ফ্রান্সে প্রতি ১০ মুসলিমের ৮ জনই বৈষম্য-বিদ্বেষের মুখোমুখি : জরিপ

ফ্রান্সে প্রতি ১০ জন মুসলিমের মধ্যে ৮ জনই ‘ব্যাপক’ ঘৃণা-বিদ্বেষ ও বৈষম্যের শিকার বলে নতুন এক জরিপে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ইউরোপের দেশটিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চরম বৈষম্য ও বর্ণবাদের ব্যাপকতা সামনে এসেছে।

গবেষণা সংস্থা আইএফওপি এই সমীক্ষাটি পরিচালনা করে এবং গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এটি লিবারাসিয়ঁ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে উঠে এসেছে যে ফ্রান্সে মুসলমানবিরোধী ঘৃণা এক উদ্বেগজনক স্তরে পৌঁছেছে।

এই সমীক্ষায় ফ্রান্সের বড় শহরগুলোতে বসবাসরত ১ হাজার ৫ জন মুসলিমকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সমীক্ষায় ফরাসি সমাজের ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে এসেছে। ফলাফল অনুযায়ী, ফ্রান্সের ৮২ শতাংশ মুসলিম মনে করেন যে, দেশটিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্য ও ঘৃণা ব্যাপক রূপ নিয়েছে।

৮১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, গত এক দশকে ঘৃণা-বিদ্বেষ বেড়েছে। অধিকাংশ উত্তরদাতা (৬৬ শতাংশ) জানিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে তারা বর্ণবাদী আচরণের শিকার হয়েছেন—যা সাধারণ জনগণের তুলনায় তিনগুণ বেশি।

জরিপে দেখা গেছে, তরুণ মুসলিমরা বিশেষভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ২৫ বছরের কম বয়সি ৭৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা সরাসরি বর্ণবাদী আক্রমণের শিকার হয়েছেন।

গবেষণাটি ধর্মীয় কারণকেই বৈষম্যের প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ৫০ শতাংশ মনে করেন, তাদের ধর্মই বৈষম্যের মূল কারণ। ৪১ শতাংশ জানিয়েছেন, কেবল মুসলিম পরিচয়ের কারণেই তারা বৈষম্যের শিকার হন।

এই ধরনের বর্ণবাদ ফ্রান্সের সব সামাজিক স্তরে বিরাজমান, এমনকি মধ্যবিত্ত ও সমাজে একীভূত নাগরিকদের মধ্যেও। যে জায়গাগুলোতে মুসলিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ার কথা—যেমন সরকারি সেবা কেন্দ্র, বিদ্যালয় ও পুলিশ—সেখানেও বৈষম্য দেখা গেছে।

এ বৈষম্য কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের ক্ষেত্রেও প্রকট। জরিপে অংশ নেয়া ৫১ শতাংশ জানিয়েছেন, চাকরির জন্য আবেদন করার সময় এবং ৪৬ শতাংশ জানিয়েছেন, বাড়ি ভাড়ার আবেদনকালে তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। অথচ অন্যান্য ধর্মের মানুষের ক্ষেত্রে এই হার যথাক্রমে মাত্র ৭ ও ৬ শতাংশ। 

এই পরিস্থিতি মুসলিমদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জরিপ অনুযায়ী, ৬৪ শতাংশ মুসলিম ধর্মীয় স্বাধীনতা সীমিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এবং ৫১ শতাংশ শারীরিক হামলার ভয় পাচ্ছেন। হিজাবধারী নারীদের ক্ষেত্রে এ ভয়ের হার ৬৬ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে।

এই অনিরাপত্তার মুখে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৬৬ শতাংশ বলেছেন, তারা অভিযোগ করার কথাও ভাবেন না। আরও কমসংখ্যক মানুষ কোনো সংগঠন কিংবা এমনকি মসজিদের সাথেও যোগাযোগ করতে ইচ্ছুক নন।

এবি/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ধোনিকে ছাড়িয়ে নতুন ইতিহাস, প্রথম ট্রফি জেতালেন ইশান Dec 20, 2025
img
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের চট্টগ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
২০ কোটি টাকার বেশি সব ঋণ নতুন করে যাচাই করা হবে : গভর্নর Dec 20, 2025
img
ভারত ম্যাচে দেরি, বাফুফেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা Dec 20, 2025
img
বিটিভির মহাপরিচালকের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
বড় অঙ্কের প্রস্তাব পেয়েও ম্যান ইউনাইটেড ছাড়েননি ব্রুনো Dec 20, 2025
img
ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ব্রাজিলের ম্যাচ সূচি প্রকাশ Dec 20, 2025
img
‘বাম, শাহবাগি, ছায়ানট, উদীচীকে তছনছ করে দিতে হবে’-জাবি ছাত্রশিবির সেক্রেটারি মোস্তাফিজ Dec 20, 2025
img
বাসার গেটে পুলিশ, ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ গেল আওয়ামী লীগ নেতার Dec 20, 2025
img
ওসমান হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রীর বাড়িতে অগ্নিসংযোগ Dec 20, 2025
img
ছায়ানটে হামলা, বাঙালিদের জেগে ওঠার আহ্বান বিজেপির! Dec 20, 2025
img
যুবশক্তির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদের পদত্যাগ Dec 20, 2025
img
পুরোনো একটি চিহ্নিত মহল দেশকে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায় : মির্জা ফখরুল Dec 20, 2025
img
ভারত আর আওয়ামী লীগ নির্বাচন বানচাল করতে চায় : হাদির বোন মাসুমা Dec 20, 2025
img
আইনজীবী আলিফ হত্যায় সাদা টি-শার্ট পরে অংশ নেওয়া সুকান্ত গ্রেপ্তার Dec 20, 2025
img
ইলিয়াসের ফেসবুক বন্ধ করল মেটা Dec 20, 2025
img
হাদির লড়াই ছিল গড়ার, পুড়িয়ে ফেলার নয় : তাসনিম জারা Dec 20, 2025
img
হাসিনাকে আশ্রয় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, জানাল ভারত Dec 19, 2025
img
হাদির খুনিদের বিচার বাংলাদেশের মাটিতেই হবে : টুকু Dec 19, 2025
img
সকালে ফোন দেখেন না কারিনা! প্রথম চুমুক দেন কোন পানীয়তে? Dec 19, 2025