ বছরেই দেশকে সোনার খনিতে রূপান্তর সম্ভব: বাণিজ্য উপদেষ্টা Sep 13, 2025
img
কুয়েতে বাংলাদেশিসহ ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর Sep 13, 2025
img
নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী বিমান ছিনতাই করেছিলেন! Sep 13, 2025
img
জাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলের নতুন সময় ঘোষণা করল প্রধান নির্বাচন কমিশনার Sep 13, 2025
img
‘উৎসব’ এর অধ্যায় পেরিয়ে এবার ভৌতিক গল্পে দেখা যাবে আফসানা মিমিকে! Sep 13, 2025
img
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসানকে বিদায় সংবর্ধনা Sep 13, 2025
img
এনসিএলের শুরুতে থাকছেন না মিরাজ! Sep 13, 2025
img
পুলিশের সাবেক ডিআইজি একেএম নাহিদুল ইসলাম গ্রেপ্তার Sep 13, 2025
img
চিত্রনায়ক আলমগীরের নামে ভুয়া আইডি, সতর্ক করলেন আঁখি Sep 13, 2025
img
ডাকসু নির্বাচনে ভরাডুবি নিয়ে হতাশা প্রকাশ এনসিপি নেতাদের Sep 13, 2025
img
এনসিএল ম্যাচ দিয়ে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম Sep 13, 2025
img
‘কিং’ এর শুটিং থামিয়ে হঠাৎ দেশে ফিরছেন শাহরুখ খান! Sep 13, 2025
img

শচীন টেন্ডুলকারের নাকচ

বিসিসিআই সভাপতির দৌড়ে হরভজন সিং Sep 13, 2025
img
এই সংবিধানটা বদলাতে হবে : সারোয়ার তুষার Sep 13, 2025
img
অবশেষে ভারতে মুক্তি পাচ্ছে ফাওয়াদ খানের সেই নিষিদ্ধ সিনেমা! Sep 13, 2025
img
জাতি হিসেবে আমরা সুবিধাবাদী ও স্বার্থপর : নুর Sep 13, 2025
img
ভারতের ‘বি’ দলও পাকিস্তানকে হারাতে পারবে : ওয়াসান Sep 13, 2025
img
সিরিয়াকে বিপুল পরিমাণ তেল দিচ্ছে সৌদি আরব Sep 13, 2025
img
ইলন মাস্ক বনাম মাইক্রোসফট : চার্লি কার্ক ইস্যুতে নতুন বিতর্ক Sep 13, 2025