জুলাই সনদ না মানলে প্রার্থিতা বাতিলের প্রস্তাব জামায়াতের

জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে জুলাই জাতীয় সনদ মেনে চলা এবং বাস্তবায়নের শপথ করতে হবে। হলফনামা দিতে ব্যর্থ হলে প্রার্থিতা বাতিল হবে। নির্বাচনে জুলাই সনদবিরোধী প্রচার চালালে প্রার্থিতা বাতিল এবং রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে। এসব প্রস্তাব করেছে জামায়াতে ইসলামী।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ দলটির এই প্রস্তাবের কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটা প্রস্তাব মাত্র। এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।’
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে ‘প্রভেশিয়াল সাংবিধানিক আদেশ-২০২৫’ জারির যে প্রস্তাব জামায়াত করেছে, তাতে এসব বিধান যুক্তের কথা বলা হয়েছে।

গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন ঐকমত্য কমিশনকে লিখিতভাবে এই প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াত।

বিএনপি সংবিধান সংক্রান্ত সংস্কার আগামী সংসদে বাস্তবায়ন করতে চায়। জামায়াত আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে, সংবিধান সংস্কারসহ জুলাই সনদে থাকা ৮৪টি সংস্কারের বাস্তবায়ন চায়। যদিও বিএনপি বলছে, সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধনের উপায় নেই।

তবে জামায়াত সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জুলাই অভ্যুত্থানকে জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করেছে। দলটির মতামত, জুলাই সনদও হবে জনগণের অভিপ্রায়ের ফল। যা সংবিধানের সমমর্যাদার হবে। ফলে এই সনদ সবাইকে মানতে হবে। তাই সংবিধানের মতো সনদকে মান্য করার হলফনামা দিতে হবে প্রার্থীকে।

কাউকে জুলাই সনদ মানতে বাধ্য করা গণতান্ত্রিক কি না- প্রশ্নে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘জুলাই সনদ প্রণীত হয়েছে গণতন্ত্রের সুরক্ষা। বিপরীতে যা রয়েছে, তা ফ্যাসিবাদ।’

জামায়াত একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য কাউকে মুক্তিযুদ্ধ মেনে নিতে বাধ্য করা যায় কি না- এই প্রশ্নে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশ এবং সংবিধান। জামায়াত তা মেনেই রাজনীতি করছে। সুতরাং জামায়াত মুক্তিযুদ্ধকে মেনে রাজনীতি করছে। মুক্তিযুদ্ধকে না মানলে বাংলাদেশকে অস্বীকার করা হয়। নির্বাচন তো পরের কথা। যারা বাংলাদেশের রাজনীতি করবে, তাদের জুলাইও মেনে রাজনীতি করা উচিত। এছড়া রাজনীতিতে পথ চলা কঠিন।’

কাউকে জোর করে শ্রদ্ধা করতে বাধ্য করা যায় কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'জুলাই চেতনা থেকে আমরা এই প্রস্তাব দিয়েছি। অপব্যাখ্যার সুযোগ নেই। আলোচনার মাধ্যমে এটার সমাধান হবে।'

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগকে উৎখাতের মাধ্যমে জনগণের কাছে ‘কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার’ (সংবিধান তৈরি, পরিবর্তন বা বাতিলের ক্ষমতা) হস্তান্তর হয়েছে। এ ক্ষমতার বলে ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়, জনগণের ‘কন্সটিটুয়েন্স পাওয়ারে’ গঠিত সরকারের সাংবিধানিক আদেশ জারির ক্ষমতা রয়েছে। এ আদেশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর গণ্য হবে।

জনগণ সংবিধান সংস্কারের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে, যা জুলাই সনদে ধারণ করা হয়েছে। জারিকৃত সাংবিধানিক আদেশ, বিদ্যমান সকল আইনের ওপরে প্রাধান্য পাবে। সংবিধানসহ কোনো আইনের যতখানি সাংবিধানের আদেশের সঙ্গে অসামাঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তা বাতিল হবে। নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ সাংবিধানিক আদেশে আওতাধীন হবে। কোনো উপায়ে সাংবিধানিক আদেশকে বদল বিকৃত করার প্রচেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য হবে।

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক আদেশ অধীনে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে নির্বাচন আযোজন করবেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী এবং দলকে সাংবিধানিক আদেশ মেনে চলা এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নে হলফনামা দিতে হবে। এরূপ হলফনামা দিতে ব্যর্থ হলে, নির্বাচনে অযোগ্য হবে। আগামী সংসদে তিন চর্তুথাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নতুন সংবিধান গ্রহণ এবং গণভোটে অনুমোদন হওয়া পর্যন্ত, সাংবিধানিক আদেশ বহাল থাকবে। নতুন সংবিধান সাংবিধানিক আদেশের সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ হবে। নতুন সংবিধান গ্রহণের পরও সাংবিধানিক আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

পিএ/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img

মানবপাচারের মামলা

সাবেক মন্ত্রী ইমরানসহ ১০৩ জনের বিরুদ্ধে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ Nov 03, 2025
img
দ্য গ্রেট পিরামিডের পাশে বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর উদ্বোধন করল মিশর Nov 03, 2025
img
মুন্সীগঞ্জে বিএনপির ২ গ্রুপের সংঘর্ষে প্রাণ হারাল যুবক Nov 03, 2025
img

ডাকসুর বিবৃতি

তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে বিএনপি Nov 03, 2025
img
বৃথা গেলো ভলভার্টের সেঞ্চুরি, আফ্রিকাকে হারিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ী ভারত Nov 03, 2025
img
কাস্টমস কর্মকর্তা শহিদুজ্জামান বরখাস্ত Nov 03, 2025
img

টেবিল টেনিস

থাই কোচের বিদায়, ইরানি কোচ আনতে চায় বাংলাদেশ Nov 03, 2025
img
১১ দেশে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন চলছে Nov 03, 2025
img
৪ দিনের পূর্বাভাসে লঘুচাপ নিয়ে নতুন তথ্য Nov 03, 2025
img
আরও ১০০ বছর রাজত্ব করো- শাহরুখকে ফারাহ Nov 02, 2025
img
বিএনপিকে আলোচনায় বসতে জামায়াতের আহ্বান Nov 02, 2025
img
রাজধানীতে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ Nov 02, 2025
img
১৬ বছর পর আমন্ত্রণ ফেরানোর পর এবার বিটিভিতে গেলেন আসিফ Nov 02, 2025
img
নতুন রূপে শাহরুখ, ‘কিং’ সিনেমার টাইটেল ট্র্যাকে মুগ্ধ দর্শক Nov 02, 2025
img
ভুল করে গোল খাওয়ার পর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজের মন্তব্য Nov 02, 2025
img
ট্রাম্পের কড়া বার্তাকে ‘স্বাগত’ জানাল নাইজেরিয়ার সরকার Nov 02, 2025
img
‘শাপলা কলি’ পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনসিপি নেতাকর্মীদের পোস্ট Nov 02, 2025
img
আগে ক্যাপাসিটি বিল্ড আপ, তারপর এলডিসি থেকে উত্তরণ : আমীর খসরু Nov 02, 2025
img
প্লট বরাদ্দে দুর্নীতি, পরিবারসহ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৬ জনের সাক্ষ্য Nov 02, 2025
img
ভারতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল অন্তত ১৮ জনের Nov 02, 2025