নির্বাচনকে সামনে রেখে এক ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে : জাহেদ উর রহমান

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান। তিনি বলেছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনীতিতে উত্তেজনা, অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য সংঘাতের আভাস স্পষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে আটটি দলের যুগপৎ কর্মসূচি ঘোষণা এবং জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলার ঘটনাকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে দেখছেন।

সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেল জাহেদস টেইক-এ এসে তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলেন।

জাহেদ উর রহমান বলেন, গতকালের একটি খবর খুবই সিগনিফিক্যান্ট, আটটি রাজনৈতিক দল একত্রিত হয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এই দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জামায়াতে ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, চরমোনাই পীরের দল, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (দ্বি-ভাগে বিভক্ত), গণঅধিকার পরিষদ (নুরুল হক নুর), এবি পার্টি এবং নেজামে ইসলাম পার্টি। এই দলগুলোর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দাবি, পিআর (প্রতিনিধিত্ব অনুপাতে আসন বরাদ্দ) বিষয়ক মতপার্থক্য এবং সবচেয়ে বিতর্কিত দাবি, জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিষিদ্ধের আহ্বান।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিই এই মুহূর্তে মূল সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে।আওয়ামী লীগকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে যদি তাদের নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে, তাহলে একই যুক্তিতে তাদের ‘দোসর’ জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্নও ওঠে। এই যুক্তি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এই দলগুলো একত্র হয়ে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। যদি এই চেষ্টা সফল হয়, তাহলে নির্বাচনী মাঠের ভারসাম্য সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর মতো দলগুলোর জন্য এটি কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনতে পারে।

আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রস্তুতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিএনপি এখনও তাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেনি, ফলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে কাজ করলেও সেই প্রচার কার্যত অনিশ্চয়তার মধ্যে চলছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নিশ্চিতভাবে প্রচারণা চালানো আর অনিশ্চয়তা নিয়ে মাঠে নামার মধ্যে পার্থক্য আছে। এদিকে জামায়াতে ইসলামী প্রায় ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবং তারা মাঠে সক্রিয় রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

জাহেদ উর রহমান বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে যদি সংসদ ছাড়াই প্রেসিডেনশিয়াল ডিক্রির মাধ্যমে কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করার চেষ্টা হয়, তাহলে সেটি একটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে। বিএনপির এই আপত্তি অযৌক্তিক নয়।

তিনি বলেন, এর আগে এরশাদ পতনের সময় শাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে একবার এমন নজির স্থাপন হয়েছিল, যেখানে পরবর্তীতে একাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রেটিফিকেশন করা হয়। তবে এমন সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

সবচেয়ে বড় আশঙ্কার জায়গা হিসেবে তিনি মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শত্রুতা ও বিশ্বাসহীনতা বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা যে গণতান্ত্রিক পরিবেশের কথা বলছিলাম ৫ আগস্টের পর, সেখানে সহাবস্থান, বিতর্ক ও মতপার্থক্যের মধ্যে একটা সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। সে আশার বিপরীতে এখন শত্রুতার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

তিনি বলেন, এভাবে রাজনৈতিক দলগুলো যদি পরস্পরের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়, তাহলে বাংলাদেশ একটি গভীর সংকটে পড়তে পারে। এতে উপকৃত হবে কেবল তারা, যারা বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা চায়। বাংলাদেশে একটি ‘কেওটিক পলিটিক্যাল এনভায়রনমেন্ট’ তৈরি হওয়াটাই ভারতের স্বার্থে কাজ করবে। যদি দেশে বিশৃঙ্খলা বাড়ে, তাহলে আওয়ামী লীগকে তুলনামূলকভাবে ‘স্থিতিশীলতার প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরা সহজ হবে, এটাই হতে পারে ভারতীয় স্ট্র্যাটেজি।

তিনি বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার ভারতের কাছে বরাবরই মন্দের ভালো বিকল্প। কিন্তু তার চাইতেও বড় সুবিধা তারা পাবে যদি বাংলাদেশ রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় ডুবে যায়। সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলো যেন শত্রুতার জায়গা থেকে না বরং আলোচনার জায়গা থেকে এগিয়ে আসে। না হলে আমরা নিজেরাই নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনব।

তিনি আরো বলেন, এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ঢুকে গেলে শেষ পর্যন্ত জিতিয়ে দেওয়া হবে তাদের, যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, যারা দেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করে।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায় লাটভিয়া Sep 14, 2025
img
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছে সরকার : অ্যাটর্নি জেনারেল Sep 14, 2025
img
দুর্নীতির মামলায় স্ত্রীসহ ছাগলকাণ্ডের মতিউর রহমান রিমান্ডে Sep 14, 2025
img
আমি শিবের ভক্ত, বিষ গিলে ফেলব: মোদি Sep 14, 2025
img
রাকসুর ভোট গণনা ওএমআর মেশিনেই হবে: প্রধান নির্বাচন কমিশনার Sep 14, 2025
img
ভারতের বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে নামতে পারে পাকিস্তান Sep 14, 2025
img
ভারতের টপ অর্ডার দ্রুত আউট করাই জয়ের চাবিকাঠি: মালিক Sep 14, 2025
img
বাজে হারে হতাশ হলেও সুপার ফোরের আশা রাখছেন নান্নু Sep 14, 2025
img
ইনু-হানিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা ২৮ সেপ্টেম্বর Sep 14, 2025
img

সাগর-রুনি হত্যা

১২১ বারের মতো পেছালো তদন্ত প্রতিবেদন Sep 14, 2025
img
শহীদ মিনারে ফরিদা পারভীনকে শেষ শ্রদ্ধা Sep 14, 2025
img
বিক্ষোভ-সহিংসতায় নেপালের পর্যটন খাতে ২৫০০ কোটি রুপির ক্ষতি Sep 14, 2025
img
৩৩ বছর পর নতুন নেতৃত্ব, শিক্ষার্থীদের স্বপ্নের ক্যাম্পাস গড়াতে চান ভিপি-জিএস Sep 14, 2025
img
সাংবাদিক পরিচয়ে থাকা মৌলভীবাজারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার Sep 14, 2025
img
রজনীকান্তের সিনেমায় আমিরের অভিনয় নিয়ে বিতর্ক Sep 14, 2025
img
৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সচিবালয়-যমুনা ঘেরাও Sep 14, 2025
img
জুলাইয়ের শহীদ পরিবারের বরাদ্দ অর্থ এক বছরেও হস্তান্তর হয়নি: শিবির সেক্রেটারি সাদ্দাম Sep 14, 2025
img
ঢামেকে একসঙ্গে ৬ সন্তানের জন্ম দিলেন নারী Sep 14, 2025
img
চাকসুর নির্বাচনের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৭৬৮ Sep 14, 2025
ছাত্রদল কি পাশে ছিল না আবিদের? Sep 14, 2025