ইসরায়েলবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে স্পেন প্রায় এক বিলিয়ন ইউরো (১.১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের প্রতিরক্ষা চুক্তি বাতিল করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের ঘোষিত নতুন পদক্ষেপের মধ্যে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্ত অবস্থান।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সরকারি সূত্র উদ্ধৃত করে আরটি এ খবর জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপটি আসে সানচেজের গত সপ্তাহের ঘোষণার পর, যেখানে তিনি গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের কারণে দেশটির সঙ্গে অস্ত্র কেনাবেচায় স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আইনে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ৭০০ মিলিয়ন ইউরো (৮২৬ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের ১২টি এসআইল্যাম রকেট লঞ্চার এবং ২৮৭.৫ মিলিয়ন ইউরো (৩৩৯ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের ১৬৮টি স্পাইক এল. আর. অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র চুক্তি বাতিল করেছে।
ইএফই সংবাদ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের এলবিট পিইউএল প্ল্যাটফর্মের ওপর ভিত্তি করে তৈরি এসআইল্যাম সিস্টেমগুলো একটি স্প্যানিশ কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে উৎপাদিত হওয়ার কথা ছিল। বাতিলকরণ চূড়ান্ত হবে আগামী সপ্তাহে। ধারণা করা হচ্ছে, মাদ্রিদ ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক ও প্রযুক্তিগতভাবে সম্পৃক্ততা কমিয়ে বিকল্প সরবরাহকারীর সন্ধান করছে।
এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে, যখন ইসরায়েল গাজা সিটিতে বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে, যার লক্ষ্য হামাসের শেষ প্রধান ঘাঁটি দখল করা। গত মাসে ইসরায়েলি নিরাপত্তা ক্যাবিনেট পরিকল্পনাটি অনুমোদন করে, যাতে শহরটিকে তারা দখলে নিতে পারে এবং সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
ইউরোপে ইসরায়েলের অন্যতম কড়া সমালোচক সানচেজ গাজায় “নৃশংসতা ও গণহত্যা” চালানোর অভিযোগ তুলেছেন। স্পেনের “সহযোগিতা” বন্ধ করতে তিনি নয় দফা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, উগ্রপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা, সামরিক সহযোগিতা স্থগিতকরণ, দখলদারিত্ব এলাকাগুলো থেকে আমদানি সীমিত করা এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি।
ইতোমধ্যেই ইউরোপসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত বা সীমিত করেছে। ইতালি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জাপান ও স্লোভেনিয়া আংশিক বা পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। অন্যদিকে, জার্মানি ঘোষণা করেছে যে, গাজায় ব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে এমন কোনো রপ্তানির অনুমোদন তারা আর দেবে না।
এদিকে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন মঙ্গলবার বলেছে, ইসরায়েলের অভিযানে গণহত্যার উপাদান রয়েছে। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করার উদ্দেশ্য ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতেও একটি পৃথক গণহত্যা মামলার মুখোমুখি।
গাজার যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫০ জনেরও বেশি জিম্মি করে। এরপর থেকে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের হিসাবে ৬৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
সূত্র: আরটি
এমআর